শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লকডাউনেও বেপরোয়া মাদক ব্যবসায়ীরা

ইয়াবা কেনাবেচায় মুভমেন্ট পাস ব্যবহার : মহাসড়ক এড়িয়ে চক্রটি নৌপথসহ কয়েকধাপে রাজধানীতে পৌঁছায়

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনা মহামারির প্রকোপ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছেই। পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সে জন্য সারা দেশে চলছে লকডাউন। কিন্তু এই লকডাউনের মধ্যেই মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে ইয়াবার বড় বড় চালান। শুধু তাই নয়, রাজধানীতে মুভমেন্ট পাস নিয়ে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মাদক কারবারিরা। তবে পাচারের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকটি বড় চালান জব্দ করেছে। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন ইয়াবা কারবারিকে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, একটি চক্র সীমান্ত এলাকা থেকে বড় বড় চালান রাজধানীর মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। করোনা বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন পরিস্থিতিতে মুভমেন্ট পাস নিয়েও চক্রটি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীতে মাদক নিয়ে আসে। পরে তা রাজধানীর বিভিন্ন মাদক কারবারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
র‌্যাব জানায়, গত ২২ এপ্রিল মাস্ক ও স্যানিটাইজার পরিবহনের জন্য মুভমেন্ট পাস নিয়ে হেরোইন পাচারর করার সময় মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটিও জব্দ করা হয়। এছাড়া গত ৪ মে রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ পাঁচ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় ইয়াবা নিয়ে আসে। কিন্তু ইয়াবা হস্তান্তরের আগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা নিয়মিত কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ও সমুদ্র পথে আসা ইয়াবা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করত। মাদক কারবারিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে অভিনব কায়দা হিসেবে বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে মাদক বহন করত। মাদক পরিবহনের জন্য টিনের তৈরি সহজে বহনযোগ্য রান্নার চুলার মধ্যে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা রেখে তা ঝালাই করে জোড়া লাগিয়ে দিত। মাদকের চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কখনোই মহাসড়ক ব্যবহার করত না।
এ ব্যাপারে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার ইনকিলাবকে বলেন, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে তারা মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজি বাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পো ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিত। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম সিটি গেটসহ বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়াতে প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে হাটহাজারী-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড় হয়ে ফেনী আসত। সেখান থেকে নোয়াখালীর-চৌমুহনী-সোনাইমুরী ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ হয়ে মতলব লঞ্চঘাট। দ্বিতীয় ধাপে সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মুন্সিগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করত। এতে করে তাদের ৪/৫ দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেত।
তিনি বলেন, এ সময় তারা বেদের জীবন-যাপন করত। সাধারণ মানুষের সন্দেহ দূর করতে পথের মাঝে চুড়ি, কড়ি, চুল বাঁধার ফিতা, শিশুদের কোমরে বাঁধার ঘণ্টা, চেইন, সেফটি পিন, বাতের ব্যথার রাবার রিং ইত্যাদি বিক্রি করত। মাদক বহনের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই ধরনের কৌশলের মুখামুখি আগে কখনও হয়নি। তারা যে রাস্তা ব্যবহার করছে তাও একেবারে নতুন বলা চলে। বিধিনিষেধের ফলে নৌ ও সড়ক পথে যান চলাচল বন্ধ। এরমধ্যে কীভাবে তারা মাদক নিয়ে ঢাকায় এসছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে নৌ বা সড়কপথ ব্যবহার করেনি। সুযোগ বুঝে যেটা নিরাপদ মনে হয়েছে সেটা ব্যবহার করেছে। এ চক্রে একজন গাইড বা লাইনম্যান রয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি গাইড দেখভাল করে। প্রথাগত রুটের বাইরে তাদের এই মাদকের চোরাচালান বন্ধে র‌্যাবের অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
শুধু নদী পথে নয়, লকডাউনের মধ্যে সড়ক পথেও ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক নিয়ে আসছে কারবারিরা। গত ৩০ এপ্রিল রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি পিকআপ জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা পিকআপের মাধ্যমে কাঁচামাল ও আসবাবপত্র পরিবহনের আড়ালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল সরবরাহ করে আসছিলো বলে জানা গেছে।
এছাড়া গত ২ মে রাতে কক্সবাজার টেকনাফের হ্নীলা চৌধুরীপাড়া চিতা-সংলগ্ন এলাকা থেকে আড়াই লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে বিজিবি। গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর রামপুরা থেকে পিকআপ ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে ৫৫ কেজি গাঁজাসহ দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা গেছে, নিরাপত্তার কথা ভেবে বর্তমানে অনেকে আবার অনলাইনে অর্ডার করে মাদক সংগ্রহ করছেন। যদিও হোম ডেলিভারিতে দাম একটু বেশি। তবে মাঝেমধ্যেই গ্রাহকসহ বিক্রেতার ঠাঁই হচ্ছে কারাগারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন