বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দম নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় যশ

দীর্ঘক্ষণ স্থিরাবস্থায় রয়েছে : শক্তিশালী হচ্ছে নাকি হারাচ্ছে? বাংলাদেশ উপকূলের ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে : আসছে বুধবার : বন্দরে ২ নম্বর সঙ্কেত

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ১২:৪১ পিএম | আপডেট : ৬:০২ পিএম, ২৪ মে, ২০২১

পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় 'যশ' বা 'ইয়াস' (Yaas) কার্যত একই স্থানে স্থির রয়েছে। আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় স্থির অবস্থায় থেকে যশ শক্তিশালী হচ্ছে? নাকি শক্তি হারাচ্ছে? এটি স্থির অবস্থায় দম নিচ্ছে। শক্তি সঞ্চয় করছে।
আবহাওয়াবিদগণ যশের পরবর্তী মতিগতি সতর্ক পর্যবেক্ষণ করছেন।
ঘূর্ণিঝড়টি এখনও বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল থেকে ৬০০ থেকে ৬৭৫ কিলোমিটারের মধ্যে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহে আগের মতোই ২ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল আছে। আজ সকালে 'যশ' খুব দ্রুতই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে।
বিকেলে সর্বশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, অনুকূল আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এটি ২৬ মে বুধবার ভোর নাগাদ ভারতের উত্তর উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ এবং খুলনা উপকূলের কাছ দিয়ে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পৌঁছাতে পারে।
তবে 'যশ' কী আমফানের সমান শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হবে? সর্বশেষ গতবছর ২০ মে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় আমফানের সমান শক্তিশালী হবে কিনা তা এ মুহূর্তে ধারণা করা কঠিন। যদিও তেমন আলামত এখনো নেই।
আমফান আঘাত হানার সময়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার।
কিন্তু আমফান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমসহ খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের একাংশে প্রবেশ করার পর ঝড়ের গতিবেগ নেমে আসে সর্বোচ্চ ২০০ বা ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
কতটা শক্তিশালী হবে যশ?
পশ্চিমবঙ্গের আলীপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদগণসহ ভারতের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞগণ ঘূর্ণিঝড় যশ আমফানের সমান শক্তিশালী নাও হতে পারে বলে আপাতত ধারণা করছেন।
যশ যথেষ্ট বেশি সময় বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করেনি। তাই অধিক শক্তি সঞ্চয়েরও সময় পাচ্ছে না। দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে গেছে এবং ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে। এরফলে যশ আঘাতের সময়ে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
এ অবস্থায় যশের গতিবেগ ঘন্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
আজ দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি বিষয়ে এক সভায় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ঘূর্ণিঝড় যশ আমফানের মতো শক্তিশালী হচ্ছে না, তা অনেকটা নিশ্চিত। কাজেই বড় ঝুঁকির তেমন আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না
অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত হানার সময়ে পূর্বাভাসের তুলনায় ভিন্ন কিছুও ঘটাতে পারে। তাছাড়া ২৬ মে বুধবার রয়েছে ভরা পূর্ণিমার সম্ভাব্য একটা সক্রিয় প্রভাব। তার উপর চন্দ্রগ্রহণের সম্ভাব্য আরেকটা প্রভাবকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আজ সোমবার সকালে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে 'যশ' বা 'ইয়াস'। ওমানের ভাষায় এর অর্থ 'দুঃখ-হতাশা'। যশ উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে যেতে পারে এবং আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। যশ আগামী বুধবারের মধ্যে ভারতের উড়িষ্যা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের খুলনা উপকূলও অতিক্রম করতে পারে।
যশের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আজ দুপুরে আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় যশ কার্যত একই এলাকায় স্থির রয়েছে।
এর আগে রোববার এটি দিনে নিম্নচাপ এবং রাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। আর সকালে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।
ঘূর্ণিঝড় যশ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা এ চারটি সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ থেকে ৬০৫ কিলোমিটারের মধ্যে এবং দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থান করছিল।
যশ আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি.র মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে সর্বোচ্চ ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ভরা পূর্ণিমা ও চন্দ্রগ্রহণ
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ, আন্তর্জাতিক আবহাওয়া স্যাটেলাইট সংস্থা ও বিদেশি সংবাদমাধ্যম বলছে, গভীর নিম্নচাপ থেকে শক্তি সঞ্চয়কারী ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলের পর অথবা বুধবার দিনের মধ্যেই যদি আঘাত হানে, তাহলে পূর্ণিমার সক্রিয় প্রভাব থাকতে পারে।
তখন ‘যশ’ শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও রয়েছে। ‘যশ’ ভারতের ওডিশা (উড়িষ্যা)-পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার আশঙ্কা বেশিই। ভারতের উপকূল ও সুন্দরবন হয়ে খুলনায়ও আছড়ে পড়তে পারে। তাছাড়া যশ ঘুরে গেলে দেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে।
সবকিছু নির্ভর করছে ‘যশ’ এর সম্ভাব্য গতি-প্রকৃতির উপর।
এদিকে যশের প্রভাবে ভ্যাপসা গরম পড়ছে। সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। উপকূলীয় এলাকার জনগণের মাঝে যশের ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া এবং বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তাপমাত্রা গতকালের তুলনায় আজ কিছুটা কমেছে।
ঘূর্ণিঝড় যশের সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ব্যাপক সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানিয়েছে।
উপকূলীয় জেলা উপজেলা প্রশাসন আগাম প্রস্তুতি ও সতর্কতা গ্রহণ করছে। সমন্বয় সভা হচ্ছে প্রশাসনের উদ্যোগে।
সঙ্কেত বেড়ে চার নম্বরে যদি ওঠে তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Zubair ২৪ মে, ২০২১, ৩:০৫ পিএম says : 0
যশ আবার কোথায় পেলেন। ওমানের আবহাওয়াবিদেরা ঝড়টির নামকরণ করেছেন ইয়াস। যার অর্থ হতাশা। আর আপনারা লিখেছেন যশ যার মানে উদ্যোম।
Total Reply(0)
Mokhlesur Rahman ২৪ মে, ২০২১, ৪:২১ পিএম says : 0
Bangladesh e ashbe na , shudhu bristi hobe, r ektu jhor hobe Batash hoye chore jabe ektu sostir thanda , insaAllah. Allah pak hefajot kari .
Total Reply(0)
আকাশ ২৪ মে, ২০২১, ৪:২১ পিএম says : 0
আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুক
Total Reply(0)
হুমায়ূন কবির ২৪ মে, ২০২১, ৪:২১ পিএম says : 0
উপকূলবর্তী সকলকে সাবধানে থাকতে হবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন