শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নাজিরপুরে লকডাউনেও কিস্তি আদায়

বিপাকে গ্রাহকরা

উত্থান মন্ডল, নাজিরপুর (পিরোজপুর) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২১, ১২:০৪ এএম

লকডাউনের মধ্যে পিরোজপুরের নাজিরপুরে কিস্তি আদায় করছেন বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন ঋণ গ্রহীতারা। ভ্যানচালক থেকে শুরু করে দিন মজুর এবং মধ্যবিত্ত পরিবারে করোনার মধ্যে সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ থাকায় এই সমস্ত ঋণ গ্রহীতারা পড়েছেন বিপাকে। কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। কিন্তু তাদের ব্যবসা এখন মন্দা। কিস্তিতে ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ইজিবাইক, ভ্যান, মোটরসাইকেল, গ্রামবাংলাসহ বিভিন্ন যানবাহন কিনেছেন তারা সীমিত আয় দিয়ে কিস্তি পরিশোধ করেন। অনেকের ঘরে খাবার না থাকলেও কিস্তি দিতে বাধ্য তারা। এ অবস্থায় কিস্তি আদায় বন্ধের দাবি করেছেন ঋণ গ্রহীতারা। করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় দোকান পাট খুললেও সব কিছুই বন্ধ রেখেছে সরকার। মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। ফলে কর্ম হারিয়েছে এই সমস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে জোড়পূর্বক কিস্তি আদায় করছেন নাজিরপুরের সকল এনজিও কর্মীরা। নাজিরপুরের প্রায় ৩০টি এনজিও এর মধ্যে ব্র্যাক, গ্রামীন ব্যাংক, রিক, আশা, উদ্দীপন, জাগরনী, মুসলিম এইড, ব্যুরো বাংলাদেশ, কোডেক, ডাক দিয়ে যাইসহ সকল এনজিও কর্মীরা গ্রাহকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের মধ্যজয়পুর গ্রামের বাবু লাল হালদার জানান, তিনি একজন কাঠ মিস্ত্রী। উদ্দীপন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এড়াতে সরকার লকডাউন ঘোষণা করায় সকল কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। উদ্দীপন এনজিও জোরপূর্বক চাপ সৃষ্টি করছে কিস্তি দিতেই হবে।
নাজিরপুর সদর বাজারের ফটোকপি ব্যবসায়ী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমি মুসলিম এইড থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। আমার হয়তো ৪-৫টি কিস্তি বাকি থাকতে পারে লকডাউন হওয়ার পরে দোকানই খুলতে পারি না। তারপরেও কিস্তির জন্য এনজিও কর্মীরা আমাকে চাপ দিচ্ছে। ২ দিন বাড়িতে এসেছে কিস্তির জন্য। খারাপ পরিস্থিতির কথা জানালেও তারা বাজে আচরণ করেন।
এ বিষয়ে নাজিরপুরের বুরো বাংলাদেশ ও ব্র্যাক এনজিও ম্যানেজারকে ফোন দিলে তারা জানান, তাদের কোন কর্মী গ্রাহকের বাড়িতে কিস্তি আদায়ের জন্য যায় না। কিস্তি আদায় শিথিল করেছেন। এ বিষয়ে পরিপত্র দিয়েছি। পরিপত্রে বলা হয়েছে ঋণ গ্রহীতার বাড়িতে গিয়ে কিস্তি আদায় করা যাবে না। ঋণ গ্রহীতা নিজ ইচ্ছায় কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে চাইলে মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে নেয়া হয়। তারা আরো বলেন, যদি কোন কর্মী কিস্তি আদায়ে বাড়িতে গিয়ে থাকেন তা হলে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। খোঁজ নিয়ে আমরা তাদের নিষেধ করব।
একাধিক ঋণ গ্রহীতা জানান, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে সকল কাজ কর্ম বন্ধ থাকায় কিস্তি দিতে পারছি না। সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধার-কর্য করে সংসার চালাচ্ছি। কিস্তির টাকা দিব কিভাবে? কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা উচিৎ।
এ বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, লকডাউনের মধ্যে কিস্তি আদায় বন্ধের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আমরা পাইনি। প্রথম লকডাউনের সময় কিস্তি আদায় বন্ধের নির্দেশনা পেয়েছিলাম। তবে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালাতে পারবেন। মানবিক কারণে এ সময় কিস্তি আদায় বন্ধ করতে পারেন এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো।
নাজিরপুর সমবায় অফিসের সহকারী পরিদর্শক মিরাজুল ইসলাম জানান, সমিতি থেকে কিস্তি আদায় করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে কোন সমিতি কিস্তি আদায় করছেন কিনা এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন