শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ফের নদী ভাঙনের আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশের প্রধান নদীগুলোতে ফের পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ভারতের বিহার ও ঝাড়খ-ে ব্যাপক ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে এই পানি বৃদ্ধি ঘটছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপদসীমায় ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওদিকে কপোতাক্ষে পানি বৃদ্ধির ফলে ঝিকরগাছার নিম্ন এলাকা ডুবে গেছে। কপোতাক্ষও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা-পদ্মায়ও দ্রুত পানি বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্রে পানি নেমে যাচ্ছে। বন্যার আভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মতে, নদ-নদীতে নতুন করে পানি বাড়লেও নতুন করে বন্যার তেমন কোনো আশংকা নেই। তবে পানি যখন নামবে তখন ব্যাপক আকারে ভাঙনের তা-ব দেখা দিতে পারে। এবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েকদফা বন্যা হয়ে গেছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার বাড়িঘর, হাট-বাজার, স্থাপনা যেমন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেমনি লাখ লাখ একর জমির ফসলাদি বিনষ্ট হয়েছে। বেড়িবাঁধ অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। রাস্তা-ঘাট মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে। অসংখ্য মানুষ বন্যায় বিপন্ন দশায় পতিত হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীর অভাবে তারা ভয়াবহ দুর্দশায় পতিত হয়েছে। এটা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা গেছে, ভারত থেকে নেমে পানির ঢলে বন্যা পরিস্থিতির শোচনীয় অবনতি হয়েছে। অবিরাম বর্ষণও বন্যার একটি বড় কারণ। বিহারসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে টানা বর্ষণ ও বন্যার তা-ব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভারত একযোগে ফারাক্কার সব গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা ও তার শাখা নদীগুলোতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পায় এবং বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ সময় রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মুন্সীগঞ্জ, বৃহত্তর ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতিসহ মানুষের দুর্দশা চরম আকার নেয়। বন্যার সঙ্গে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। বন্যায় যতটা না ক্ষতি হয় তার চেয়ে বেশী ক্ষতি হয় ভাঙনে। দেখা গেছে, পানি যখন নেমে যেতে থাকে তখন ভাঙন ভয়ংকর রূপ লাভ করে।
উজানের পানিতে সৃষ্ট অসময়ের এই বন্যায় ভাঙনের আশংকটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বন্যার প্রধান অনুষঙ্গ ভাঙন। প্রথমে যখন নদীতে পানি আসে এবং বিপদসীমা অতিক্রম করে যায় তখন একবার ভাঙন দেখা দেয়। আবার যখন পানি নেমে যায় তখনও ভাঙন দেখা যায়। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, ভাঙন ঠেকানো যায় না। বেড়িবাঁধ শহর বা জনপদ রক্ষা বাঁধও রক্ষা করা যায় না। এভাবে প্রতিবছর নদী ভাঙনে কত মানুষ যে বাস্তুচ্যুৎ হয়, সর্বস্ব হারায়, কত বাড়িঘর, স্থাপনা, শস্যক্ষেত্র বিলীন হয়ে যায় তার ইয়ত্তা নেই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বন্যা ও নদীভাঙন প্রতি বছরের সাধারণ ঘটনা হলেও বন্যা ও ভাঙন রোধ গৃহীত কোনো ব্যবস্থাই কোনো কাজ করছে না। বন্যা ও ভাঙন রোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ধারাবাহিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ভাঙন রোধ, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে প্রতি বছর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যয় হয়। অথচ তাতে কাজের কাজ তেমন কিছু হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফে অর্থাভাবের অজুহাত প্রদর্শিত হয় প্রতি বছরই। কিন্তু যে অর্থ দেয়া হয়, তা ঠিকমত ব্যবহৃত হয় কিনা তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে পূর্বাপর অভিযোগ রয়েছে, এই সংস্থার অধীনস্থ প্রকল্পগুলোতে ঠিকমত কাজ হয় না। কাজের মান যাচ্ছেতাই। আরও একটি অভিযোগ এই যে, প্রকল্পের বাস্তবায়ন যথাসময়ে শুরু ও শেষ হয় না। বন্যা ও ভাঙন দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় তারও কোনো হিসাব-নিকাশ পাওয়া যায় না। সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাংশ ও ঠিকাদাররা বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগই লুটপাট করে খায়। এই অবস্থা যতদিন বহাল থাকবে ততদিন বন্যা ও ভাঙন থেকে সম্ভাব্য সুরক্ষা জনগণ পাবে, এমন আশা করা যায় না। প্রশ্ন হলো, আর কতদিন এ অবস্থা চলতে থাকবে?
এখন ব্যাপক নদী ভাঙনের যে আশংকা করা হচ্ছে, তার মোকাবিলা কিভাবে হবে সেটা একটি জরুরি বিবেচ্য বিষয়। তাৎক্ষণিকভাবে ভাঙন রোধে বড় কোনো সাফল্যের সম্ভাবনা নেই। তবে ভাঙন যাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তাদের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব। কথায় বলে, আগুন সবকিছু পুড়িয়ে ছারখার করে দিলেও জমি বা ভূমিটা অন্তত থাকে। আর নদী যখন ভাঙে, সব কিছুর সাথে জমিটাও নিয়ে যায়। নদী ভাঙনে বাস্তুহারা, ভূমিহারা মানুষ সম্পূর্ণ নিরাবলম্ব হয়ে পড়ে। তাদের জন্য ত্রাণ জরুরি, জরুরি হলো পুনর্বাসন। এদিকে এখনই নজর দিতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি না হয় আগে তা নিশ্চিত করতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে, ভবিষ্যতেও বৃষ্টিপাত হবে, উজান থেকে পানি নেমে আসবে, ভারত বাঁধ খুলে দিয়ে পানি ঠেলে দেবে, বন্যা হবে এবং তার অপরিহার্য সঙ্গী হিসাবে নদী ভাঙনও হবে। এই বিষয়টি মাথায় নিয়ে সরকারকে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। বন্যা ও ভাঙন রোধে সম্ভবপর সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতি বছর হাজার হাজার পরিবারের পথের ফকিরে পরিণত হওয়া এবং বিপুল পরিমাণ জমি ও সম্পদ-সম্পত্তি ধ্বংসের ক্ষতি বহন করার ক্ষমতা দেশের নেই। তাই এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় এবং নদী ভাঙন যতটা সম্ভব কমের মধ্যে রাখা যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন