মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে জুমা খুৎবা পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২১, ৪:৪৪ পিএম

পবিত্র কোরআনে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিপদাপদকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করতে হবে। আমাদের যবানকে জিকিরের মাধ্যমে সতেজ রাখতে হবে। জিকিরের মাধ্যমে মিজানের পাল্লা অর্ধেক ভরে যায়। বিভিন্ন মসজিদে জুমার পূর্বে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরীর মসজিদগুলোতে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। অধিকাংশ মসজিদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

ঢাকা বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারী খতিব প্রফেসর ড. মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার খুৎবা পূর্বে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, পানিবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। গত বিশ বছরে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, প্লাবন, পাহাড়ধসসহ বড় ধরণের অন্তত ১৮৫টি দুর্যোগ বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে। এসব দুর্যোগে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। অতিসম্প্রতি দেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বসত বাড়ি, ফসলের মাঠ, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে।

খতিব বলেন, পবিত্র কোরআনে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মানুষের কর্মের ফল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, পানিতে স্থলে যে বিপর্যয় তা মানুষের কৃতকর্মের ফল। যাতে তাদের কোনো কোনো কৃতকর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা আল্লাহর পথে ফিরে আসে। (সূরা রুম, আয়াত নং-৪১-৪২) মানুষ প্রতিনিয়তই পরিবেশ দূষণ, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে চলেছে। যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম প্রধান কারণ। ইসলাম মানুষকে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে, বৃক্ষরোপন করতে, পরিবেশ দূষণকারী বিষয় থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে, যা দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু উন্নত-অনুন্নত কোনো দেশেকেই এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে দেখা যাচ্ছে না। মানুষের সীমাহীন পাপাচার, অন্যায় আচরণও দুর্যোগের অন্যতম কারণ। অতীতে হুদ (আ.)-এর কওম, লুত (আ.)-এর কওমসহ অসংখ্য জাতিকে পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

খতিব আরো বলেন, পবিত্র কোরআনে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিপদাপদকে মহান আল্লহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা বিপদ-মুসিবতের সময় বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা বাকারা, আয়াত নং-১৫৫-৫৭) প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোনো বালা-মুসিবতে ধৈর্যহারা না হয়ে মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা প্রতিটি মুমিনের আবশ্যক কর্তব্য। পাপাচার দুর্যোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাই কৃত অপরাধের জন্য মহান আল্লাহর নিকট তাওবা-ইস্তিগফার করাও অত্যন্ত জরুরি। হাদীস শরিফে দুর্যোগ চলাকালে তাওবা-ইস্তিগফার করা, নিরাপত্তার জন্য মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (বুখারী, ২/৩০, মুসলিম, ২/৬২৮) বিপদ-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি বড় উপায় হচ্ছে নামাজ।

তিনি বলেন, হাদীস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, প্রচÐ ঝড়ো হাওয়া বইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে যেতেন এবং নামাজে মশগুল থাকতেন। (মিশকাত শরিফ, হাদীস নং-৬৯৬) সাহাবারাও বিপদে পতিত হলে ধৈর্য ধারণ করতেন, নামাজ আদায় করতেন। দান-সাদকা করার মাধ্যমেও বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সাদাকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে। (তিরমিযী শরিফ, হাদীস নং-৬০০)

মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন যাবতীয় কর্মকান্ড থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থণা করতে হবে। মহান আল্লাহন আমাদের গুনাহ মাফ করুন। যাবতীয় বিপদাপদ থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আমীন!

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার বয়ানে বলেন, হাদীস শরিফে ইরশাদ হয়েছে নবী (সা.) বলেছেন,আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমার সঙ্গে যে আত্মীয়তার সর্ম্পক ছিন্ন করেছে, তুমি তার সাথে তা বজায় রাখো, তোমাকে যে বঞ্চিত করেছে, তুমি তাকে প্রদান করো এবং যে তোমার প্রতি অন্যায়াচরণ করেছে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও।
পেশ ইমাম বলেন, অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, হে লোকসকল! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, আহার করাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন রাতের বেলা নামাজ পড়ো। শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করো। হযরত আলী (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় যে তার আয়ু দীর্ঘ হোক, জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং অপমৃত্যু থেকে রক্ষা পাক, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা সংরক্ষণ করে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে এবং তার মেহমানকে সম্মান দেখায় তার প্রাপ্যের বিষয়ে। অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, তোমার উপর মেহমানের হক আছে এবং তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। বুখারী, হাদীস ১৯৭৫।

পবিত্র কোরআনে ইশাদ হয়েছে, নিজেদের অভাব থাকা সত্তে¡ও তারা অন্যকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়। নিজ মনের কার্পণ্য থেকে যারা বেঁচে রইল তারাই তো সফলকাম। (সূরা হাশর (৫৯) : ৯)। ইসলাম আমাদেরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং অতিথিসেবা শিক্ষা দেয়। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন!
মিরপুরের বাইতুল আমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, শাওয়াল মাসের ফজিলতপূর্ণ ছয় রোজা যারা এখনও রাখেনি, দ্রæত ছয় রোজা রাখুন। খতিব বলেন, রমজান আমাদের থেকে চলে যাওয়ার অর্থ এটা নয়, যে আমলগুলো রমজানে করতাম সেগুলো ছেড়ে দেব। বরং ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি শরীরের যে অঙ্গগুলো দ্বারা অতিমাত্রায় গোনাহ হয়, সেগুলো যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এমন একটা অঙ্গ ও দামি সম্পদ হচ্ছে যবান। এর সঠিক ব্যবহার করা চাই। মহান আল্লাহ তায়ালা মস্তিষ্ক ও যবানের মধ্যে অটোমেটিক সূ² কানেকশন তৈরি করে রেখেছেন। মস্তিষ্ক যখন ইচ্ছা করে যবান কথা বলুক, যবান বলতে শুরু করে। কথা বলার এ যন্ত্র পরিচালনার দায়িত্ব যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিতেন তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। কেননা কোন শব্দ যবান কীভাবে ঘুরালে উচ্চারিত হবে এটা শিখতেই বনী আদম হাঁপিয়ে উঠত। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তা করেননি। জন্মগতভাবেই আমাদের মধ্যে কুদরতের কারিশমা দিয়ে বাকশক্তির অমূল্য গুণ রেখেছেন। যা দ্বারা আমরা অবলীলায় বলেই যাচ্ছি।

খতিব বলেন, একজন জাহান্নামি কাফের যবান দিয়ে কালিমা উচ্চারণ করে মুসলমান হলে সঙ্গে সঙ্গে তার জীবনের সব গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়। আল্লাহর অভিসম্পাতে অভিশপ্ত এ ব্যক্তি যবানের কারণেই রহমতপ্রাপ্ত জান্নাতি বান্দাদের তালিকাভূক্ত হয়। আমাদের যবানকে জিকিরের মাধ্যমে সতেজ রাখতে হবে। হাদিসে এসেছে, কোনো ঈমানদার যখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে এর দ্বারা মিজানের পাল্লা অর্ধেক ভরে যায়। বুখারি শরিফের শেষ হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, দুটি কালিমা যা দয়াময় আল্লাহর নিকট খুব প্রিয়! উচ্চারণে অতি সহজ তবে মিজানের পাল্লায় অধিক ভারি, তা হলো ‘সুবহানাল্লাহি ওবি হামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ অনুরূপভাবে যবান দ্বারা বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও দ্বীনি জ্ঞান চর্চা করা চাই। সুনান ইবনে মাজায় রয়েছে রাসুল (সা.) বলেন, অনেক মানুষ যবানের গুনাহের কারণে জাহান্নামে যাবে। (হাদিস ৩৯৭৩)। সুতরাং মিথ্যা, গিবত, চোগলখোরী, অশ্লীল কথাবার্তা ইত্যাদি অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যবান সংযত এবং নিয়ন্ত্রণ রাখা। কারণ যবান সংযত রাখার মধ্যেই রয়েছে ঈমানদারদের প্রকৃত সফলতা। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন!

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Dadhack ২৮ মে, ২০২১, ৯:৩১ পিএম says : 0
How come Allah's help will come to our country whereas our country is ruled by the Enemy of Allah.
Total Reply(0)
Alamin ২৮ মে, ২০২১, ১১:২০ পিএম says : 0
মাশাআল্লাহ। মুফতি আব্দুল্লাহ ফিরোজী সাহেব খুব চমৎকার বয়ান করেছেন।
Total Reply(0)
Alamin ২৮ মে, ২০২১, ১১:২০ পিএম says : 0
মাশাআল্লাহ। মুফতি আব্দুল্লাহ ফিরোজী সাহেব খুব চমৎকার বয়ান করেছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন