শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

লোহাগড়ায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে প্রকল্পের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

লোহাগড়া (নড়াইল) উপজেলা সংবাদদাতা : লোহাগড়া উপজেলায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ও নামযজ্ঞের আহার্যের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৩৯১ মেট্রিক টন চাল (নয় কোটি ঊননব্বই লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার পাঁচশ’ আটানব্বই টাকা) আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পগুলোর কোন কাজ না করেই সমুদয় টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জনগণের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলার দেবী গ্রামের জনৈক আশিকুর রহমান দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক নড়াইলের ত্রাণ শাখার ২৯/৬/২০১৬ তারিখে ৬০২ নং পত্রে ৩৮৫টি প্রকল্পের অনুকূলে ১০৮০ মে: টন, ৬০৩ নং পত্রে ৪৭৫টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৪২৫ মে: টন, ৬০৪ নং পত্রে ১০০টি প্রকল্পের অনুকূলে ৩০০ মে: টন, ৬০৭ নং পত্রে ২৬৮টি প্রকল্পের অনুকূলে ৫৩৬ মে: টন, ৬১৬ নং পত্রে ২৫টি প্রকল্পের অনুকূলে ৫০ মে: টন। সর্বমোট ৩৩৯১ মে: টন চাল যার অর্থমূল্য (সরকারী হিসাবে) ৯,৮৯,৪২,৫৯৮ (নয় কোটি ঊননব্বই লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার পাঁচশ’ আটানব্বই) টাকা। এই অর্থ লোপাটের সাথে লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু, লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, উপজেলার দেবী গ্রামের বেলায়েত খোন্দকারের ছেলে খোন্দকার সাহেব আলী ও নোয়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম কালু জড়িত আছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
আশিকুর রহমান জানান, নলদী গোডাউন বিলি আদেশ মারফত তিনি জানতে পেরেছেন, নোয়াগ্রাম ইউনিয়নে জিআর প্রকল্পের অধীনে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ও নামযজ্ঞ মিলে মোট ১শ’ ২২টা প্রকল্পে ২৯৮ মে. টন বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন করা হয়েছে। আমি আমার ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদির খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি উল্লেখিত প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এই ধরনের কোন ওয়াজ মাহফিল ও নামযজ্ঞ উল্লেখিত স্থানে অনুষ্ঠিতই হয়নি, আহার্য প্রদানের কোন প্রশ্নই ওঠে না। প্রকল্পগুলোর স্থানসমূহের অধিকাংশে ওয়াজ মাহফিল বা নামযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হওয়ার বাস্তবতা নেই। কিছু প্রকল্পের নামের মধ্যেই অসঙ্গতি পাওয়া যায়। যেমন রায়গ্রাম মিত্র বাড়ির দুর্গা মন্দিরের সামনে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল এবং ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি বাসুদেব কুমার পাল। দুর্গা মন্দিরের সামনে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়া যেমনি অবাস্তব তেমনি এর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ারও নজির নেই আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়।
এছাড়া, গন্ডব ধনী বাড়ির জামে মসজিদের সামনে নামযজ্ঞানুষ্ঠান নামে অপর একটি প্রকল্প দেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পে জামে মসজিদের সামনে নামযজ্ঞ হবে তা সম্পূর্ণ অবাস্তব। অবাক ব্যাপার এই যে, ঐ গ্রামে একজনও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের বসতি নেই।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এই প্রথম শুনলেন কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি। তারা কোন চাল উত্তোলন করেন নি, কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আহার্যের যোগান দেন নি বা কোন অফিসিয়াল কাগজে স্বাক্ষর করেন নি।
নায়াগ্রাম ইউপি সদস্য মো: জিয়াউর রহমান জানান, প্রকল্পে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে আমার ওয়ার্ডে কোন ওয়াজ মাহফিল বা নামযজ্ঞ হয়নি। আমার ওয়ার্ডে কাঞ্চনপুর গ্রামে একটি মন্দির আছে। এই একই মন্দিরের বিভিন্ন রকম নাম যেমন কাঞ্চনপুর রামকৃষ্ণ মন্দিরের সামনে নামযজ্ঞ, কাঞ্চনপুর বিশ্ব রায়ের বাড়ির মন্দিরের সামনে নামযজ্ঞ, কাঞ্চনপুর শ্মশানের সামনে নামযজ্ঞ, কাঞ্চনপুর শ্মশানের কালী মন্দিরের সামনে নামযজ্ঞ, কাঞ্চনপুর নাটমন্দিরের সামনে নামযজ্ঞ, কাঞ্চনপুর শিবমন্দিরের সামনে নামযজ্ঞ, কাঞ্চনপুর আশ্রমে নামযজ্ঞ ও কাঞ্চনপুর বিশ্ব হরির মন্দিরের সামনে নামযজ্ঞ উল্লেখ করে একই স্থানে ৮ বারসহ ওই গ্রামে ১২ বার নামযজ্ঞ দেখানো হয়েছে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, প্রভাস সরকার, বিকাশ কুমারের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তারা প্রকল্পের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শরিফুজ্জামান বলেন, আমার ওয়ার্ডে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে অনেক জিআর প্রকল্পের কথা শুনেছি। কিন্তু জুন থেকে বর্তমান পর্যন্ত উল্লেখিত স্থানগুলোতে কোন ওয়াজ মাহফিল বা নামযজ্ঞ হয়নি। কলাগাছি মসজিদের সামনে মাঠে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল নামীয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো: আজগার মোল্যা বলেন, আমি কিছুই জানি না। আমার নামে জাল স্বাক্ষর দিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু হজব্রত পালনের উদ্দেশে দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, জুনের ২৯/৩০ তারিখ সব কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়ে থাকতে পারে। তিনি লুটপাটের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা বলেন, জুন মাসের শেষ তিনদিন তড়িঘড়ি করে সব স্বাক্ষর করতে হয়েছে, যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি, ভুল-ত্রæটি হতে পারে।
নড়াইল জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও এগুলো তদারকি করেন। কিছু অভিযোগ এসেছে, বিষয়টি নিয়ে এডিসি জেনারেলকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন