মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

ভেজাল কসমেটিকস্ েসয়লাব খুলনার বাজার রয়েছে অনুমোদনবিহীন ফ্যাক্টরিও : দায়সারাগোছে অভিযান হয় বটে

প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : বিশ্বখ্যাত কোবরা, ইন্টার লাভ, ফাস্ট লাভ ও সিটি লেডিস্সহ নানা ব্রান্ডের সব পারফিউম কিনতে ছুটতে হবে না অভিজাত বিপণী বিতানে। অতি স্বল্পমূল্যে খুলনার বড় বাজার ও রেলওয়ে নতুন মার্কেটসহ খুলনাঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জেই পাওয়া যাচ্ছে সবকিছুই। দুনিয়া প্রসিদ্ধ সব ব্রান্ডের ক্রিম, শ্যাম্পু, তৈল, লোশন, পাউডারসহ প্রয়োজনীয় সব প্রসাধনী খুলনাতেই তৈরি হচ্ছে অনুমোদনহীন কারখানায়। মাঝে-মধ্যে দায়সারাগোছের দু/একটি অভিযান চলালেও ফ্যাক্টরি থেকে যায় অধরাই।
সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর বিকালে অভিযান চালিয়ে খুলনার রূপসা উপজেলা এলাকার আশিক কসমেটিকস্কে ১০ হাজার টাকা, জিহাদ স্টোরকে এক হাজার টাকা, ধানসিঁড়ি ফুডকে ৪০ হাজার টাকা এবং মুন কসমেটিকস্কে ৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। র‌্যাব-৬ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার যৌথভাবে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে নকল ও ভেজাল প্রসাধনী তৈরি ও বিক্রির অপরাধে খুলনার রূপসার আইচগাতী ইউনিয়নের সেনের বাজারের মুন কসমেটিকসকে এক লাখ টাকা জরিমানাসহ কর্মচারী আব্দুল কুদ্দুসকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদÐ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাতেও বন্ধ হয়নি তাদের অবৈধ ফ্যাক্টরি। গেল বছরের শেষের দিকের ওই অভিযানে প্রতিষ্ঠান থেকে সুইটি লাভ পারফিউমের খালি প্যাকেট ৫০০ পিচ, দিল্লি লাভ পারফিউমের খালি প্যাকেট ৩০০ পিচ, বাকুল পারফিউমের খালি প্যাকেট ৬০০ পিচ, জেসমিন পারফিউমের খালি প্যাকেট ২৫ পিচ, কোবরা পারফিউমের খালি প্যাকেট ৩০ পিচ, পিওর ম্যাজিক পাউডার ১০০ পিচ, পিওর ভ্যাসলিন (বড়) ৬ পিচ, পিওর ভ্যাসলিন (ছোট) ৩০ পিচ, পারফিউম তৈরির বোতল শতাধিক, ক্যামিকেল পাউডার ৪০০ গ্রাম ও ১০ লিটারের দু’টি সাদা ফাঁকা ড্রামসহ দেড় কোটি টাকা মূল্যের ভেজাল কসমেটিকস জব্দ করা হয়েছিল।
গ্রেফতারকৃত কর্মচারী আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছিলÑ পানি, ময়দা ও দেশীয় কেমিক্যাল ব্যবহার করে তৈরি করা হতো এসব পারফিউম ও কসমেটিক। এরপর দামি ব্রান্ডের মোড়কে প্যাকিং করে বাজারজাত করা হতো খুলনার বিভিন্ন স্থানে।
অভিযান পরিচালনাকারী খুলনা জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ফরিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, পানির সাথে বিভিন্ন দেশীয় কেমিক্যাল ও সুগন্ধী মিশিয়ে এসব পারফিউম তৈরি করা হতো। বিশ্বখ্যাত ব্রান্ড কোবরা, এভার সেক্স, ইন্টার লাভ, ফাস্ট লাভ, রোজা, দিল্লি, জেসমিন, পিওর, এক্সসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের পারফিউম এখানে পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্রান্ডের পাউডার, স্নো, বিভিন্ন ফেসপ্যাক, হেয়ার প্যাক, সুগন্ধী তেল, মাথা ঠাÐা রাখার তেল, বিভিন্ন প্রকার ফেসিয়াল এখানে পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গেল বছর ১৮ ফেব্রæয়ারি বটিয়াঘাটা উপজেলার কৈয়া বাজার এলাকায় ভেজালবিরোধী অভিজান পরিচালিত হয়। এ অভিযানে নিপা কসমেটিকসকে দুই হাজার টাকা, লিপি কসমেটিকসকে এক হাজার টাকা ও খায়রুল স্টোরকে ৫০০ টাকাসহ পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিন দেখা গেছে, খুলনার বড় বাজার, পিকচার প্যালেস মোড়ের আকতার চেম্বারের পিছনে ও রেলওয়ে নতুন মার্কেটসহ খুলনার বিভিন্ন শপিংমল ও দোকানে ভেজাল প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে।
ভেজাল শুধু শহরে নয়; প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারেই বাসা বেঁধেছে বলে অভিযোগ করে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) খুলনার সভাপতি সংবিধান প্রণেতা এ্যাড. এনায়েত আলী বললেন, ‘আজ তো ভেজালটাও নির্ভেজাল পাওয়া যায় না। ঘিয়ে ডালডা, আর ডালডায় পামওয়েল মেশানো হয়। প্রত্যেকটা পরিবারে প্রসাধনীর চাহিদা রয়েছে। আর তা যদি হয় ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যে তৈরি ভেজাল প্রসাধনী, তাহলে তো অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে ব্যবহারকারীর। মাঝে-মধ্যে দায়সারাগোছের অভিযান না চালিয়ে ভেজাল প্রসাধনী নির্মূল করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। নির্ভেজাল পণ্য ক্রয় প্রতিটা নাগরিকের অধিকারও বটে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, জনবল ও যানবাহন সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সেখ আখতারুজ্জামান বলেন, নি¤œমানের ও ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হতে পারে। অল্প সময়ে ক্ষতি চোখে দেখা না গেলেও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে ব্যবহারকারীর ব্যবহৃত স্থানে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিও হতে পারে।
বাজারে ক্ষতিকর মেহেদি টিউব : ঈদ উপলক্ষে খুলনার বাজারে এখন বিভিন্ন নামের মেহেদি টিউব পাওয়া যাচ্ছে। সূত্রে জানা গেছে- কড়ই পাতার গুঁড়ায় রং এবং এসিড মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ক্ষতিকর ও বিষাক্ত নকল মেহেদি। দেশে তৈরি হলেও বিক্রি বাড়াতে মোড়কে কারখানা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশের তৈরি পণ্য লিখে রেখেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, মেহেদি ব্যবহারকারীদের কারও হাতের চামড়ায় ফোসকা, কারও জ্বালাপোড়া আবার কারও অ্যালার্জি হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন