শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

চীনে জন্মহারে রেকর্ড ধস ঝুঁকির মুখে ‘চাইনিজ ড্রিম’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

চীনের জনসংখ্যা হ্রাসের হার এতটাই যে নামতে নামতে গত কয়েক দশকের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত চীনের সরকার তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দশ বছরে দেশটির গড় বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ০.৫৩ শতাংশ। ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশটির জনসংখ্যা ০.৫৭ শতাংশ কমেছে।

চীনে বর্তমানে একজন মহিলার জীবদ্দশায় জন্ম নেয়া শিশুদের সংখ্যার অনুপাত মাত্র ১.৩। দেশটিতে প্রবীণদের হারও দ্রুত বাড়ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক জনসংখ্যার হার ২০১০ সালের ৮.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমান ১৩.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চীনা পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান নিং জিঝে জানিয়েছেন, গত বছর ১২ মিলিয়ন শিশু জন্ম নিয়েছে। ২০১৬ সালে সংখ্যাটি ছিল ১৮ মিলিয়ন।

নিং মনে করেন, চীনের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নতিতে গর্ভধারণের এমন হার স্বাভাবিক ফলাফল। বিবিসি বলেছে, এ হিসাব চীনের নীতি নির্ধারকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দম্পতিদের সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে উৎসাহ দেয়ার তাগিদ আসবে কি না, সেটি নিয়ে ভাবছে তারা।

দেশের উন্নতি হতে থাকলে শিক্ষা এবং অন্য গুরুত্বের বিচারে যেমন ক্যারিয়ারের ভাবনায় পরিবারে জন্মহার কমে যায়। চীনের প্রতিবেশী দেশ জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া এক্ষেত্রে উদাহরণ। সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও দেশ দুটিতে জন্মহার বাড়াতে পারছে না। এ বিষয়ে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োগিক অর্থনীতি বিভাগের গবেষক অধ্যাপক এবং ডেমোগ্রাফির বিশেষজ্ঞ লিয়াং জিয়াংহাং বলেছেন, ‘চীন একটি অনন্য জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যা বিশ্বে সবচেয়ে জরুরি এবং গুরুতর।’ তিনি বলেন, ‘এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সময় বোমা।’ জনসংখ্যাবিদরা বলছেন যে, এর কোনও সহজ সমাধান নেই। শিক্ষিত চীনা নারীদের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ বিবাহ বন্ধনে বিলম্ব করছে, যা ২০১৪ সাল থেকে হ্রাস পেয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদের হার ২০০৩ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, দেশটি তার জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে অভিবাসন নির্ভর করতে রাজি নয়।

বিগত কয়েক দশক ধরে চীন তার অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য স্বল্প বেতনে কঠোর পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক তরুণ শ্রমিকদের উপর নির্ভর করেছে। বর্তমানে শ্রমিক ঘাটতির কারণে শ্রম ব্যয় ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গুয়াংজুতে ইদানিং কারখানার মালিকরা রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে উল্টো কর্মীদের বলেন তাদের বেছে নিতে। পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাবে কিছু সংস্থা রোবট ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

চীনের এই জনসংখ্যা সমস্যা দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ‘পরিবার পরিকল্পনা নীতি’, যা কয়েক দশক ধরে জনগণের অসন্তুষ্টির অন্যতম বৃহত্তম উৎস ছিল, সেটিকে পুর্নবিবেচনা করার তাগিদ দিচ্ছে। কারণ এই নীতি অব্যাহত থাকলে শি’র ‘চায়নিজ ড্রিম’ তথা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জাতীয় পুনর্জাগরণের প্রতিশ্রুতি ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।

‘এভাবে চলতে থাকলে সম্ভবত ভবিষ্যতে চীনের অর্থনীতি বিশে^র সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হিসাবে আমেরিকাকে ছাড়তে পারবে না।’ এমনটাই বলেছেন গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড। সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Faisal Mustaq ১২ মে, ২০২১, ১:৫৫ এএম says : 0
পৃথিবীর তিন ভাগে এক ভাগ মানুষের বসবাস চীনে।।
Total Reply(0)
Md Khairul Islam ১২ মে, ২০২১, ১:৫৬ এএম says : 0
এর পতিক্রিয়া হিসেবে চীনে বয়ষ্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে, তরুণদের সংখ্যা কমে যাবে, বয়ষ্করা অনেকটা অবহেলার পাত্রে পরিণত হবে। মোটকথা, এভাবে জন্মহার একেবারে কমিয়ে দেওয়া চীনের জন্য মোটেও সুখকর হবেনা। ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
Al Rakib ১২ মে, ২০২১, ১:৫৬ এএম says : 0
তারা অকাজের চেয়ে আসল কাজ বেশি করে! তাই জনসংখ্যা কমলেও উন্নতির চাকা থেমে নেই!!
Total Reply(0)
Hassan Mohammad Aminul ১২ মে, ২০২১, ১:৫৭ এএম says : 0
বাংলাদেশ গ্রোথ রেট ভারত ও পাকিস্তান থেকে কম। আমরা প্রায় শুন্যের দিকে যাচ্ছি।
Total Reply(0)
Md Khelafat Hossain ১২ মে, ২০২১, ১:৫৮ এএম says : 0
অনেক মানুষ করোনায় মারা গেছে। তখন গোপন করলেও এখন মানুষ শুমারিতে ধরা পড়ছে।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ১২ মে, ২০২১, ১০:৫০ এএম says : 0
জন্ম-মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে
Total Reply(0)
হাবীব ১২ মে, ২০২১, ১০:৫১ এএম says : 0
‘চাইনিজ ড্রিম’ - এর এবার কি হবে ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন