সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

দুদকে কীভাবে মামলা করতে হবে

সিরাজ প্রামাণিক | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২১, ১২:০৪ এএম

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩ (২) ধারায় পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে যে, দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন ও পক্ষপাতমুক্ত প্রতিষ্ঠান। কাজেই দুদক যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করে এবং তা পরিচালনার কাজ এগিয়ে নিতে থাকে, তাহলে সেই মামলা প্রত্যাহার করার কিংবা প্রত্যাহারের সুপারিশ করার কোনো এখতিয়ার সরকারের নেই। স¤প্রতি চালু হওয়া ১০৬ নম্বরে (টোল ফ্রি কল) ফোন করে দুর্নীতি, অনিয়মের যেকোনো তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনে জানাতে পারবেন। অথবা এসব বিষয়ে ডাকযোগে দুদকের ঠিকানায় পাঠাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত কি-না।

যিনি অভিযোগ করেছেন, তার পরিচয়, নাম-ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর যথার্থ কি-না। সেটা যাচাইয়ের পাশাপাশি অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ কি না-তাও দেখা হয়। শত্রæতা অযথা হয়রানির উদ্দেশে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে কি না- সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হয়। পরে দেখা হয়, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তার দপ্তর, দাপ্তরিক মর্যাদা, বর্ণিত অপরাধ করার ক্ষমতা ও সুযোগ আছে কি-না। আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, অভিযোগটি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ ও দুর্নীতি দমন বিধিমালা-২০০৭ মোতাবেক কাজ শেষে আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা যাবে কি না, প্রমাণে কী পরিমাণ অর্থ, শ্রম, মেধা, সময় ও উপকরণ প্রয়োজন হবে।

দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে রয়েছে সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বা উপঢৌকন নেওয়া। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি বেআইনিভাবে নিজ নামে কিংবা বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মচারী যদি সরকারি অর্থ বা সম্পত্তি আত্মসাৎ কিংবা ক্ষতি সাধন করেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি অনুমতি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন তবে দুর্নীতি হিসেবে গণ্য হবে। দুর্নীতি ও ঘুষ থেকে উদ্ভূত অর্থ পাচারও অপরাধ। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী যদি প্রতারণা জাল-জালিয়াতি ইত্যাদি কাজ করে তবে তাও অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ দাবি করলে ঘুষ দেওয়ার আগেই তথ্যটি দুদকের প্রধান কার্যালয় অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণকারীকে ফাঁদ পেতে হাতেনাতে ধরার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে অভিযোগে যে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকতে হয় তার মধ্যে অন্যতম, কোনো ব্যক্তি অবৈধ অর্থ ও সম্পদ অর্জন করে থাকলে তাঁর নাম, পদবি-পেশা ও পূর্ণ ঠিকানা দিতে হবে। একইসঙ্গে স্থাবর সম্পদের (বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি ইত্যাদি) অবস্থান, পরিমাণ, আনুমানিক দামসহ ওই সব সম্পদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংক হিসাব, শেয়ার, এফডিআর, সঞ্চয়পত্রের সুনির্দিষ্ট তথ্য, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ধরন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, ধরন ও সুনির্দিষ্ট ঠিকানা এবং বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন-সংক্রান্ত বিবরণ দিতে হবে। সরকারি কর্মচারী বা ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আত্মসাৎকৃত অর্থ-সম্পদের পরিমাণ ও সময়কাল, কোন দায়িত্ব থেকে, কখন, কীভাবে আত্মসাৎ করেছেন, ওই আত্মসাতের সঙ্গে আর কারা জড়িত থেকে সহযোগিতা করেছেন- তার বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে।

ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত ও অন্যান্য অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি কখন, কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাভবান হয়েছে বা অন্যকে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন বা রাষ্ট্রীয় অর্থসম্পদের ক্ষতি করেছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা-২০০৭ অনুযায়ী কমিশনে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের ও যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ বিধি অনুসরণ করে কমিশনে অভিযোগ গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য ‘অভিযোগ যাচাই-বাছাই সেল’ রয়েছে। কমিশনে সাধারণত ডাকযোগে, ই-মেইলে, হটলাইনে এবং জেলা ও বিভাগীয় অফিসগুলোতে থাকা অভিযোগ বাক্সে অভিযোগগুলো আসে। নাম-ঠিকানা থাকলে প্রত্যেকটি অভিযোগের প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়। পরে তারিখ ও ক্রমিক নম্বর দিয়ে অভিযোগগুলো দুদকের প্রধান কার্যালয়ের যাচাই-বাছাই সেলে পাঠানো হয়। এই সেল বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও উৎস থেকে কমিশনে আসা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে থাকে।

জেলা পর্যায়ে আবেদন লিখতে হলে এভাবে লিখুন: বরাবর, উপ-পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত কার্যালয়, কুষ্টিয়া। ১। অভিযোগকারীর নাম ও ঠিকানা, ২। অভিযোগ দাখিলের তারিখ, ৩। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তার নাম ও ঠিকানা, ৪। অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, ৫। সংক্ষুব্ধতার কারণ, ৬। প্রার্থিত প্রতিকার এবং তার যৌক্তিকতা ও ৭। অভিযোগে উল্লেখিত বক্তব্যের সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বর্ণনা (যদি থাকে)। এরপর সত্যপাঠে লিখুন যে, এই মর্মে প্রত্যায়ন করছি যে, এই অভিযোগে বর্ণিত অভিযোগসমূহ আমার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সত্য। তারিখ লিখুন। নিচে আবেদনকারীর নাম লিখে পাঠিয়ে দিন, সংশ্লিষ্ট ঠিকানায়।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Quazi Bashir Ahmed ২৭ মে, ২০২১, ৬:৫৬ পিএম says : 0
Awesome article as many people will get guidance for submitting complaint at Dudok.
Total Reply(0)
shanaz zaman ৬ নভেম্বর, ২০২১, ২:৩৭ এএম says : 0
কোনও ডেভেলপার কোম্পানীর বিরুদ্ধে কি দুদকে মামলা করা যায়?
Total Reply(0)
মো: মাহবুব আলম ১১ মে, ২০২২, ২:২৮ পিএম says : 0
দুদকে অভিযোগ ও মামলা দায়ের করতে অনলাইন পদ্ধতি চালু করলে জনসাধারন উপকৃত হবে। উল্লেখ্য যে, অনলাইনে থানায় জিডি করার পদ্ধতি এবং বিভিন্ন দপ্তরে অনলাইন পদ্ধতিতে অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ আছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন