শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চালের মজুদ নিয়ে শঙ্কা

ভারত-মিয়ানমার থেকে আসছে না আমদানির চাল : অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বেশি চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

চালের বর্তমান মজুদ বলা যায় একেবারে তলানিতে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যেখানে কমপক্ষে ১০ লাখ টন থাকা উচিত, সেখানে বর্তমানে মজুদ আছে পাঁচ লাখ টনেরও কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারির এই সময় তা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক নয়। চালের মজুদ বাড়াতে সরকার ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানির যে উদ্যোগ নিয়েছিল নানা সমস্যা ও জটিলতায় তা এখন আসছে না। এ পর্যন্ত সরকারের আমদানি করা যে পরিমাণ চাল দেশে এসেছে, তা আমদানি লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক। বাকি অর্ধেকের কতটুকু আমদানি সম্ভব হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। এর মধ্যে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও ভারতে করোনা ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রকোপ বড় সমস্যা তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে বিদেশ থেকে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায়, সরকারিভাবে আমদানির মাধ্যমে মজুদ বাড়ানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর তিন লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু পরবর্তীতে বাজারে চালের দাম আরো বৃদ্ধি এবং সরকারের মজুদ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যাওয়ায় কয়েক দফায় মোট ১৩ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হয়। এর মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া হয় সাড়ে ১০ লাখ টনের। জানা যায়, গত ২২ মে পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ২২৪ টন চাল দেশে এসেছে। কার্যাদেশ দেয়া সাড়ে ১০ লাখ টনের মধ্যে ভারতের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ৯ লাখ টন। এর মধ্যে এসেছে চার লাখ ৯৮ হাজার ৬০৯ টন। মিয়ানমারের এক লাখ টনের মধ্যে এসেছে মাত্র ২০ হাজার ৬১৫ টন। শুধুমাত্র ভিয়েতনাম থেকে চুক্তির ৫০ হাজার টন চালের শতভাগ এসেছে।
কার্যাদেশের চাল পাওয়া কেন এতটা সময় সাপেক্ষ হচ্ছেÑ এমন প্রশ্নে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, চালের জন্য চুক্তি হয়েছে তিন দেশে। এরমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে চাল পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। শতভাগ পেয়েছি। তবে সমস্যা হচ্ছে ভারত ও মিয়ানমারের চাল নিয়ে। ভারতকে সবচেয়ে বেশি চালের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। চাল এখনও পাচ্ছি। তবে করোনার কারণে আসা-যাওয়ার সমস্যায় কিছুটা বিঘ্ন হয়েছে।
ভারত থেকে চাল পরিবহনে সমস্যার কারণে চলতি মাসে প্রথমবারের মতো ট্রেনে করে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রেলপথে কলকাতা ও ছত্তিসগড় থেকে ট্রেন বোঝাই করে বেনাপোল ও দর্শনা হয়ে বাংলাদেশে এই চাল প্রবেশ করবে। রেলপথে এটিই হবে চালের প্রথম চালান। চাল আমদানির নানা জটিলতায় এর আগে গত কয়েক মাসে ভারত থেকে কয়েক দফায় চাল আমদানির বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় সরকার। তারপরেও অতি ধীরগতিতে আসছে চাল। কাটছে না অনিশ্চয়তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরমধ্যে দেশে চুক্তির পুরো চাল পাওয়া যাবে কি-না সেটা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অর্থনীতিবিদ ড. মোয়াজ্জেম হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে খাদ্য সঙ্কটে থাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারত থেকে চাল কেনার চেষ্টা করছে। এতেকরে ভারতে চালের চাহিদা এবং দাম বেড়ে গেছে। ফলে আমাদের চাল দেয়ার জন্য যারা আগে চুক্তি করেছিল, তারা আর ওই দামে চাল দিতে পারছে না। এছাড়া করোনামহামারির কারণে ভারতে জাহাজ ভাড়া ও অন্যান্য ট্রান্সপোর্ট খরচও অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে ভারত থেকে চুক্তির পুরো চাল পাওয়া এখন অনিশ্চিত। আবার মিয়ানমারেও একই অবস্থা। যতদূর জানা যায় সেখানের সামরিক সরকার এ বিষয়ে খুব একটা সহযোগিতা করছে না।
খাদ্যমন্ত্রণালয় মনে করছে, এখন আমদানির চাল না পেলেও কোনো সমস্যা হবে না। দেশে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বোরো থেকে যথেষ্ট পরিমাণে চাল তারা সংগ্রহ করতে পারবে। তবে অর্থনীতিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বেশি পরিমাণ চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা দেশের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
চলমান বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছে থেকে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান ও মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে গত বছর থেকে করোনা মহামারিতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিতরণ বাড়লেও সেই অনুযায়ী সরকার চাল সংগ্রহ করতে পারেনি।
গত আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ১০ ভাগও পূরণ হয়নি। আর বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় বোরো মৌসুমেও একদমই ধান-চাল কিনতে পারেনি। তাই এ বছর ধান-চাল সংগ্রহে গত বছরের মতো বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েই গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন