শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি

মো. হুসাইন আহমদ | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২১, ১২:০৩ এএম

সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ পাক কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে রেখেছেন। পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে অনেক উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু এসব নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হবে না। যুগে যুগে তার এমন অমোঘ বিধি-বিধান এবং নির্দেশনাসমূহের বাস্তবায়ন লিপিবদ্ধ হয়ে আছে পৃথিবীর ইতিহাসে। যে কয়েকটি বিষয় আল্লাহ পাক নিজের জন্যও নিষিদ্ধ করে রেখেছেন- সেসবের মধ্যে সর্বপ্রথম বিষয়টি হচ্ছে, জুলম বা অন্যায়। জুলুম বা অন্যায় কাকে বলে; ভাষাবিদদের ঐক্যমতে কোনো বস্তুকে তার আসল স্থানে না রেখে অন্য স্থানে রাখার নাম হল জুলুম। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক আমাদের লক্ষ্য করে বলেছেন, হে আমার বান্দারা! আমি নিজেই আমার ক্ষেত্রে জুলম হারাম করে নিয়েছি ও এ বিষয়টিকে তোমাদের পরস্পরের জন্যও নিষিদ্ধ করে দিলাম। তোমরা একে অন্যের ওপর জুলম করো না। মুসলিম শরীফেই বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেছেন, তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাকো। কেননা কিয়ামতের দিন জুলুমের পরিণতি হবে খুবই অন্ধকার।
আজকের সমাজজীবন থেকে শুরু করে রাষ্টীয় ও বিশ্বজীবনে প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করলে দেখা যায়, একেবারে সাধারণ থেকে সাধারণ বিষয়ে একে অন্যের ওপর বিরাজমান জুলুম কিংবা শাসকের পক্ষ থেকে দেশের জনগোষ্ঠীর ওপর অবৈধভাবে শাসনক্ষমতা প্রয়োগের ভয়াবহতা। যা আল্লাহ পাকের কাছে এক অমার্জনীয় অপরাধ। আর এর কঠিন শাস্তি ও পরিণতির প্রতি সতর্ক করে রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা জুলম বা অন্যায় করা থেকে বিরত থাকো। এই জুলুম কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে। (মুসলিম)। তিনি অন্যায় থেকে এভাবে বিরত থাকার পাশাপাশি মজলুম ব্যক্তির প্রার্থনার শক্তি সম্পর্কেও সজাগ করেছেন আমাদের। রাসুল (সা.) বলেন, মজলুমের বদদুআ থেকে বেঁচে থাকো। যদিও সে কাফের হয়। কারণ তার দুআ সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। পৃথিবীতে আজ প্রতিনিয়ত কতো কতো জালেমের অন্যায়-অত্যাচার আর অবৈধ শক্তির ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত ও ভীত। কতো অসহায় মানুষ দু’হাত তুলে জালেমের ধ্বংস প্রার্থনা করছেন। অথচ এর প্রতিফলন তাৎক্ষণিক ঘটছে না। অশ্রæ শুকিয়ে আশার প্রদীপ নিভে যাচ্ছে। অথচ জালেমের জুলম অব্যাহত থেকে যাচ্ছে। এর রহস্য কী? কেন মহান স্রষ্টার এমন নিরবতা? হ্যা, উম্মতের এমন ব্যথাতুর কৌতূহলের জবাব দিয়েই আল্লাহর রাসুল (সা.) বলে গেছেন, আল্লাহ পাক জালিমকে ছাড় দিতে থাকেন- তারপর যখন ধরেন তখন আর তাকে কোনো সুযোগ দেন না। (বুখারী)।
রাসুল (সা.) এর এ হাদীসের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআনে বেশ কিছু আয়াতও রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, “জালেমরা যা করছে সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে উদাসীন ভেবো না, তিনি তাদের ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত যেদিন চোখগুলো সব আতঙ্কে বড় বড় হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম-৪৩)। কারো ওপর যে কোনো ধরনের অন্যায়-এর পেছনে যে ধরনের স্বার্থই থাকুক- চাই তা সামাজিক, রাজনৈতিক বা ইসলামের নামে হলেও তা মহান শক্তিমান আল্লাহ পাকের কাছে অন্যায় এবং অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। অন্যের ওপর অন্যায় কিংবা জুলম এতোই নিন্দনীয় যে স্বয়ং জালেমও তার জন্য বিষয়টিকে মেনে নিতে পারে না। একজন ঘোরতর জালেমও অন্যের কাছে নিজের ক্ষেত্রে ন্যায়ের কামনা করে থাকে।
আল্লাহ পাকের কিছু অলঙ্ঘনীয় বিধানসমূহের একটি অন্যতম বিধান হলো-তিনি জালেম মুসলমানের বিপক্ষে মজলুম কাফেরকেও সাহায্য করেন। তবুও তিনি জালেমকে কোনো ছাড় দেন না। জুলুমের শাস্তি এতো ভয়াবহ ও দ্রæত যে দুনিয়া থেকেই এর সূচনা হয়। আখেরাতে এর পরিণতি কতো মারাত্মক ও ভয়াবহ তা স্বয়ং এক আল্লাহ পাকই জানেন। রাসুল (সা.) (সা.) এক হাদীসে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রোজ হাশরের মাঠে কোন জালেম শাসক রাসুল (সা.) এর সুপারিশ পাবে না।
তাই ক্ষমতার মসনদে সমাসীন ব্যক্তিবর্গ অস্ত্র কিংবা শক্তিবলে প্রজা অথবা জনসাধারণ, অসহায় মুসলমানদের ওপর যে কোনো অন্যায় বা অবৈধ কার্যকলাপ চাপিয়ে দিয়ে সমর্থকদের নিকট থেকে ক্ষণিকের হাততালি পেতে পারেন। কিন্তু চিরস্থায়ী পরকালের সূচনায় কাল কিয়ামতের মাঠে তারা বঞ্চিত হবেন সব ধরনের দয়া ও করুণা থেকে। একটি ছাগলও যদি অন্যায়ভাবে আরেকটি ছাগলকে শিং দিয়ে সামান্য আঘাত করে থাকে- পরম শক্তিমান সেদিন দু’টি ছাগলকেই জীবিত করে জুলুমের শিকার নির্বাক প্রাণীকেও সুযোগ করে দেবেন শিংধারী ছাগলকে আঘাত করে তার প্রতিশোধ নিতে। অবলা প্রাণীর বেলায় যদি এই হয় দেনা-পাওনার হিসাব। তাহলে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ক্ষেত্রে জালেম-মজলুমের হিসাব নিকাশ কতোটা নিখুঁত ও ভয়াবহ হবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই আজ যারা পৃথিবীর বুকে অন্যায়ভাবে জুলুম নির্যাতন, গুম, হত্যা করছে, তারা এর ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হবেই। অতঃপর যুগ যুগান্তরের অসহায় নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষগুলোর জন্য এই অভয় বাণীই সবচেয়ে বড় সান্তনা ও বেঁচে থাকার প্রেরণা যে, আল্লাহ পাকের সাহায্য সদাসর্বদা মজলুমের সঙ্গে থাকে, তার সাহায্যও অতি সন্নিকটে। তাই হে জালেমগণ! এখনও সময় আছে, আল্লাহর বান্দাদের উপর জুলুম করা থেকে বিরত হও। আল্লাহর কাছে তাওবা করো। তোমাদের জন্য এখনও তাওবার দরজা খোলা আছে। তাওবা করলে তোমাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া হবে। হে আল্লাহ! আপনি মজলুমদের দুআ কবুল করুন। জালেমদের পতনকে তরান্বিত করুন এবং তাদেরকে হেদায়াত করুন। দুর্বল ও অসহায়দেরকে সাহায্য করুন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Billal Hosen ৩১ মে, ২০২১, ১০:৪৯ এএম says : 0
Sura Ibrahim, Ayat: 42- জালেমরা যা করছে সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে উদাসীন ভেবো না, তিনি তাদের ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত যেদিন চোখগুলো সব আতঙ্কে বড় বড় হয়ে যাবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন