শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

২০০ বছরের পুরনো মসজিদের সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিল বিএসএফ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ৯:৪৬ এএম

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা রংপুরের কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাঁশজানি সীমান্তের শূন্য রেখায় ২০০ বছরের প্রাচীন মসজিদের সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশজানি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রামের সীমান্তে এই মসজিদের অবস্থান। আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ৯৭৮-এর ৯ এস সাব-পিলার এই দুই গ্রামকে বিভাজন করেছে। এই পিলারের দক্ষিণ দিকে ২০ মিটার দূরত্বে জিরো লাইন ঘেঁষে বাংলাদেশের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে মসজিদটির অবস্থান। দুই সীমান্তের শূন্য রেখায় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নির্মিত মসজিদের নাম ‘ঝাকুয়াটারী সীমান্ত জামে মসজিদ’। যুগের পর যুগ এই মসজিদে কোন রকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই দু'দেশের দুই গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নামাজ আদায় করে আসছেন। তাদের সম্মিলিত উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল মসজিদের পাকা ভবন নির্মাণ কাজ।
দুই গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় ১৬ শতাংশ জমিতে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ১৮২০ সালে। ভারত বিভক্ত হওয়ার পরও মসজিদটিকে ঘিরে দু'দেশের এই দুই গ্রামের মানুষ একই সমাজভূক্ত হয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন মসজিদের ইমাম আবু বকর সিদ্দিক। তিনি আরও জানান, এই মসজিদে ৪৪ বছর ধরে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে দুই গ্রামের মানুষ বাঁধা-বিঘ্ন ছাড়াই এখানে এসে নামাজ আদায় করছেন। কোনো পক্ষ থেকে কোনোদিন বাধা দেওয়া হয়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি মসজিদ কমিটি প্রাচীন এই মসজিদটির সংস্কারকাজ শুরু করলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কাজে বাধা দেয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষের এক মসজিদের নির্মাণকাজ।
কুড়িগ্রাম-২২ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ১৮২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারত-বাংলাদেশ দুই বাংলার দক্ষিণ বাঁশজানি-ঝাকুয়াটারী জামে মসজিদ। দেশভাগ হলে মসজিদটি বাংলাদেশ অংশে, সীমান্তের শূন্য রেখায় পড়ে। কিন্তু সীমানার বিভাজন দুই দেশের মুসল্লিদের বিভক্ত করতে পারেনি। তারা একসঙ্গে নামাজ আদায় করে থাকেন। এখানে ভারতীয় অংশটি কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে থাকায় অবাধ যাতায়াত রয়েছে। দুই দেশের মুসল্লিদের সেতু বন্ধন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি।
দু শ বছরের পুরোনো মসজিদটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ হওয়ায়, মসজিদ কমিটি ও দুই দেশের মানুষ চাঁদা দিয়ে একটি পাকা মসজিদ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের মসজিদটির নতুন ভবনের বেশ কিছু কাজও এগিয়ে যায়। সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডের ১৫০ গজের ভেতরে পাকা স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে বিধিনিষেধ ও নিয়মের কথা বলে মসজিদ নির্মাণে বাধা দেয় বিএসএফ।
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি কফিলুর রহমান বলেন, দুই দেশের মুসল্লিদের দাবি আইনি জটিলতা কাটিয়ে ঐতিহাসিক এই মসজিদটির একটি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে ২শ বছরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য অনুমতি দেয়া হোক।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এরফান আলি বলেন, “গত ২১ মে (শুক্রবার) কুড়িগ্রাম-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আছলাম হোসেন মসজিদটি পরিদর্শনে আসেন। আমরা এমপি মহোদয়সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মসজিদ নির্মাণে বিএসএফের বাধার বিষয়টি জানিয়েছি। তারা দ্রুত বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।”
কুড়িগ্রাম-২২ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, “ওই স্থানটিতে ঐতিহ্যবাহী পুরাতন একটি মসজিদ রয়েছে। দীর্ঘ দিন থেকে দুদেশের মুসলমানরা একত্রিত হয়ে নামাজ আদায় করে আসছে। মসজিদটির ভবন নির্মাণে বিএসএফ আপত্তি জানিয়েছে। আমরা খুব দ্রুত এর প্রতিউত্তর পাঠাবো ঐতিহাসিক এই পুরনো মসজিদটি নির্মাণে যেন তারা বাধা না দেয়।”

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন