রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ সংখ্যা

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমান

আলমগীর মহিউদ্দিন | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

If you are not careful, the newspapers will have you hating the people who are being oppressed and loving the people who are doing the oppression. -Malcolm X
বহু বছর আগে মিরপুরের এক বস্তিতে আগুন লেগে অর্ধডজন মানুষ পুড়ে মারা গিয়েছিল। বিখ্যাত এক মার্কিন সংবাদ সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছিলাম বিধায় মানবিক বিষয় ভেবে খবরটি পাঠালাম। খবরটি পাঠানোর দু-তিন ঘণ্টা পরে সংস্থার আঞ্চলিক হেডকোয়ার্টার হংকং থেকে একটি বড় টেলিগ্রাম পেলাম। সম্পাদক জানিয়েছিলেন, টেলিগ্রামের অনুরূপে মিরপুরের সংবাদটি পরিবর্তন করে পাঠাতে। টেলিগ্রামটিতে ঢাকা থেকে জার্মান সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধি মিরপুরের যে সংবাদটি পাঠিয়েছিলেন তার কপি। তিনি লিখেছিলেন, ‘একদল মৌলবাদী দল আল্লাহু আকবার ধ্বনি তুলে মিরপুরের এক ঘনবসতি এলাকায় ইসলামবিরোধীদের বাড়িতে আগুন দেয় এবং তাতে অর্ধডজন মানুষ জীবন্ত পুড়ে মারা যায়...’ ইত্যাদি। টেলিগ্রামের খবরের বর্ণনা আমায় ব্যথিত ও ক্রুদ্ধ করে এবং মার্কিন সংবাদ সংস্থার ইসলামবিরোধী মনোভাব স্পষ্ট করে তোলে। আমি আরো ব্যথিত এ জন্য যে, এ সংস্থা আমার খবর এবং কাজে সন্তুষ্ট হয়ে বেতন বৃদ্ধি করেছিল এবং ইউরোপ ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছিল। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে টেলিগ্রাম করে জানালাম, ‘আমি আমার খবরে অবিচল এবং তাই সত্য। টেলিগ্রামের খবরটি অতিরঞ্জন ও মিথ্যা। আমার খবর গ্রহণীয় না হলে, এই টেলিগ্রামকে আমার পদত্যাগ হিসেবে গ্রহণ করুন।’ সংবাদ সংস্থা থেকে ঘণ্টা দুয়েক পরে জবাবে, দুঃখ প্রকাশ করে এবং আমায় কাজ চালিয়ে যেতে অনুরোধ জানানো হয়।

ঘটনাটি আমায় নাড়া দেয় এবং পশ্চিমা সংবাদ যখনই পড়ি, এই অভিজ্ঞতা একটি পর্দা হিসেবে কাজ করে। কোনো পশ্চিমা সাংবাদিক এ দেশে এসে কোনো রিপোর্ট করলে তাতে তাদের দৃষ্টিকোণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রায়ই ইসলাম এবং মুসলিম বিষয় দু’টি নানাভাবে ঢুকে পড়ে। ওপরের ম্যালকম এক্স-এর সংবাদপত্র সম্পর্কে যে মন্তব্য, তা এ বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে। আসলে ম্যালকম পশ্চিমা সংবাদপত্রে ইসলাম এবং মুসলিম নিয়ে প্রতিবেদনগুলোর ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে এ কথা বলেছিলেন। দুঃখের বিষয় পরে তার এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে জীবন দিতে হয়েছিল। আরো দুঃখের বিষয়, এ ধারায় এখনো কোনো ছেদ পড়েনি।

আসলে ‘ইসলাম’ ও ‘মুসলিম’- এই শব্দ দু’টির সাথে জড়িতদের নিয়ে বিশ্ব ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে নানা আলোচনা একটি ঐতিহাসিক বিষয়। এ আলোচনা বিভিন্ন সময় নতুনভাবে শুরু হয় এবং প্রকৃত পক্ষে এর আকৃতি-প্রকৃতির পরিবর্তনও লক্ষ করা যায়। তবে বেশির ভাগ আলোচনার উদ্দেশ্য এবং প্রকাশ নেতিবাচক। কেন? এই প্রশ্নের জবাবের অনুসন্ধানের আগে দু’টি প্রশ্ন করা সমীচীন এবং এর জবাবেই হয়তো সত্যিকারের দিশা খুঁজে পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হলো, মুসলমানেরা বা ইসলাম কি এতই খারাপ? পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর এই অংশে কিছুই ভালো খুঁজে পায় না? অথবা কেন খোঁজার চেষ্টা করে না?

এর জবাবের জন্য প্রথমে অনুসন্ধান করা উচিত, কারা এই নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছে এবং যে ঘটনাকে উপলক্ষ করে এই প্রচারণা, সে ঘটনা বা ঘটনাবলী কি ইসলাম বা মুসলমানদের সাধারণ চিত্র বা সত্যিকারের চিত্র ধারণ করে? শত শত অনুসন্ধানী বক্তব্যে এ কথা বারবার বেরিয়ে এসেছে যে, গণমাধ্যমের এবং রাজনীতিবিদদের একাংশ এই নেতিবাচক বক্তব্যের উদ্গাতা। অন্য কথায় গণমাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রিত অথবা ইসলাম এবং মুসলমানদের বিষয়ে পক্ষপাতপুষ্ট। কিছু গণমাধ্যমে অবশ্য সত্য কথা আসছে, তবে তা যেন ছোট ছোট নদীর প্রবাহের মতো, যা বড় নদীতে নীত হওয়ার পর হারিয়ে যায়। তেমনি এই অনুসন্ধানের শেষপ্রান্তে এসে সব সুর এক সুরে লীন হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিষয়ে নেতিবাচক সুরটাই উচ্চকিত হতে দেখা যায়।

এর অন্যতম কারণ ৯৬ শতাংশ বিশ্ব সংবাদমাধ্যম (এমনকি মহাশক্তিধর মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো) মাত্র সাতটি ইহুদি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে। এদের প্রধান কর্মকর্তা ইহুদি। যেমন- বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংবাদমাধ্যম ওয়াল্ট ডিজনির প্রধান নির্বাহী একজন ইহুদি, যাকে সবাই ‘অপূর্ব নিয়ন্ত্রক’ বলে অভিহিত করে থাকে। সারা বিশ্বে ডিজনির এক কোটি ৪০ লাখ গ্রাহক আছে। ডিজনি কখনো ইহুদিদের কোনো সমালোচনা করে না, তবে ইসলাম এবং মুসলিম নিয়ে সমালোচনা, কটূক্তি বা কোনো নিন্দা উল্লেখ করতে ভোলে না। ইএসপিএনের প্রধান নির্বাহীও একজন ইহুদি। ইএসপিএনের সহযোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৪০০ এবং ১৯৯৪ সালেই এর মুনাফা ছিল ১০০ কোটি ডলার। এর নিয়ন্ত্রণে আছে টিভি স্টেশন, খবরের কাগজ ও অন্যান্য প্রচার সংস্থা। এখানে মুসলিমবিরোধী বিষয়গুলো কখনো বাদ যায় না। টাইম ওয়ার্নার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংবাদমাধ্যম এবং এর প্রধান নির্বাহী একজন ইহুদি। ওয়ার্নারের অনেক রেকর্ড সংবাদমাধ্যমে ঝড় তোলে। কারণ, গানের মাঝে কালো-সাদার ঝগড়ার উসকানি এতে ছিল এবং এই কালোরা হলো মুসলমান। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাবল কোম্পানি, ভিয়াকম নিয়ন্ত্রণ একজন ইহুদি। রুপার্ট মারডোকের নিউজ করপোরেশন হলো বিশ্বের চতুর্থ এবং এর পরিচালনায় আছেন ইহুদি। জাপানিজ সনি কোম্পানির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বড় বড় সংবাদমাধ্যমও (যেগুলো কোনো করপোরেশনের অঙ্গ নয়) ইহুদি নিয়ন্ত্রিত, যেমন নিউ ওয়ার্ল্ড এন্টারটেইনমেন্ট।

এই অনুসন্ধানের এক চমৎকার ইনফোগ্রাফিকও তৈরি করেছেন অ্যামলে লুটস কয়েক বছর আগে। তিনি দেখিয়েছেন, ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ৫০টি কোম্পানি বিশ্বের ৯০ শতাংশ সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করত। তবে তা ২০১০-এর মধ্যে ছয়টিতে নেমে আসে। এতে সহায়তা করেছে প্রযুক্তি। ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে এই নিয়ন্ত্রকের সংখ্যা আরো কমবে। তারা বলেছেন, এই নিয়ন্ত্রকেরা অতি কৌশলে তাদের ইচ্ছা ও মতবাদের প্রতিফলন ঘটান, যার ফলে পশ্চিমা বিশ্বে মুসলিমবিরোধী মনোভাব বিরাজ করছে।

বিখ্যাত লেখক জন হুইটলে তার এক অনুসন্ধানী নিবন্ধে মন্তব্য করেছেন, সংবাদমাধ্যমগুলো মুসলিম ও ইসলামবিরোধী খবরগুলো ফলাও করে থাকে। নিরপেক্ষ বা সত্য চিত্রগুলো অত্যন্ত বিরল বা গুরুত্বহীনভাবে প্রকাশ করা হয়। সংবাদমাধ্যমের এই চিত্র চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে ‘অ্যান্টি-ইসলামিক সেন্টিমেন্ট অ্যান্ড মিডিয়া ফ্রেমিং, জার্নাল অব রিলিজিয়ন অ্যান্ড সোসাইটির’ ২০১৩ ইস্যুতে। এখানে বিভিন্ন রিসার্চের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। এর মাঝে পিউ ফোরাম অন রিলিজিয়ন অ্যান্ড পাবলিক লাইফ সার্ভে, এবিসি নিউজ পোলসহ বহু উদ্ধৃতি দেয়া আছে। পিউ ফোরাম প্রতি বছর কয়েকবার ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর অসুন্ধান চালায়। পিউ সার্ভেতে দেখা যায়, ২০০১ সালের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আক্রমণের পরও আমেরিকায় মুসলিমবিরোধী মনোভাব কম ছিল। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের ক্রমাগত নেতিবাচক প্রচারণায় জনগণের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। পিউ এক সার্ভেতে জানিয়েছে, এই অবনতি ২০০২ থেকে শুরু হয় এবং তা এখন বেশ দ্রæতগতিসম্পন্ন। ২০১২-১৪ সালের সার্ভেতে প্রায় ৫০ শতাংশ মার্কিনি মুসলমান ও ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে। তবে যখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় (১৫টি প্রশ্ন), কেন তারা এমনটি ভাবে (সেটি কি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে), তারা জবাব দেয় সংবাদপত্রের রিপোর্ট এবং সোস্যাল মিডিয়ার আলোচনা তাদের এই মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করে। প্রায় সবাই (৯৫ শতাংশ) বলে, তাদের ব্যক্তিগত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আর যারা ব্যক্তিগতভাবে মুসলমানদের চেনে বা তাদের প্রতিবেশী (৫ শতাংশ), তারা এমনটি ভাবে না। বরং তারা মুসলমানদের প্রশংসা করে।

সন্ত্রাস সম্পর্কিত বেশির ভাগ খবর এমনভাবে নির্মিত হয়, যা সত্যিকারের চিত্র বহন করে না। বরং এর উদ্দেশ্য থাকে যেমনভাবে খবরটি পরিবেশন করা হয়েছে জনগণ এবং পাঠক যেন ঠিক তেমনভাবে তাদের মনোভাব স্থির করে। এর বিপরীত খবরগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। যেমন ‘ফিজিসিয়ানস ফর সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি’ (পিএসআর) ২০১৫ এপ্রিলে তাদের এক সার্ভেতে এই ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে। নোবেল প্রাইজপ্রাপ্ত এই সংস্থা তাদের ৯৭ পৃষ্ঠার রিপোর্টে বলেছে, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে যে বোমাবর্ষণ ও হত্যাকান্ড ইরাক-আফগানিস্তানে দুই দশক ধরে চলে, তাতে ২০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং দেশগুলো প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। রিপোর্টটি তৈরি করেন ড. রবার্ট গোল্ড, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ প্রফেশনাল ডাইরেক্টর এবং অধ্যাপক টিম টার্ক, সাইমন ফ্রেসার বিশ্ববিদ্যালয়। এই রিপোর্টকে জাতিসঙ্ঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হান্স ভন স্পোনেক একটি উল্লেখযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য তথ্য বলে অভিহিত করেন। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম এই রিপোর্টটি বøাক-আউট করেছে। শুধু কিছু স্থানীয় ভাষার পত্রিকা এর উল্লেখ করে। পরে বিভিন্ন সংস্থা এই পিএসআর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখায় আফগানিস্তানের মৃত্যু সংখ্যা আরো বেশি এবং সম্ভবত ৪০ লাখেরও বেশি। এই তথ্যের পক্ষে ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্স’ এর অধ্যাপক নাগি লিখেন- এই রিপোর্টে অনাহার, রোগব্যাধিসহ বিভিন্ন কারণে মৃত্যুর সংখ্যাগুলো যোগ করলে এটি আরো বাড়বে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই হতভাগ্য সবাই মুসলমান এবং তারা কোনো অন্যায় বা সঙ্ঘাতে লিপ্ত ছিল না। আহমদ নাফিজ গার্ডিয়ানে লিখেছেন, এর সংখ্যা ৫০ লাখ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিশিষ্টজনেরাও এই মুসলিমবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করতে কেমনভাবে কাজ করছেন তার একটি দৃষ্টান্ত আলোচনা করা যেতে পারে। আইওয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রেইগ অ্যান্ডারসন এবং তার সহকর্মীরা একবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জনমত যাচাই করেন। তাদের যাচাইয়ের ফল কমিউনিকেশন রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত হয়। তারা দেখান, বিশিষ্টজনের মুসলিমবিরোধী বক্তব্য এবং কর্মকান্ড প্রাধান্য দিয়ে যে ভিডিও ক্লিপগুলো, সেগুলো দেখানো হয় এবং জনমত গড়ে তোলে। আর যে ভিডিও ক্লিপে সহযোগিতা এবং মুসলিম পার্টিসিপেশন ছিল, তা ন্যূনতম সংখ্যায় দেখানো হয়। তাই অ্যান্ডারসন মন্তব্য করেন, যদি কোনো ক্যান্ডিডেট মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দেন এবং তার কর্মকান্ডের কথা বলেন, তাহলে তিনি জিতবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তার বক্তব্য সত্য বলে প্রমাণিত হয়। এমন আরেকটি দৃষ্টান্ত ব্রিটেনে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ডেম লুইস ক্যাসিকে মুসলমানদের ওপর এক অনুসন্ধানের হুকুম দেন। বছরব্যাপী এই ‘অনুসন্ধানের’ যে রিপোর্ট দেয়া হয়, তা ব্রিটেনে মুসলমানদের ওপর হুমকি বলে অভিহিত করেছেন মুসলমানেরা। লুইস ক্যাসি সুপারিশ করেন, যেন অভিবাসী (বিশেষ করে মুসলিম) নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং তাদের ব্রিটিশ সংস্কৃতির সাথে মিশে যাওয়ার প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। আরো ভয়াবহ হলো নানা নতুন কর্মকান্ড। যেমন মুসলিম পোশাক, দাড়ি ইত্যাদি। এর মধ্যেই ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ হিজাব এবং বোরকা নিষিদ্ধ করেছে। এখানে উল্লেখযোগ্য, ফ্রান্সে ৪০০টি নুডিস্ট ক্লাব আছে, যেখানে প্রবেশ করতে হলে সব কাপড়-চোপড় খুলে ঢুকতে হয় এবং স্বল্পবাসসম্পন্ন মহিলারা প্রগতিশীল বলে পরিচিত, যার ধাক্কা অন্য দেশেও অনুভূত হচ্ছে। মুসলিম দেশগুলোতে এর জনপ্রিয়তা নেই বলে তাদের ‘অনুন্নত’সহ নানা নামে ডাকা হয়।

লেখিকা শীলা মুখার্জি লিখেছেন, এই ইসলামভীতি এবং অ্যান্টি-সেমিটিজম এক। তিনি হিটলারের দুই ডজন উদ্ধৃতি দিয়ে এটি প্রমাণ করেছেন। তবে ইহুদিরা এটা মনে করে না। ড. কলিন ও ব্রায়েন এবং সহযোগীরা এর কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘ইসলামভীতিসূচক বক্তব্য এবং কর্মকান্ডের প্রণেতারা হলেন বিশেষভাবে ইহুদি নেতা ও পাদ্রিরা’- তাই এই সত্য শ্রবণ করতে নারাজ।

এ নিবন্ধ শেষ করার আগে ড. বেলিন্ডা এফ এসপিরিটোর (গেøাবাল রিসার্চ) বক্তব্য সমর্থন করছি। ড. বেলিন্ডা বলেছেন, পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান না করে এই ইসলামভীতি ছড়ানো ঠিক নয়। এর ফলে খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মাঝে বিশাল ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ দু’টিই আব্রাহামের ধর্মের অংশ। সত্যিকারের মুসলিম এবং সত্যিকারের খ্রিস্টান একই মূল্যবোধ ধারণ করে। তিনি বলেছেন, আমেরিকার বিরুদ্ধে মুসলমানদের ক্রোধের কারণ হলো- গত ২০০ বছরের সাম্রাজ্যবাদের আড়ালে সেসব দেশের ধ্বংসযজ্ঞসহ নানা অমানবিক কাজ। এখন সেগুলো পেছনে ফেলে নতুন শান্তি ও ভালোবাসার যুগের সৃষ্টিকর্মে সবাইকে যোগ দিতে হবে।
লেখক: সম্পাদক, দৈনিক নয়াদিগন্ত

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন