বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্বাস্থ্যে সমতা ফেরাতে কাজ করছে সরকার

বিআইডিএস’র ওয়েবিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, টিকা নিয়ে যে একটা কালো মেঘ আছে এটা বলতে দ্বিধা নেই। টিকা পাওয়া নিয়ে জনমনে একটা ভীতি ও শঙ্কা বিরাজ করছে। চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার চেষ্টা চলছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে সব বড় বড় হাসপাতাল শহরে অবস্থিত। চিকিৎসকেরাও শহরে অবস্থান করছেন। গ্রামের মানুষ চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা পান না। অথচ হওয়া উচিত ছিল ভিন্ন। সব হাসপাতাল হওয়ার কথা গ্রামে। তবে স্বাস্থ্যের এই যে অসমতা এখানে সমতা ফেরাতে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি। গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন ২০২১’ শিরোনামের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। গেস্ট অব অনার ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সিনিয়র অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ। প্যানেল আলোচক ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত ডিজি মীরজাদী সেব্রিনা খান ফ্লোরা, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, টিকা নিয়ে কিন্তু কালো মেঘ আকাশে আছে, সরছে না। এটা আমার নিজস্ব কথা, সরকারের কথা না। এর কতগুলো বাস্তব কারণও আছে। এটা দূর করতে হবে। যদিও সরকারের উচ্চ মহল আশ্বস্ত করেছে। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বলেছেন। আমাদের পুরোনো বন্ধু রাশিয়া থেকেও টিকা আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, টিকা একটা বিগ ম্যাটার। যদি হার্ড ইমিউনিটি করতে হয়, তবে সবাইকে টিকা দিতে হবে। না হলে হবে না। অনেকে সেকেন্ড ডোজ নিয়ে আনসার্টেইনেটিরির মধ্যে রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এক ডোজ টিকা নিলেও প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে, এটা কিছুটা হলেও ভালো কথা। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমার মনে হয় মুখ্য অস্ত্র আইসোলেশন। তবে জীবন ও জীবিকার প্রশ্নও রয়েছে। তাই এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো দেশ তাদের প্রয়োজনের তুলনায় তিন গুণ-চার গুণ বেশি টিকা স্টক করে রেখেছে। আর অন্যরা ১ শতাংশ টিকাও পাচ্ছে না। এটা ঠিক না।

স্বাস্থ্য খাত নিয়ে এম এ মান্নান বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘাটতি ছিল। স্বাস্থ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। এ খাতে বরাদ্দ কম ছিল, দেয়া হয়েছে। তবে টাকা দিয়ে হয় না। অনেকের টাকা খরচ করার সক্ষমতাও নেই। সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত টাকা দেয়া হয়েছে। এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দুটি প্রকল্পও রয়েছে। আমরা এগুলো দ্রুত অনুমোদন করে দিয়েছি। কিন্তু পরবর্তী কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, শিক্ষাকে সামাজিক মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। করোনা সংক্রমণের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বলা হচ্ছে এ সময়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা নেই। আবার অনেকের জন্য ইন্টারনেট খরচ বেশি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার বিষয়টি ভাবা দরকার।

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, করোনায় শিক্ষা খাতে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ক্রম বা রোটেশন করে কিংবা গ্রুপ করে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া উচিত। যদিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচির পলিসি উপদেষ্টা আনির চৌধুরী বলেন, এই সময়ে স্কুল–কলেজ খুলে দেওয়া জটিল বিষয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। তাই এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া ঠিক হবে না। ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া জরুরি। সেটি যেকোনো প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই হোক। সেটি হতে পারে ক্রম করে। অথবা গ্রুপ করে। অথবা এক দিন পরপর। তবে আনির চৌধুরী মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে অনেক দিক বিবেচনা করতে হয়। শ্রেণিকক্ষ ছোট। সেখানে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হবে। তখন করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে।

রেহমান সোবহান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে করোনার পরীক্ষা সবচেয়ে কম। যদি পরীক্ষার হার বাড়ানো হতো, তাহলে সংক্রমণের মাত্রা জানা যেত। তাঁর মতে, বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা অপর্যাপ্ত। তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সরকারও চায় বেশি পরীক্ষা হোক। করোনা পরীক্ষা সারা দেশে বাড়ানো হয়েছে। পরীক্ষা কম করানোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিধিনিষেধ নেই। সরকারের সেই সক্ষমতা আছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্কের বিকল্প নেই বলে মত দেন তিনি। আনির চৌধুরী বলেন, প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে কতজনের টেস্ট হচ্ছে এবং এতে কত পজিটিভ হচ্ছে, তা ট্র্যাক করা হচ্ছে। যারা একবার কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রতিরোধক্ষমতা কতটা তৈরি হচ্ছে বা কতজন আবারও আক্রান্ত হচ্ছেন, তাও ডেটা আকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিনায়ক সেন বলেন, ভারতের করোনা পরিস্থিতি যদি আমাদের দেশেও হয়, তাহলে কী হবে? আমাদের যদি আগস্টে বা তার আগে-পরে তৃতীয় ঢেউ আসে। তখন কী হবে? আমাদের স্বাস্থ্য খাতের কি সেই জরুরি মুহূর্ত মোকাবিলার সক্ষমতা রয়েছে? দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের কী হবে? আগামী ছয় মাসে আমাদের তিন কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। আমরা কি চাহিদামতো ভ্যাকসিন ইমপোর্ট করতে পারব? ভ্যাকসিন কোণ্ডপ্রোডাকশনে যেতে পারব? এসব প্রশ্ন থেকেই যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন