শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ফুলবাড়ীতে বেশি দামে চামড়া কিনে লোকসানে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা

প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ঈদুল আযহার পশু চামড়ার বাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে। মূলধন কমে যাওয়া, সঠিক দাম না পাওয়া, মৌসুমী কসাইদের কারণে চামড়ার মানে প্রভাব ফেলা, লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হবার কারণে চামড়া শিল্পে এবার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি আড়ৎদাররা। আবার গতবারের তুলনায় পশু কোরবানি কম হওয়ায় চামড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনে লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। গরুর চামড়া পিচ প্রতি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী মূল্যে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে চামড়া কিনলেও সেই মূল্য মহাজনেরা না দেয়ায় বড় রকমের লোকসানের মুখে পড়েছে চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফিট ৪০ টাকা, ছাগলের চামড়া ১৫ টাকা ও খাসির চামড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবার। কিন্তু নির্ধারিত মূল্যে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চামড়া কিনে আড়তদারদের কাছে এনে সঠিক মূল্য না পাওয়ায় বড় রকমের লোকসানের মুখে পড়েছে এসব মৌসুমী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এদিকে চামড়ার আড়তদাররা বলছেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া ক্রয় করায় তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, ঠিক একইভাবে আমাদেরও (আড়তদাররা) ব্যবসায়ীকভাবে লোকসানে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকায় রফতানি করতে মোটা অংকের টাকা খরচ হয়। সেই খরচের টাকা বাদ দিয়েই সরকারি মূল্যের কিছু কমে চামড়া কিনতে হয়, কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তা না করায় আড়তদাররাও বিপাকে পড়েছেন বলে জানা যায়। ফুলবাড়ী পৌরবাজারের নিমতলা মোড়, রেলগেট বাজার ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চামড়ার বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে ৭শ’ টাকা থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত। খাসির চামড়া ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা ও সাধারণ ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে চামড়া প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে। চামড়ার খুচরা ব্যবসায়ী সাইলু আহম্মেদ, আব্দুর রউফ, কোরবান আলী বলেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গরুর চামড়া ৪০ টাকা বর্গফিট নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি গরুর চামড়া কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩৬ বর্গফিট পর্যন্ত হয়। যা সরকারি মূল্য অনুযায়ী ১হজার টাকা থেকে ১হাজার ৪শ’ টাকা পর্যন্ত দাম হবে এবং খাসির চামড়া প্রতিবর্গফিট ২০টাকা ও সাধারণ ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফিট ১৫ টাকা। এতে প্রতিটি চামড়ার মূল্য দাঁড়ায় ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এই হিসাব করেই তারা গ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছে। কিন্তু চামড়ার মহাজনেরা কম মূল্যে চামড়া কেনায় বড় রকমের লোকসানের মুখে পড়েছে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার দুপুর থেকেই পৌর-শহরের নিমতলা মোড় এলাকায় চামড়া নিয়ে আসতে শুরু করেন মৌসুমী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি চামড়ার দাম ফিট অনুযায়ী ১হাজার থেকে ১২শ’ পর্যন্ত দেয়া হলেও বিকেল গড়াতে এর দাম কমতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর এসব চামড়ার দাম ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় ক্রয় করতে দেখা গেছে পাইকারদের। তবে বড় চামড়ার দাম একটু বেশি ছিল। ছাগলের চামড়া ১০ থেকে ২০টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে মৌসুমী ও খুচরা বিক্রেতাদের। প্রায় একই দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে ঈদের পর শুক্রবার পর্যন্ত। দাম কম হলেও বিকল্প বিক্রির কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় আড়তদারদের কাছেই শেষ পর্যন্ত মৌসুমী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে যেসব মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তৃণমূল থেকে চামড়া ক্রয় করে এখানে এসেছেন তারা সকলেই মহাবিপাকে পড়েছেন। আড়তদার কাবির হোসেন বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া ক্রয় করা হয়েছে, তবে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে নাটোরের আড়ৎ পর্যন্ত পৌঁছাতে একটি বড় রকমের খরচ হয়, সেটা মাথায় রেখেই আমরা কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন