শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি ইআরএফ নেতাদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০২১, ১০:১৩ পিএম

সরকারি নথি চুরির কথিত অভিযোগে আটক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। একইসঙ্গে তারা অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী সব কালাকানুন বাতিলেরও দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার (২০শে মে) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই দাবি করেন তারা। রোজিনা ইসলাম এই সংগঠনের একজন সিনিয়র সদস্য।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শারমীন রিনভী। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, রোজিনার বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকরা তথ্য চুরি করেন না, তথ্য সংগ্রহ করেন দেশ ও জাতির কল্যাণে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য। তথ্য প্রাপ্তি সাংবাদিকের অধিকার।

তারা বলেন, একটি স্বাধীন দেশে ঔপনিবেশিক আমলে বৃটিশদের প্রণয়ন করা শত বছরের পুরনো আইনকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে। এটি খুবই দুঃখজনক ও হতাশার বিষয়। তাছাড়া ওই আইন অনুসারে, তথ্য বা সরকারি নথি সংরক্ষণ করার কথা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

তারা যদি ওই তথ্য বা নথি প্রকাশ করে দেন তাহলে আইন অনুসারে তারা অপরাধী। কিন্তু সাংবাদিক ওই তথ্য বা নথি সংগ্রহ করলে তিনি কোনোভাবেই ওই আইনের আওতায় পড়বেন না।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বছরের পর বছর ধরে ব্যাপক দুর্নীতি, চুরি ও ডাকাতি হচ্ছে। রোজিনা ইসলাম এসব নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেন। তারা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রয়োজন। এটি ব্যাহত হলে আমলাসহ কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর হাতে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ জিম্মি হয়ে পড়বে। রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়বে অনিশ্চিত। দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও এর মাশুল দিতে হবে।

তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক দলটি এখন ক্ষমতায়। তাদের দেশপ্রেম সন্দেহাতীত। তাই তাদেরকে এই সিগন্যাল গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

সাংবাদিক নেতারা মনে করেন, দুর্নীতিবাজ আমলারা রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাশি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকী ছুঁড়ে দিয়েছেন। রোজিনাকে লাঞ্ছিত করা ও মামলার মাধ্যমে তাদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন, যাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার সাহস না পায়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন তারা। তারা বিশ্বাস করেন, রোজিনা ইসলামের ঘটনায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা আরো প্রত্যয়ী হবেন, রোজিনার প্রতি অন্যায়ের জবাব দেবেন বেশি বেশি অনুসন্ধানী রিপোর্ট করার মাধ্যমে।

রোজিনা ইসলামের ঘটনাকে সাংবাদিকতার মর্যাদা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অস্তিত্বের প্রতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তারা। আর যে কোনো মূল্য এই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী রোজিনা ইসলামের নামে মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, অফিসিয়াল সিক্রেটস আইন বাতিল করতে হবে। রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তিনি জানান।

সমাবেশে ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ইআরএফের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন, জাকারিয়া কাজল, মাঈনুদ্দিন আহমেদ ও সুলতান মাহমুদ বাদল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, শহীদুজ্জামান, সাজ্জাদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান, শরীয়তপুর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চঞ্চল, একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র বিজনেস এডিটর কাজী আজিজুল ইসলাম, ইআরএফ অর্থ সম্পাদক রেজাউল হক কৌশিক বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন