মুসলমানদের দুরাবস্থার শেষ নেই। তারা সর্বত্র পরাজিত ও অপমানিত। মুসলমানদের অপমান করার সঙ্গে সঙ্গে কুরআন, নবী (সা.), ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রæপ চলছে। কারণসমূহ কমই আমরা খুঁজে দেখি। কারণ না জানলে প্রতিকার কীভাবে হবে?
আমরা এখন প্রধান কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। এগুলো হলো:
(১) যোগ্যতার অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা তথা গবেষণার প্রতি অবহেলা, প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা, শিক্ষার হতাশামূলক হার।
(২) বুদ্ধিবৃত্তিক (ইন্টেলেকচুয়াল পাওয়ার) দৈন্য। দেখা যায়, পাশ্চাত্য জগত, এমনকি এশিয়ার কিছু উন্নত দেশের মতো মুসলিম বিশ্বে উঁচুস্তরের বই-পুস্তক বের হয় না। যাও হয় জনগণ তেমন কেনে না, পড়েও না। এক লেখকের পাঁচশ’ কপি বই বের করলে, মনে করা হয় যে যথেষ্ট হয়েছে। পাশ্চাত্যে ফালতু বইও মিলিয়ন কপি চলে। অথচ মধ্যযুগে মুসলমানদের লেখা বইয়ের জন্য ইউরোপ হুমড়ি খেয়ে পড়ত। মুসলমান বিদ্বানগণ ছিলেন ইউরোপের শিক্ষক।
(৩) লেজুুড়বৃত্তির নীতি অবলম্বন করছে মুসলমান রাষ্ট্রগুলো। তাই তাদের ইজ্জত নেই কারো কাছে।
(৪) মুসলমানদের অনেকেই ইসলামি আদর্শ থেকে সরে গেছে।
(৫) মুসলিম উম্মাহর মধ্যে নেই ঐক্য।
(৬) নেতৃত্বের শোচনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। অনেক নেতারই নেই যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা।
(৭) অমুসলমানদের যেমন বিশাল বিশাল রাষ্ট্র্র রয়েছে, মুসলমানদের নেই। বিশাল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত প্রভৃতির নিকট মুসলমান রাষ্ট্রগুলো ছোট। এদিকে তুরস্ক, সুদান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, এমনকি সউদী আরবকে পর্যন্ত টুকরা টুকরা করার নীল-নকশা করা হচ্ছে।
(৮) শিয়া-সুন্নি বিরোধকে উসকে দিয়ে শত্রæরা ফায়দা হাসিল করছে।
(৯) গণতন্ত্রহীনতা ব্যাপক। বেশিরভাগ সরকারের উপর জনগণের আস্থা ও একাত্মতা নেই।
(১০) অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থপরতা ও শত্রæতা মুসলিম বিশ্বের জন্য হুমকি।
(১১) মুসলিম নেতৃবৃন্দের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয় সম্পর্কে অপ্রতুল ধারণা ও জ্ঞান আশঙ্কা মাত্রায় পৌঁছেছে। পলাশী যুদ্ধের আগে-পরেও এমন অবস্থা ছিল।
(১২) ইসরাইলসহ কিছু রাষ্ট্রের এগ্রেসিভ (আক্রমণাত্মক) ও প্রতিরক্ষা নীতি মুসলমান রাষ্ট্রগুলোকে মাথা তুলতেই দিচ্ছে না।
(১৩) হালে সউদী, মিসর, আমিরাত, প্রভৃতি রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইসরাইলের প্রতি অপ্রত্যাসিত নমনীয়তা প্রদর্শন করছে।
(১৬) মুসলিম বিশ্বের গণমাধ্যমের দুর্বল অবস্থা। অন্যদিকে বিপক্ষের গণমাধ্যম সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানাতে ওস্তাদ।
(১৫) অন-ইসলামি আদর্শ, যেমন- কম্যুনিজম, উগ্রজাতীয়তাবাদ ইত্যাদির প্রভাব-প্রতিপত্তি।
(১৬) খ্রিস্টান-মিশনারীদের প্রচার ও ষড়যন্ত্র দুর্বার। ভ্যাটিকান ও তার বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক, একটা বড় বাধা ইসলামের প্রসারে। মুসলমানদের এমন কোনো কেন্দ্র নেই, যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
(১৭) পাশ্চাত্যের ক্রুসেডীয় মনোভাব এখনো রয়েছে। জার্মান নও-মুসলিম ও সাবেক জার্মানি রাষ্ট্রদূত মুরাদ উইলফ্রেজ হফম্যানের বই ‘ইসলাম ২০০০’-এ যার প্রমাণ রয়েছে।
মুসিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা সমস্যা। রোহিঙ্গারাও মুসলমান আর যেখানে তারা আশ্রয় নিয়েছে সেই বাংলাদেশও মুসলমান প্রধান। মুসলমান রাষ্ট্রগুলো যদি পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত রাষ্ট্রগুলোর মতো শক্তিশালী হতো, তাহলে মিয়ানমার সোজা পথে আসত। কিন্তু বাস্তবতা হলো দুটি পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত রাষ্ট্র তাদের পক্ষে। এমনকি তথ্যে প্রকাশ, উত্তর কোরিয়ার সাহায্যে মিয়ানমার পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে এগিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। কবে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরবে, তা অনিশ্চিত। ওদিকে ভারত আসামের বাংলাভাষী দেড় কোটি মুসলমানকে বাংলাদেশে বিতাড়ন করার পাঁয়তারা করছে। এ পাঁয়তারা সফল হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে বাধ্য।
সউদী আরব, মিসর ও আমিরাত এখন সরাসরি ইসরাইলের দালালে পরিণত হয়েছে। সেখানকার একনায়ক নেতাদের গদিই মুখ্য দেশ-জাতি-ধর্মের চেয়ে। শেষ জামানায় ইহুদিরা নাকি মক্কা-মদীনা ছাড়া সমগ্র আরব ভ‚মিই দখলে নেবে। এটা কি তারই আলামত?
সামগ্রিক পরিস্থিতি অবলোকন করে বলতে হয়, যদি মুসলমানরা নিজেদের অনৈক্য ভুলে এক না হয়, তাহলে তাদের ভাগ্যে আরো কঠিন বিপদ-মুসিবত অপেক্ষা করছে। ওআইসিকে এখনই শক্তিশালী করা দরকার। যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমন্বিত পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি অবলম্বন করতে পারে, ওআইসি কেন পারবে না? অথচ, আল্লাহ ও রাসূল (সা.) মুসলমানদের সিঁসাঢালা প্রাচীর-সম ঐক্যের উপদেশ দিয়েছেন।
লেখক: ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন