শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা

ভারতীয়সহ দেশে করোনার চার ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ ও লকডাউন দিয়ে সরকার বেখেয়াল, কিছু মানুষের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে দায়িত্বজ্ঞানহীন চলাফেরা, টিকার অনিশ্চয়তা কাটেন

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

‘খাল কেটে কুমির আনা’ প্রবাদের মতোই আমরা যেন বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বহুবার করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করে ‘সতর্কতা’ বার্তা দিয়েছেন। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় বেশিরভাগ মানুষ বেপরোয়া। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টসহ চারটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। অথচ ৭ দফায় লকডাউন (কঠোর বিধিনিষেধ) বাড়ালেও সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে কার্যত বেখেয়াল। অপরিপক্ব কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে টিকা পেতে ব্যর্থতা, ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’ প্রবাদের মতো লকডাউন দিয়ে কিছু অফিস, সড়ক-মহাসড়ক, ফেরি-লঞ্চ খুলে দেয়া, সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েও বিশেষ অনুমতিতে সীমান্ত দিয়ে মানুষ পারাপার, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের অজুহাতে যানবাহনে ঠাসাঠাসি করে কর্মস্থল থেকে বাড়িতে আসা যাওয়া সবকিছুই করোনার তৃতীয় ঢেউকে আমন্ত্রণ জানানোর নামান্তর।

জানতে চাইলে ঢাকাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্সের (আইসিডিডিআর) বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থেকে যে ঝুঁকি আসছে, তা বাংলাদেশের জন্য বিরাট উদ্বেগের। এখনো নাগরিকদের জন্য টিকা পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে পারেনি। এর মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে সামাল দেয়া কঠিন হবে।

করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে শনাক্তের আগ থেকেই শঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব করে। করোনা সংক্রান্ত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে সরকার গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য সীমান্ত বন্ধ করে ৫ দফা সুপারিশ করেন। শুধু তাই নয়, ৯ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে আসতে না পারে, সে লক্ষ্যে আমরা ভারতের সাথে লকডাউন আরো শক্তিশালী করতে বলেছি’। এমনকি ৯ মে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ভারত থেকে করোনার বিপজ্জনক বার্তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। আবারও করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সামান্যতম উদাসীনতায় দেশের জন্য বিপজ্জনক ভবিষ্যতেরই পূর্ভাবাস।’ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা উপেক্ষিত হয়েছে সরকারি পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও। সরকার যেমন লকডাউন দিয়ে এবং একের পর এক, সে লকডাউন লম্বা করে কার্যকরের চেষ্টা করেনি; তেমনি কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে বিবেকহীন আচরণ করছে। দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে চলাফেরা করে নিজের বিপদ ডেকে আনছেন; দেশের সর্বনাশ করছেন।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, লকডাউনের মধ্যে গাদাগাদি করে গ্রামে যাতায়াত আত্মঘাতীর নামান্তর। এটা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। দেশে ভারতের মিউটেন্ট ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ভারতের ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এই ভ্যারিয়েন্টে একজন থেকে ৪ শত জন পর্যন্ত মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। দেশে এই ভ্যারিয়েন্টটি ছড়িয়ে পড়লে তা সামাল দেয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।

সচিবালয়ে গতকালও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনার ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভয়ঙ্কর’ অবিহিত করে বলেছেন, টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে আমরা চিন্তিত। অথচ কড়াকড়ির মধ্যেও করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের নমুনা পরীক্ষা করে এ পর্যন্ত ৬ জনের দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে; তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্ডার এখন বন্ধ আছে। আগামীতেও বন্ধ থাকবে, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ থাকবে। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ‘এখন বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ আছে। আমরা প্রস্তাব করব এটাকে বন্ধ রাখতে।

বাস্তবে সড়ক পথ ও নৌপথ ও সীমান্তের বাস্তব চিত্র উল্টো। ঈদের আগে তিন চার বার যানবাহন বদল করে ঠাসাঠাসি করে মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরেছেন। ফেরিতে মানুষের উপর মানুষ, বাইক, সিএনজি, পিক-আপ ভ্যান, ট্রাকে গাদাগাদি করে দূরের পথ যাতায়াত করছেন। ফেরিতে তিল ধরনের ঠাঁই নেই, এমন দৃশ্য ঈদের আগে ও পরে মানুষ দেখছে। শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সের লাখ লাখ মানুষ করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষা করে গ্রামে গেছেন; আবার ঢাকা ফিরে এসেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আগাম বার্তা দিয়েছেন এই বলে যে ‘এদের কেউ কেউ গ্রামে যাচ্ছে পরিবারের লোকজনের শরীর সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে’। এছাড়াও ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে এসে কোয়ারেন্টিন থেকে অনেক মানুষ পালিয়ে গেছেন। সীমান্ত পেরিয়ে আসা করোনা আক্রান্ত কয়েকজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়ে ধরা পড়লেও প্রকৃত কতজন কোয়ারেন্টিন রয়েছেন তা বলা দুষ্কর।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশেষত মাস্ক পরার বিষয়টি সরকারের কঠোরভাবে নিশ্চিত করা উচিত। বড় পরিসরে মাস্ক বিতরণ করা উচিত। করোনাভাইরাস পরিবর্তিত হতে থাকে এবং এরইমধ্যে বিশ্বের সব উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট ভারতে পাওয়া গেছে। সেটা বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। এখানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হলে তা হবে আরো মারাত্মক। মানুষ যে ভাবে চলাফেরা করছে, তাতে কয়েক সপ্তাহ পর সংক্রমণ বাড়তে পারে এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আবারও চাপে পড়তে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।

ইতোমধ্যে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টসহ (বি.১.৬১৭.২) চারটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। অন্য তিন ভ্যারিয়েন্ট হচ্ছে- ইউকে ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.১.৭), দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৩৫১), নাইজেরিয়ার ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৫২৫)। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইদেশি) যৌথভাবে প্রায় ২০০ কোভিড-১৯-এর নমুনা ‘সিকোয়েন্সিং’ করে। সে গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে সেই গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করে বলা হয়, এপ্রিলে ভারত থেকে আসা ২৬ সম্ভাব্য কোভিড-১৯ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ৬ জনের নমুনায় ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়। এই ধরনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন (ভিওসি) হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এই ভারতীয় ধরন বিশ্বের ৪৪টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ৬ জন রোগী ভারতের চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হরিয়ানা ও পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ করেছিলেন। তারা একই পরিবারের সদস্য এবং বয়স ৭ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে। আইইডিসিআর বলছে, ভারতীয় ধরনের সিকোয়েন্স বৈশ্বিক ডেটাবেইস জিআইএসএআইডিতে জমা দেওয়া হয়েছে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে ‘প্রিভেনশান ইজ বেটার দেন কিউর’ প্রবাদটি মাঠে মারা যাচ্ছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আসার আগে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। সেটা যেন ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’ প্রবাদের নামান্তর। লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ করে সরকার যেমন গার্মেন্টস, শিল্প কারখানা চালু করেছে, রাজধানী ঢাকাসহ জেলা পর্যায়ে গণপরিবহন চালু রেখেছে, ঈদ উপলক্ষে ফেরি পারাপার চালু করেছে; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নামিয়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্যের কথা বলছে: এগুলো নিছক ‘বজ্র আঁটুনি’। তেমনি দুই দফায় ২৮ দিন সীমান্ত বন্ধ থাকলেও ভারতে বাংলাদেশি দূতাবাসের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরছে হাজার হাজার মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসরে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার করে মানুষ দেশে ফিরেছে। অবশ্য গতকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করায় এটা কমে এসেছে। আবার ভারতেও ফিরে গেছে অনেক মানুষ। আখাউড়া, বিবিরবাজার, বেনাপোল, বাংলাবান্ধা, টেকনাফ, বিলুনিয়া, সোনা মসজিদ, ভোমরা, দর্শনা, বুড়িমারি, সোনাহাট, রৌমারি, হিলি, রাধিকাপুর, তামাবিল, গোয়াইনঘাট, সুতারকান্দি, বিয়ানিবাজার, জকিগঞ্জ, বল্লা চুনারুঘাট, ফুলতলা, চাতলা, নাকুগাও, গোবরাকুড়া, ধনুয়া বকশিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে মানুষ ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। আবার ভারতীয়রা ফিরে গেছেনর। এ ছাড়াও আকাশ পথ ও সমুদ্র পথে মানুষ আসছে। এরাই করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বাহক।

মূলত: গত ৭ মে বাংলাদেশের যশোরে দুই ব্যক্তির শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে। তারা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। করোনাভাইরাসের জিনোমের উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে করোনার এই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের এই খবর প্রকাশ হয়। অতঃপর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কথা স্বীকার করে। এদের একজন গতকাল মারা গেছেন।

১৭ কোটি মানুষের এক ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলার। বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নত দেশের কাতারে উঠার কথা বলা হলেও বাস্তবে অর্থনীতির আকার খুব ছোট। লাখ লাখ কর্মহীন শিক্ষিত বেকার। এ ছাড়া দুর্নীতি, গণতন্ত্রহীনতা, আইনের শাসনের অভাব এবং সুষমবণ্ঠন না থাকায় মানুষের মধ্যে আয় বৈষম্য পাহাড়সম। অর্থনীতির চাকা সচল রাখার অজুহাতে ঈদুল ফিতরের আগে সরকার লকডাউন (করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ) কিছুটা শিথিল করে দেয়। মানুষের ঈদযাত্রা থামানোর জন্যে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়। এরপরও গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে লাখো মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে যান। আবার তারা ফিরে আসেন। বিধিনিষেধ শিথিল করে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখায় এতে হিতৈবিপরীত হয়। মানুষ ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে যাতায়াত করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। এটাই আগামী কয়েক মাসে সংক্রমণ বৃদ্ধি করবে।

দেশে টিকা নিয়ে একনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। এখন পর্যন্ত দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৩৭ লাখ ৮৩ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকার দুই ডোজ পেয়েছেন। প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। টিকা সংকটের কারণে সরকার প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত রেখেছে। মোদীর কূটচালে প্রথম ডোজ পাওয়া প্রায় ১৪ লাখ মানুষ এখন দ্বিতীয়টি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে চীনের কাছ থেকে প্রথমে টিকা নেয়ার কথা বলা হলেও দিল্লির চাপে তা স্থগিত করে ভারতের সেরামের ইনস্টিটিউটের কাছে টিকা নেয়ার চুক্তি করা হয়। তিন কোটি ডোজ টিকার দাম অগ্রিম পরিশোধ করা হয়। কিন্তু ক্রয় করা টিকার ৭০ লাখ ডোজ দেয়ার পর ভারতের মোদি সরকার সে টিকা বাংলাদেশে রফতানি দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ সীমান্ত বন্ধের মধ্যে এপাড়-ওপাড় যাওয়া আসা চলছে। যারা আসা যাওয়া করছেন, তাদের কাউকে কাউকে কোয়ারেন্টিন রাখা হলেও অধিকাংশই নির্বিঘ্নে গ্রামে চলে যান। ইউরোপের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশে কঠোর কোয়ারেন্টিন রাখার ব্যবস্থা নেই। আবার ইউরোপ আমেরিকার মতো বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার সুযোগ অনেক কম। এ অবস্থায় তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম শনাক্ত হয়। শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। অতঃপর বছর শেষ দিকে করোনার প্রথম ঢেউ কমতে থাকে। কিন্তু ২০২১ সালের মার্চ মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। বর্তমানে সে ঢেউ অব্যাহত রয়েছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, টিকা সঙ্কট চলছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। ঈদে যেভাবে মানুষ যাতায়াত করেছে তাতে ঈদের ছুটির পর করোনা পজিটিভের সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে। আগামী জুন, জুলাই ও আগস্ট আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিভাগের এখনই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Jakir Hossen Chanchal ১৮ মে, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
হে আল্লাহ পৃথিবীর সব মানুষের এই রোগ থেকে মুক্ত করে দাও
Total Reply(0)
Kazi S. Rahman ১৮ মে, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছিল মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ করতে। সেটা যেহেতু হলনা, এখন পরিবহন ছেড়ে দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি পালনে বাধ্য করাটা যুক্তিসঙ্গত নয়কি? তাতে অন্তত মানুষের ভোগান্তি কমে যাওয় সহ সংক্রমণের হার কিছুটা হলেও কমত বৈকি।
Total Reply(0)
Shapna Taslima ১৮ মে, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
একবার যাবে একবার আসবে একটা খেলা শুরু হইছে।পৃথিবীর কোথাও এমন নজীর নেই সরকারী নিয়ম আইন অমান্য করে এভাবে বারবার দেশের মানুষ কে ঝুঁকি তে ফেলে।
Total Reply(0)
Md. Enamul Haque ১৮ মে, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
আমার ব্যক্তিগত মতামত - ঢাকা থেকে ঘরমুখো মানুষদের যেমন ফেরানো যায় নি, তেমনি শহরমুখী মানুষদেরও ফেরানো যাবে না।তারা আসবেই চাকরি বাঁচাতে। তাই স্বাস্থ্য বিধি কিছুটা হলেও মানানো যাবে। যদি পালাক্রমে বিভাগ বা জেলা ভিত্তিক চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেই সাথে পরিবহন গুলো স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। তা না হলে পুরো দেশের মানুষ একসাথে যাতায়াত শুরু করলে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অসহায় হয়ে পরে যেটা আমরা এর আগে দেখেছি।
Total Reply(0)
Fakir Goribullah ১৮ মে, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
জনগণকে ভয় দেখিয়ে কি লাভ!! !!সবাই বলেছিল ভারতের সাথে সীমান্ত যোগাযোগ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আফসোস তখন নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি এখন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভর্তা বানিয়ে খেয়ে ফেলুন।
Total Reply(0)
মোঃ আলিফ হোসেন ১৮ মে, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
আমার কথা হলো বাছুর ছেড়ে দিয়ে বলবে তুমি তোমার মায়ের কাছে গিয়ে দুধ খেয়েনা তাহলে কি বাছুর শুনবে? তদ্রুপ মার্কেট গণপরিবন খোলা রেখে মানুষ কে ঘরে থাকতে বললে কয়জন মানুষ শুনবে? আর দেশে কয়জন মানুষ বা সচেতনতা অবলম্বন করে। বেশিরভাগ মানুষ তো গতানুগতিক চিন্তায় চলে। আর তাছাড়া সবকিছু খোলা রাখা মানেই তো মৌন ভাবে আহবান করা মানুষ কে।
Total Reply(0)
এ.আর. মোহাম্মদ. মজনু ১৮ মে, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
দেশটারে খাইলে ভারতেই খাবে। কারন ভারতে এই মহামারির মাঝেও সিমান্ত দিয়ে হাজার হাজার ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতেছে।বিধিনিষেদ কি সেখানে নেই।আর দেশে চলছে লকডাউনের নামে তামাশা।
Total Reply(0)
Golam Morshed ১৮ মে, ২০২১, ১:০০ এএম says : 0
এখনই সতর্ক হওয়া উচিত। অন্যথায় এর ফলাফল আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
Total Reply(0)
Junayed Ibn Sheam ১৮ মে, ২০২১, ১:০০ এএম says : 0
সিমান্ত কেন আগে থেকে বন্ধ করা হয়নি। সরকার এর নজর কই থাকে। যখন covid -19 বেপক ভাবে হইবে তকন তাদের হোস হয়।
Total Reply(0)
Ahmed Jubaier ১৮ মে, ২০২১, ১:০০ এএম says : 0
একমাত্র আল্লাহ জানে এই রাষ্ট্র এবং জনগণের ভবিষ্যৎ কী। কিন্তু এদেশের নিরীহ সাধারণ জনগণ এবং রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি ধ্বংস করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে শিক্ষিত কর্মকর্তারা তাদের বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে নির্লজ্জের মতো অর্থনৈতিক ভাবে সফল হতে।
Total Reply(0)
Morshed Anam ১৮ মে, ২০২১, ১:০০ এএম says : 0
আতংকিত হবার কোনো কারণ নেই, ভারতের ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে আসবে এটাই স্বাভাবিক। বন্ধু তো বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যায়।
Total Reply(0)
মোঃ সেলিম হোসেন ১৮ মে, ২০২১, ৭:৩৮ এএম says : 0
প্রথমে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে, অতঃপর স্বাস্থবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। গ্রামে যাওয়া চাকুরীজীবী মানুষকে ঢাকায় ফিরতে স্বাস্থ্যবিধি মেন গণপরিবহন কয়েকদিনের জন্য খুলে দিলে করোনা সংক্রমন অনেকটাই রোধ করা যেতে পারে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন