মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

রামাদ্বান পরবর্তী করণীয়

মুফতি মুহাম্মাদ আকতার আল-হুসাইন | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২১, ১২:০৪ এএম

আল-হামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা আমাদের গুনাহ মাফ করানোর সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দান করেছিলেন পবিত্র রামাদ্বানুল মোবারক। সবাই সবার অবস্থান থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন সারা মাস ফরজ রোজা রাখার পাশাপাশি ফরজ নামাজ, তারাবীহ নামাজ, তাহাজজুদ নামাজ, পবিত্র কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত, ইতিকাফ করা ও আল্লাহর রাস্তায় দান খয়রাত করতে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রামাদ্বান বিদায় হওয়ার পর থেকে আবার আমরা কিছু মানুষ গাফিল হয়ে গেছি বা যাচ্ছি। ঠিক রামাদ্বানে যেভাবে আল্লাহর গোলামী করেছি বা করার চেষ্টা করেছি সেটা কিন্তু এখন আর নেই! অথচ রামাদ্বানে যা করেছি সেটা সারা বছর না বরং সারাটা জীবন করার কথা। আর এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা নিজেই আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনুল কারীমের সূরা নহল এর ৯২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘আর তোমরা সে নারীর মতো হয়ো না, যে তার পাকানো সূতো শক্ত করে পাকানোর পর টুকরো টুকরো করে ফেলে’।
এখানে আল্লাহ তায়ালা একজন মহিলার কাজের উদাহরণ দিয়ে আমাদের বুঝাতে চেয়েছেন। যে মহিলা ছিল মক্কার বাসিন্দা। সেই মহিলা সূতো দিয়ে ঠিকঠাক ও মযবুত করে একটা কিছু তৈরী করতো। কিন্তু পরে সে বিনা কারণে তা ছিড়ে ফেলতো এবং টুকরো টুকরো করে দিতো। সুতরাং তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মহিলার মতো, যারা রামাদ্বান মাসে কষ্ট করে নিজের আমল ঠিক করলেন কিন্তু রামাদ্বানের পর আবার সেই আমল নষ্ট করে দিলেন। অথচ এই আমল নিয়মিত করার কথা। এ বিষয়ে সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন- হে আবদুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মতো হয়ো না, সে রাত জেগে ইবাদাত করতো, পরে রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে’।
আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হওয়া যাবে না: রামাদ্বানে যেভাবে আল্লাহকে স্মরণ করেছেন বিভিন্ন ইবাদত করার মাধ্যমে ঠিক তেমনি করতে হবে সর্বদা। কারণ যদি এখন তাঁর স্বরণ থেকে বিমুখ হন তাহলে নিজের পূর্বের নেক আমল নষ্ট করে ধ্বংস ডেকে আনবেন। আপনি ঈমানদার থেকে ফাসিক হয়ে যাবেন। সূরা হাশরের ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘তোমরা তাদের মতো হইও না, যারা আল্লাহকে ভূলে গিয়েছিলো ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন। আর তারাই হলো ফাসিক’।
এখানে আল্লাহ তায়ালা তাদের কথা বলেছেন যারা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বা নির্দেশ পালন না করে ও নিষেধ বর্জন না করার মাধ্যমে তাঁর স্মরণকে বর্জন করেছে ফলে তিঁনি তাদেরকে সৎ আমলের কথা ভূলিয়ে দিয়েছেন যা আখিরাতে তাদের উপকারে আসতো। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে এমন সব মানুষের মতো হতে নিষেধ করেছেন যারা আল্লাহ তায়ালার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে তারাই তাঁর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাবে, নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। যেমন সূরা মুনাফিকের ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেনো তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে। যারা এমন করবে (উদাসীন হবে) তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত’।
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা : রামাদ্বানের রোজার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন করার নির্দেশ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পাওয়া যায়। আর এটা প্রমান করে আমাদের আমলকে রামাদ্বানের পর ধারাবাহিক রাখতে। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- ‘হযরত আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- রামাদ্বান মাসের রোজা পালন করে পরে শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা পালন করা সারা বছর রোজা পালন করার মতো’। আল্লাহ তায়ালা আমাদের রামাদ্বানের রোজাসহ প্রতিটি নেক আমল ক্ববুল করুন। আমাদের সবাইকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন