বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সড়ক সংস্কারে নয়-ছয়

ঈদের আগে পুনরায় মেরামতের দাবি

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

সড়ক সংস্কারের দুই মাস না পেরুতেই ওঠে গেছে সড়কের পিচ-পাথর। সৃষ্টি হয়েছে অংসখ্য গর্ত ও খানা-খন্দক। এসব খানাখন্দে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটছে প্রতিনিয়তই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। আর এতে আশঙ্কাজনকহারে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এতে ক্ষুব্দ স্থানীয়রাও।
সওজ কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয়দের জিঞ্জাসা আসলেই কি সড়ক সংস্কার নাকি কাজের নাম করে অর্থ লোপাটের প্রকৃত উদ্দেশ্য? জানা যায়, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ-পাবনা মহাসড়কের উল্লাপাড়ায় নিম্নমানের কাজ করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ফলে কাজ শেষ হওয়ার মাস, বছর না যেতেই সড়কের পিচ-পাথর ওঠে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, সওজের কতিপয় কর্মকর্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের কাজ করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করছেন। মানসম্মত কাজ না হওয়ায় কিছুদিন যেতে না যেতেই নষ্ট হচ্ছে সড়ক। যানবাহন চালকরা গর্ত থেকে চাকা বাঁচাতে গাড়ি টার্ন নেওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। গত বছর সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতায় সিরাজগঞ্জ-পাবনা মহাসড়কের উল্লাপাড়া থেকে যুগ্মদহ ব্রিজ পর্যন্ত সংস্কার কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলম কনস্ট্রাকশন। কাজ শেষ হয় প্রায় ছয় মাস আগে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জায়গায় পাথর ও পিচ ওঠে বড় বড় গর্ত হয়েছে। একই মহাসড়কের যুগ্মদহ ব্রিজ থেকে বিন্নাদইর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সংস্কার করে তুর্না এন্টারপ্রাইজ। এ কাজে ব্যয় ধরা হয় ১৫ কোটি টাকা। কাজ শেষ হয় দু’মাস আগে। এই অংশে পিচ-পাথর ওঠে গেছে।
বিন্নাদইর এলাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান দৈনিক ইনকলাবকে বলেন, মাত্র দুই মাস আগে সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ-পাথর ওঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারে সরকার ঠিকই অর্থ দিচ্ছে কিন্তু সওজ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন মিলেমিশে নিম্নমানের কাজ করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এর ঘেসারত দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সড়কটির কোথাও পিচ-পাথর জড়ো হয়ে তৈরি হয়েছে উঁচু নিচু সড়ক। এতে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে বা আহত হচ্ছে।
মশিপুর গ্রামের মনির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কারকাজ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মশিপুর এলাকায় গত বছর শাহজাদপুরের একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়ে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। এছাড়াও গত পাঁচ বছরে এই সড়কে দুর্ঘটনায় অত্যন্ত শতাধিক মানুষ নিহতসহ আহত হয়েছেন আরো কয়েক’শ মানুষ। এর মধ্যে পঙ্গুগুত্ববরণ করেছেন অন্তত ৫০ জন। এ বিষয়ে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী জানান, সিরাজগঞ্জ-পাবনা মহাসড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ জন্য খানাখন্দ অনেকটা দায়ী বলে মনে করছেন তিনি। সড়কটির বেহাল দশার বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের পৌর মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কার কাজ করায় কিছুদিন পরই সড়ক আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে ঈদের আগে মহাসড়কটি সংস্কারের জন্য সওজ বিভাগকে কাছে জোড় দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুল খালেক সকল অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরাতন পিচ-পাথরের আস্তরণ রেখেই ওপর দিয়ে কাজ করা হয়েছে। নিচের ওই আস্তরণ খারাপ হওয়ায় হয়তো নতুন আস্তরণ ধরে রাখতে পারছে না। ফলে কিছু স্থানে পিচ-পাথর ওঠে গেছে। তবে যেসব স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে সেইসব স্থানে দ্রুত কাজ করে গর্ত বন্ধ করতে দুই ঠিকাদারকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম নিম্নমানের কাজের কথা অস্বীকার করে বলেন, কি কারণে পিচ-পাথর ওঠে গেছে তা বলা সম্ভব নয়। দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঈদের আগে পুনরায় মেরামত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন