বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জীবন বাঁচানো ও ঝুঁকি মোকাবেলার বাজেট চায় বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২১, ৫:২৬ পিএম

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাততে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো ও ঝুঁকি মোকাবেলার বাজেট চায় বিএনপি। ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার পাঁচদিন আগে সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৪ দফা বাজেট ভাবনা তুলে ধরেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এবারের বাজেট হওয়া উচিত জীবন বাঁচানোর বাজেট, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি মোকাবেলার বাজেট। বাজেট হবে করোনাভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ ও অভিঘাত থেকে উত্তরণের বাজেট।

তিনি বলেন, বর্তমান বিরাজমান জটিল, সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো জীবন ও জীবিকার সমন্বয়ে সাধন করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা। বিএনপি এবারের বাজেটকে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট অর্থবছরেরর হিসাবের চেয়ে আগামী দিনের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট পথ-নির্দেশের যাত্রাবিন্দু হিসেবে দেখতে চায়। সেই লক্ষ্যে বিএনপি আগামী বাজেটকে ভবিষ্যতের অর্থনীতির নীতি কৌশল হিসেবে ‘সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ অর্থনীতি’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার হিসেবে দেখতে চায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী দিনে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী, সামাজিক নিরাপত্তাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের মাধ্যমে একটি কার্যকরী নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিনি বলেন, অনেকে মনে করে, করোনার ভয়াবহতা না কমলে গতানুগতি বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ৬ মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা। আবার অনেকে মনে করে, অর্থনীতির অস্বাভাবিক সংকোচনে প্রচলিত বাজেট ব্যবস্থা থেকে সরে এসে তিন বছর মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। বিদায়ী অর্থবছরে আমরাও এই দাবি করেছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, একটি দেশের অর্থনীতি তখনই সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব হয়ে উঠে যখন সেখানে সুশাসন ও জবাবদিহিমূলক সরকার জনগনের অবাধ নিরপেক্ষ ভোটের নির্বাচিত হয়। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরনের মূলমন্ত্র হচ্ছে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের সর্বোত্তম পন্থা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা যা বর্তমানে সম্পূর্ণ রুপে অনুপস্থিত।

২৪ দফা প্রস্তাবনা: অর্থনীতির সাবেক ছাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪ দফা বাজেট প্রস্তাবনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্ধের কথা তুলে ধরে বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে বাজেটের সর্বাধিক তালিকায় রাখতে হবে। চলমান বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধ ও করোনা চিকিৎসা দুইটিই সমানতালে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ, বৃত্তি প্রদান, প্রযুক্তি স¤প্রসারণ, কোভিডকালে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষায়তনে আর্থিক সহায়তা প্রদান, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়ন ও উচ্চ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে শিক্ষাখাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতের বহুমুখীকরণ, উৎপাদন, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, উদৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। কৃষিখাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্ধ করতে হবে।

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ২৮ পৃষ্ঠার বাজেট ভাবনায় কর্মহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য জিডিপির ৬-৭%, ‘দিন আনে দিন খান’ শ্রেনীর মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাসের প্রণোদনা প্রদান, নিরপেক্ষভাবে দুঃস্থ উপকারীভোগীর তালিকা প্রণয়ন করে ‘দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে সুরক্ষা সহায়তা প্যাকেজে’র আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

প্রস্তাবনায় কৃষি কমিশন গঠন, রপ্তানি বহুমুখীকরণে বিকল্প বাজারের অনুসন্ধান, টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় মহামারীর মতো সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ, জাতীয় স্বাস্থ্য কার্ড চালু, প্রত্যেক জেলায় ডেডিকেটেড সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, করোনাকালে জেলা হাসপাতালগুলোতে করোনা বেড, আইডিইউর সংখ্যা বৃদ্ধি, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস্য থেকে বিদেশি অনুদান বাড়ানোর কথা বলা হয়।

ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল বাজেট প্রস্তাবনায় শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি ‘অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

মেগা প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতির সব কাহিনী আপনারা সবাই জানেন। দেখা গেছে যে, সরকার সাধারণ মানুষের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চেয়ে মেগা প্রকল্পের গ্রহনেই বেশি আগ্রহী। পদ্মাসেতু, রূপুপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে কিভাবে অর্থ বরাদ্দের নামে মহাদুর্নীতি করা হয়েছে তাও তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব।

কালো টাকা সাদা করার সরকারি নীতির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আসছে বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যত অপ্রদর্শিত আয় থাকবে, তত দিন এই সুযোগ থাকবে। হরিলুট করে সঞ্চিত কালো টাকা জায়েজ করার দরজা অবারিত করে দিলেন অর্থমন্ত্রী যা অনৈতিক এবং ন্যায় নীতি মেনে আইন পালনকারী নাগরিকদের প্রতি অবিচার। কোভিডকালীন সময়ে এতো কালো টাকা কারা আয় করেছে জাতি জানতে চায়? যদিও এরই মধ্যে সরকার দলীয় ও তাদের মদদপুষ্ট অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে পড়েছে। অপ্রর্দশিত আয়ের একটি বিরাট অংশ মানিলন্ডারিং হয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদন অনযায়ী দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে। বছরে প্রায় লাখ কোটি টাকার অধিক পাচার হয়। প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ। যে পরিমান অর্থ পাচার হয়েছে তা দিয়ে চারটি পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্ভব হতো। ব্যাংকিখাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও হরিলুটে ‘ঋণখেলাপীর চিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ঋণ খেলাপীদের কবল থেকে দেশকে ও অর্থনীতকে মুক্ত করতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলা হলেও তাদের আবার বিপুল ঋণ রাইট অব করে দেয়া হচ্ছে। অর্থ্যাৎ ঋণ খেলাপী ও ব্যাংক মালিকদের অনৈতিক সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রিয়াজ উদ্দিন নসু, আবদুস সালাম আজাদ, এবিএম আবদুস সাত্তার শায়রুল করিব খান উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ+দুলাল+মিয়া ২৮ মে, ২০২১, ৮:০৫ পিএম says : 0
এই মুহূর্তে আমাদের তিন টি বাজেট হবে জরুরি, এই তিনটি বাজেটের যে সিদ্ধান্ত মাননীয় মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব নিয়েছে সত্যি উনাকে কি দিয়ে ধন্যবাদ জানাবে,উনার মতো জ্ঞানী ব্যক্তির যদি এই দেশের শাসক হতেন ,সত্যি সোনার বাংলা আজ যে দিক তাকাইতাম সেই দিকেই আলো দেখতে পেতাম,কিন্তু আমাদের জনগণের ভাগ্যে হইতেছেনা ,দেশ ও দেশের জনগনকে জোর করে তাদের পছন্দসই রাষ্ট্র শাসন থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে ,এক দল সন্ত্রাসী এরা জনগণের অধিকার নিয়ে এদের ইচ্ছে মতো যাই ইচ্ছে তাই করতেছে,জনগণ কিছু বলতে চাইলে তাহারা তাদের পালিত,সন্ত্রাসী পুলিশ হইতে শুরু করে অন্যান্য সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে জনগণের অধিকার জনগণের ভোটের অধিকার বাঁচার অধিকার সব কিছু দলীয় ভাবে লুঠ পাঠ করে খাইতেছে,এই অত্যাচারীদের হাত থেকে কি করে দেশ এবং দেশের মানুষ কে উদ্ধার করা যায়,সেই বিষয়ে জনগণ চিন্তিত,সন্ত্রাসের হাতে ঘুম খুন দর্শন হত্যা অত্যাচার অবিচার ছাড়া কিছুই নেই ,রাস্তায় বাহির হবেন আপনি খুন হবেন অথবা ঘুম ,এই ভাবে একটি সাধীন রাষ্ট্রের জনগণ কি করে সাধীন বলবে,এই যে বাজেট বর্তমানে দেশের এবং বিশ্বের যে অবস্থা। এই তিন বাজেট জরুরি ,আপাতত অন্য কিছু করার দরকার নেই। রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাবে উন্নয়ন শীল দেশের তালিকায় আসতে হবে,এই গুলি বলে বাজেট করে লুঠ পাঠ করে খাবে,অন্য বাজেটের এখন পয়োজন নেই,এই তিন বাজেট করা হউক,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন