শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তবুও ছুটছে মানুষ

চট্টগ্রামে ভিড় জটলা হুড়োহুড়িতে সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

বাস, ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান, পিকআপ, অটোরিকশায়। যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন গ্রামে। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মানুষের এ ছুটে চলা থামানো যাচ্ছে না। মার্কেট, বিপণি কেন্দ্র, শপিংমল, হাটবাজারেও মানুষে গিজগিজ। নগরীর ব্যস্ততম সড়কের ফুটপাত, অলিগলিতে পা ফেলার জায়গা নেই। ঈদ সামনে রেখে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে হাটবাজার, শপিংমলে। নগরী ছাড়ছে অনেকে। মানুষের হুড়োহুড়ি আর ছুটে চলায় উধাও হয়ে গেছে স্বাস্থ্যবিধি। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ। বন্ধ ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল। যে যেখানে আছে সেখানে ঈদ করার সরকারি নির্দেশনা। এরপরও ঘরমুখো মানুষকে আটকানো যাচ্ছেনা। চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে গ্রামে ছুটছে মানুষ। রাতের আঁধারে ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যানে লুকিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে অনেকে। রোববার মধ্যরাতে মহানগরীর বিভিন্ন প্রবেশপথে অভিযান চালিয়ে এমন ১১১টি যানবাহন আটক করেছে পুলিশ। সীতাকুণ্ডেও অর্ধ শতাধিক বাস আটক করা হয়েছে। এরপরও থামানো যাচ্ছেনা ঘরমুখো মানুষের স্রোত। যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন আপন ঠিকানায়।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। এদের বিরাট একটি অংশ কল-কারখানার শ্রমিক, দিনমজুর এবং খেটে খাওয়া মানুষ। ঈদের ছুটিতে এদের গ্রামের বাড়ি যেতেই হবে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য যানবাহন নেই। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। অন্যদিকে দীর্ঘদিন বাস বন্ধ থাকায় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে বাস শ্রমিকরা। ঘরমুখো মানুষের স্রোত দেখে তাদের অনেকে রাস্তায় বাস নামিয়ে দিয়েছে। রাতের আঁধারে এসব বাসে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। বিকল্প যানবাহনেও মানুষ শহর ছাড়ছে।
করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে মানুষের এ ছুটে চলায় নগরীর প্রবেশপথগুলোতে তীব্র জটের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের বাকি আর মাত্র দুয়েক দিন। ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে বুধবার থেকে। ওইদিন থেকে বন্ধ কল-কারখানাও। তার আগেই অনেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। কারখানা ছুটির পর ঘরমুখো মানুষের ঢল নামবে। গতকাল নগরীর কর্ণফুলী সেতু এলাকা, একেখান গেইট, অলংকার, অক্সিজেন মোড়ে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা যায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লোকজন এসব এলাকায় অবস্থান করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও যানবাহন মিলছে না। কেউ অটোরিকশা, কেউবা আবার ট্রাকে উঠে গন্তব্যের দিকে ছুটছেন।
এদিকে নগরীর মার্কেট, বিপণি কেন্দ্রগুলোতেও উপচেপড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটার কথা বলা হলেও কেউ তা মানছে না। মানুষের ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি তথা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা দায় হয়ে পড়েছে। ভিড়ের মধ্যেও অনেকের মুখে মাস্ক নেই। নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে পুলিশি অভিযানে হরেক রকম সাজা দেয়া হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া আসা লোকজনকে মার্কেট থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। তারপরেও মাস্ক পরার প্রবণতা নেই অনেকের মাঝে। রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার কথা থাকলেও গভীর রাত এমনকি কোথাও সারা রাত মার্কেট খোলা থাকছে। গভীর রাতেও মার্কেটের ভেতরে-বাইরে মানুষ গিজগিজ করছে।
গণপরিবহনে ঠাসাঠাসি, গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। দুই সিটে এক যাত্রী অর্থাৎ বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ায়। তবে বাস্তব অবস্থা হচ্ছে যাত্রী ভর্তি বাসে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে চালক, সহকারীদের সাথে যাত্রীদের বাকবিতণ্ডা চলছেই। অভিজাত বিপণি কেন্দ্র থেকে শুরু করে হকারের পসরা সর্বত্রই মানুষের ভিড়, জটলা। ব্যস্ততম মোড়ের ফুটপাতে মানুষের ভিড় ঠেলে হাঁটাই দায় হয়ে পড়েছে। রাস্তায় রিকসার ঢল। অধিকাংশ সড়কে উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ি। তার উপর যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় নগরজুড়ে তীব্র যানজট। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনেক এলাকায় স্থায়ী হচ্ছে অসহনীয় এ যানজট।
হাটবাজারগুলোর অবস্থা আরও বেহাল। ঈদের কেনাকাটায় মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে কাঁচাবাজার, ফলের দোকান আর মুদি দোকানে। কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। ব্্যবসায়ীরা বলছেন, চাঁদ রাত তথা ঈদের আগের রাত পর্যন্ত হাটবাজারে এমন ভিড় জটলা অব্যাহত থাকবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় চট্টগ্রামে সংক্রমণ কমছে না। দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় মহানগর এবং জেলায় সংক্রমণ এখনো ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল ১৫ শতাংশ। অথচ দেশে গড় সংক্রমণের হার আট শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। চট্টগ্রামে গত ৪৮ ঘণ্টায় করোনায় ১২জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এমন উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ভয়ংকর রূপ ধারণ করার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন