বোরো আবাদ ও উৎপাদনে প্রায় শতভাগ সাফল্যের মাঝেই দেশের ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের মাধ্যমে আরো প্রায় ৩৫ লাখ টন চাল উৎপদনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন কৃষি যোদ্ধাগন। শুধুমাত্র বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায়ই এবারো সারা দেশের প্রায় ২৩% আউশ ধানের আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলাতেই প্রায় ২ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর লক্ষমাত্রার বিপরিতে ইতোমধ্যে ১০ হাজার হেক্টরে আউশ ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জনা গেছে। বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলাতেও প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন করেছেন কৃষকগন।
সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে দেশের ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান অবাদের মাধ্যমে ২ কোটি ৫ লাখ ৩১ হাজার ৪৭০ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছিল কৃষি মন্ত্রনালয়। ডিএই সহ একাধীক সূত্রের মতে বোরা আবাদ ও উৎপদন লক্ষ্য প্রায় অর্জিত হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের প্রায় ৫৫ ভাগ জমির বোরো ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে বলে একাধীক সূত্রে জনা গেছে। এ পর্যন্ত উৎপাদনও প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪ টন। দক্ষিণাঞ্চলে ১ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে এবার ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৬ হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১২০% এবং গতছরের চেয়ে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর বেশী। বৃহত্বর ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলায়ও ১ লাখ ৭০ হাজার ৯শ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়। দক্ষিনাঞ্চলের ১১টি জেলাতেই বোরো ধানের ফলন জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার কাছেই রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ জমির বোরো ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে।
এ সাফল্যের মধ্যেই সারা দেশে ১৩.৩০ লাখ হেক্টরে আউশের আবাদ শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশে বীজতলা তৈরীর কাজও প্রায় ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। ডিএই’র মতে ইতোমধ্যে দেশের প্রায় দেড়লাখ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। যারমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলাতেই প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে লাগাতার অনাবৃষ্টিতে আউশের আবাদ কিছুটা বাধাগ্রস্থ হলেও ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সব এলাকায়ই বৃষ্টি হতে শুরু করায় তা যথেষ্ঠ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। চলতি মসের মধ্যেই অন্তত ৫ লাখ হেক্টরে আউশ আবাদ সমপন্ন হবে বলে আশা করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
বড় ধরনের কোন প্রাকতিক বিপর্যয় না ঘটলে চলতি বছর আউশ আবাদ থেকে অন্তত ৩৫ লাখ টন চাল পাবার ব্যাপারে আশাবাদী কৃষি মন্ত্রনালয়। বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট-ব্রি ইতোমধ্যে আউশের হাইব্রীড একটি জাত সহ বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত উদ্ধাবন করেছে। তবে হাইব্রীড জাতের আবাদ খুব সম্প্রসারন না ঘটলেও ব্রি উদ্ভাবিত উফশী জাতের ধানের আবাদ সম্প্রসারন ঘটেছে। এসব জাতের মধ্যে ১১৫ দিন জীবনকালের ‘ব্রি-৯৮’ জাতের উফশী জাতটি আমাদের জলবায়ুর সাথে যথেষ্ঠ উপযোগী। ইতোমধ্যে এ জাতের আউশ ধান কৃষক পর্যায়েও আগ্রহ বাড়াতে শুরু করেছে।
তবে আমাদের দেশে আউশ আবাদের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও তা কাজে লাগান হচ্ছেনা। অতীতে দেশে আমন ও আউশ ধানেরই আবাদ হত। কিন্তু ’৭০-এর দশকের পরে বোরো ধানের ব্যাপক বিস্তারের পরে আউশ আবাদে আগ্রহ অনেকটাই হ্রাস পায়। বোরো দেশের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের স্থান করে নেয়। কিন্তু বোরো আবাদে ভ’গর্ভস্থ পানির ব্যপক ব্যবহার সহ সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা খরচের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় সরকার বোরো ধানের পাশাপাশি আউশ আবাদের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করছেন। কৃষকদেরও এ ধান আবাদে উৎসাহিত করতে নানা ধরনের প্রনোদনা দেয়া হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন