মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনার মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

রাজধানীর লালমাটিয়া-ইকবাল রোড-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপের ফলাফল প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে রাজধানীবাসীর বিপর্যয়কর অবস্থা। এর মধ্যে দেশে করোনার ভারতীয় ভয়ঙ্কর ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি। করোনা টিকা পাওয়া নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। এর মধ্যেই রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতির কারণে রাজধানীর চার এলাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) এক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জরিপে বলা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) লালমাটিয়া ও ইকবাল রোড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সায়েদাবাদ ও উত্তর যাত্রাবাড়ী ডেঙ্গুর জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় জরিপটি পরিচালিত হয়। গত ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের ৬৯টি ওয়ার্ডের ৭০টি স্থানে এ জরিপ চালানো হয়।

জরিপে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে নির্মাণাধীন ভবনের মেঝেতে জমে থাকা পানিতে। লার্ভার ২০ দশমিক ২২ শতাংশের উপস্থিতিই এখানে। এ ছাড়া, প্লাস্টিকের ড্রামে ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ, বালতিতে ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ, পানির ট্যাংকে সাত দশমিক ৮৭ শতাংশ, পানির মিটারের গর্তে ছয় দশমিক ৭৪ শতাংশ, ফুলের টব ও ট্রেতে দুই দশমিক ২৫ শতাংশ, প্লাস্টিকের বোতলে চার দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং লিফটের গর্তে তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে।

জরিপে বহুতল ভবনগুলোতে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৮২ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে ৩৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ, একক বাড়িতে ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং বস্তি এলাকায় পাঁচ দশমিক ৬২ শতাংশ লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
কীট বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মঞ্জুর চৌধুরী জানান, এপ্রিল ও মে’র প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় ৫ থেকে ৬ বার বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির কারণে এডিস মশার প্রজননের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধি-নিষেধের কারণে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রেও বাধা তৈরি হচ্ছে। স্কুল ও কলেজ থেকে ডেঙ্গু বেশি ছড়ায় এবং তরুণ প্রজন্ম এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া, দেশজুড়ে মানুষের চলাচলের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গু ছড়াতে শুরু করলে তা আমাদের জন্য অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কর্তৃপক্ষকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি পরিত্যক্ত পাত্র, ট্রের মতো মশার প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করা এবং সপ্তাহে একদিন ফুলের টব, ট্যাংক ও ড্রাম পরিষ্কার করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীট বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাশার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। এরপরও, ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। যদি দুই সিটি করপোরেশন এবং জনসাধারণ সচেতন হয়ে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করে, তবে বৃষ্টি হলেও মশা বাড়বে না। তবে, এখন থেকেই সঠিক পদক্ষেপ নেয়া না হলে এডিস মশা বেড়ে যাবে।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান, তারা এডিস মশার হটস্পট খুঁজে বের করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ডিএনসিসিতে মশা নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শকের সঙ্কট ছিল। তবে ইতোমধ্যেই ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের জন্য ৫৪ জন পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং তারা এখন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা বর্তমানে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এডিস মশা নিধন অভিযান চালাচ্ছেন। ‘লকডাউনের’ মধ্যেও জোন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন