বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

করোনার ঝুঁকি ঠেকাতে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই

| প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

লকডাউনের মধ্যেও ঈদ উপলক্ষে গত ৪ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ১২ দিনে ঢাকা থেকে এক কোটির মতো মানুষ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে গেছে। আবার ১৫ মে, মাত্র একদিনে ৪ লাখ লোক ঢাকায় ফিরে এসেছে। মোবাইল ফোনের সিমের হিসাবে এ তথ্য জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। লকডাউনের লক্ষ্য হলো: মানুষকে ঘরে রাখা এবং জরুরি প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হতে না দেয়া। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধে এটাই সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি যেমন, চলাফেরা ও অবস্থানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া ও হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করা ইত্যাদি করোনা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অথচ, করোনার দ্বিতীয় অভিঘাত শুরুর পর লকডাউন জারি করা হলেও তা কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়নি। স্বাসথ্যবিধিও সেভাবে কেউ মানেনি এবং মান্য করতে বাধ্যও করা হয়নি। এতে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই’ই বেড়েছে। সাত হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত এবং একশ’র বেশি মৃত্যু এক নাগাড়ে কয়েক দিন ধরে লক্ষ করা গেছে। এতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। আইসিইউ বেডের সঙ্কট, অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদি দেখা গেছে প্রকটভাবে। এই প্রেক্ষাপটে লকডাউন দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। কিছুটা কড়াকড়িও আরোপ করা হয়েছে। এতে সুফল পাওয়া গেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে। আইসিইউ বেড ও অক্সিজেনের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যেই ঈদ এগিয়ে এসেছে। সাধারণত ঈদের সময় গ্রামে যাওয়া ও আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করা আমাদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ঈদের আগে লাখ লাখ মানুষ শহর থেকে গ্রামে যায় এবং ঈদ শেষে গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসে। গত বছর করোনাকারণে এক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়। তারপরও বিপুল সংখ্যক মানুষ শহর ছাড়ে। এবার লকডাউনে মানুষের গ্রামে যাওয়া কম হবে বলে ধারণা করা হলেও দেখা গেছে, সরকারি হিসাবে ঢাকা থেকেই এক কোটি মানুষ গ্রামে গেছে। অন্যান্য শহর থেকেও গেছে। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও কোনো বাধাই ঘরমুখো মানুষকে আটকাতে পারেনি। এর ফলাফল আশঙ্কাজনক হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

আমরা লক্ষ করেছি, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকার পাশাপাশি ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলও বন্ধ ছিল। ফলে ঘরমুখো মানুষ যে যেভাবে পেরেছে শহর ছেড়েছে। বিভিন্ন যানবাহনে গরু-ছাগলের মতো গাদাগাদি করে তারা গেছে। তাদের নিরস্ত বা বাধা দেয়া সম্ভব হয়নি। মানুষের মধ্যে বেপরোয়াভাব প্রত্যক্ষ করা গেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, রাস্তাঘাটে ও যানবাহনে ব্যাপক জনসমাবেশ এবং স্বাস্থ্যবিধি বেতোয়াক্কা করার কারণে করোনার তৃতীয় অভিঘাত দেখা দিতে পারে, যাতে সংক্রমণ ও প্রাণহানি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ইতোমধ্যে লকডাউন আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। ১৭ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। যথারীতি এ সময়ে শিল্প-কারখানা, শপিংমল, দোকানপাট, হাটবাজার খোলা থাকবে। জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে। অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও ব্যাংকে সীমিত পরিসরে লেনদেন চলবে। অন্যদিকে আগের মতোই গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র অফিস-আদালত, গণপরিবহন, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ থাকার ফায়দা আসলে কী হবে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। দেখা গেছে, অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় অনেকেই কর্মস্থল ছেড়েছে স্বপরিবারে। যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা তাদের ও অন্যদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। তার চেয়ে গণপরিবহন, ট্রেন-লঞ্চ চালু থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের চলাচল করা সহজ ও সম্ভবপর হতো। সেটা হতো মন্দের ভালো। যারা ঈদ উপলক্ষে শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়েছে, এর মধ্যে তাদের অনেকেই ফিরে এসেছে। বাকীরাও ফিরছে। তারা যেভাবে গিয়েছে সেভাবেই ফিরে আসছে। তাদের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার শেষ নেই। তাদের যেমন শহরে রাখা যায়নি, তেমনি শহরে ফেরাও ঠেকানো যাচ্ছে না। আসলে এভাবে গণপরিবহন ও ট্রেন-লঞ্চ বন্ধ রাখার কোনো মানে হয় না। হয় যাতায়াত উন্মুক্ত করে দিতে হবে। না হয়, কঠোরভাবে যাতায়াত রুখে দিতে হবে। মাঝামাঝি ব্যবস্থায় ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব নয়।

করোনার তৃতীয় অভিঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অনুপ্রবেশ ও বিস্তারের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বেশ কিছু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। দুঃখজনক হলো, সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে লোকাগমন অব্যাহত আছে। স্থলবন্দরগুলোতে ভারতীয় মালামালের ট্রাকের সঙ্গে ট্রাক-শ্রমিকরাও এপারে অবস্থান ও মেলামেশা করছে। সীমান্তে লোকসমাগম বন্ধ না করলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। প্রয়োজনে কিছু দিন আমদানি-রফতানি বন্ধ রাখা যেতে পারে। ওদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে এই মর্মে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, আগামীতে দুনিয়াজুড়ে করোনা পরিস্থিতির ভয়ঙ্কর অভিঘাত ঘটতে পারে। এই সব কিছুর বিবেচনায় আমাদের অসতর্কতা, অবহেলা ও উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ ও অবকাশ নেই। লকডাউন ঘোষণার পর তা শতভাগ কার্যকর করতে হবে। লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের কাছে সরকারের পরাস্ত হওয়া চলবে না। এক্ষেত্রে সরকারকে শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে। দেশজুড়ে স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি রাজধানীসহ সব জেলা শহরের হাসপাতালগুলোকে সর্বদা প্রস্তুত রাখতে হবে। বিশেষভাবে আইসিইউ বেড ও অক্সিজেন নিশ্চিত করতে হবে। এই সঙ্গে করোনা পরীক্ষা ও টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন