শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তছনছ দিঘা, সেনা নামিয়ে উদ্ধারকাজ

নিহত ৪, ৬৬ বাঁধে ভাঙন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ধাক্কায় ভারতের ‘সপ্নসুন্দরী’ খ্যাত দিঘা হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর। প্রবল গতিতে ধেয়ে আছড়ে পড়েছে অতি তীব্র এই ঘূর্ণিঝড়। যার ফলে সকাল থেকেই লন্ডভন্ড দিঘা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে দুজন মারা গেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভবন ধসে একজন মারা গেছেন। আরেকজন সমুদ্রে নিখোঁজ হয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, এর আগে মঙ্গলবার রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন দুজন।

সমুদ্রের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছে দিঘার বিস্তীর্ণ এলাকা। উত্তাল সমুদ্রের পানি গার্ডওয়াল টপকে ঢুকছে রাস্তায়। প্লাবিত মন্দারমনি, তাজপুরও। রাস্তা টপকে হোটেলেও ঢুকেছে পানি। ডুবে গিয়েছে সমুদ্র সংলগ্ন দোকানগুলিও। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা সম্পূর্ণ খালি করতে কোমরবেঁধে নেমেছে প্রশাসন। সেনা নামিয়ে চলছে উদ্ধারকাজ। দিঘার সমুদ্রের এমন ভয়াল রূপ আগে কখনও দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বোল্ডার টপকে রাস্তায় চলে আসছে ঢেউ। তীব্র গতিতে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে অবিরাম বৃষ্টি। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ গার্ডওয়াল টপকে দিঘা শহরে পানি ঢুকতে শুরু করে। কার্যত পানির তলায় আশপাশের দোকানগুলো ভেসে যায়। ডুবে যায় রাস্তার উপর দাঁড় করানো মোটরবাইক, গাড়ি। আগেই দিঘা ও আশপাশের এলাকা থেকে বাসিন্দা ও স্থানীয় হোটেল থেকে সমস্ত কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে রামনগর ২ নম্বর ব্লকের সতিলাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১১৬-বি জাতীয় সড়কে গাছ উপড়ে বিপত্তি। দ্রুত এলাকায় পৌঁছে গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করে এনডিআরএফ। মন্দারমণিতে বীভৎস প্রভাব দেখায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আশপাশের অধিকাংশ হোটেলগুলিতে পানি ঢুকে যায়। রাস্তা টপকে গ্রামগুলোতেও পানি ঢুকতে শুরু করে। প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যায় বেশ কিছু বাড়ির চাল। ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক দোকান-বাড়ি। ল্যান্ডফলের পরই সেনা নামে এলাকা। দোকানমালিকদের জিনিসপত্র উদ্ধারে সাহায্য করতে দেখা যায় তাদের।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব হলদিয়াতেও। হলদি নদীতে জলোচ্ছ্বাসের জেরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে। বাঁধ ভেঙে নদী তীরবর্তী এলাকায় জল ঢোকার আশঙ্কায় দোকানের শাটার বেঁধে রাখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, উপকূলবর্তী এলাকায় ৭০ কিলোমিটার নদীবাধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বহু বাঁধ ভেঙেছে। নন্দীগ্রামেও পানি ঢুকে গিয়েছে। এই পরিস্থিতেও দিশা না হারিয়ে শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামলানোর বার্তা দিয়েছেন তিনি। বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে।
এদিকে, ভারতের ওডিশা রাজ্যের উত্তরের উপকূলে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ইয়াসের ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬৬ টি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৫টি বাঁধ ভেঙেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে এবিপি আনন্দ। জানা গেছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ১১ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও মানুষকে নিয়ে আসা হবে। তিন লাখ কর্মী ইয়াসের মোকাবিলায় নেমেছেন। নবান্ন থেকে পরিস্থিতির দিকে নজরদারি চালানো হচ্ছে। সারারাত নবান্নেই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি নবান্নেই থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। সূত্র : টিওআই, এবিপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন