শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নাম ফুটাতে এমপি প্রার্থীর ছড়াছড়ি

ঢাকা-১৪ আসন

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজধানীর ঢাকার টাকার খনি ঢাকা-১৪ আসনের উপ-নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এমপি প্রার্থীর ছড়াছড়ি। প্রায় ৭০ জন ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। রাজধানীর এই আসনটিতে দিনে প্রায় ২ কোটি টাকা চাঁদা উঠে। এই চাঁদার নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখতে ও ভাগবাটোয়ারায় অংশ নিতে এবং আধিপত্য বিস্তারে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন, নামবিহীন বহু প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে পুরো এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন করেছেন। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের ভুয়া পদবি ব্যবহার করে ফেস্টুন করেছেন। এমনও প্রার্থী রয়েছে যাদেরকে বিগত নির্বাচনের এমপি প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মীরা চিনেনই না, এলাকাবাসীও নাম শোনেনি। নাম সর্বস্ব ব্যক্তি ও প্রায় ৭০ জন প্রার্থীর প্রচারণায় বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন আসনের শক্তিশালী ও বিগত নির্বাচনগুলোতে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত দুইটি নির্বাচনে আসলামুল হকের বিপক্ষে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন চার-পাঁচ জন। কিন্তু আসলামুক হক মারা যাবার পর প্রায় ৭০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পোস্টার লাগিয়েছেন। একবছর আগে কাউন্সিলর হয়েছেন তিনিও এমপি প্রার্থী হয়ে ফেস্টুন লাগিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন দুই কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। মাদক, গুরুরহাট, গাবতলী বাস-টার্মিনাল মিরপুর শাহ আলী মাজার, মাজারের সামনে ও পশ্চিমপাশে বেড়িবাঁধ ঘেঁষে গড়ে তোলা কাঁচামালের আড়ত, বুড়িগঙ্গা তীরের কয়লাঘাট, পাথরঘাট, সিমেন্টঘাট, বালুঘাট ও সারঘাট; শাহ আলী মাজারের বিপণিবিতান, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, গাবতলী পশুরহাট, একাধিক বাসস্ট্যান্ড, ট্রাক টার্মিনাল, ট্যাম্পোস্ট্যান্ড ও ফুটপাতের দোকান, বড় বড় শপিংমল, মাদক ব্যবসা, বোটানিক্যাল গার্ডেন-মিরপুর চিড়িয়াখানার ইজারা প্রভৃতির দখল ও আধিপত্য ঠিক রাখতে এসবের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সবাই এমপি প্রার্থী হয়েছেন।
গত ১৪ এপ্রিল আসলামুল হকের মৃত্যুর পর চাঁদা আদায়কারী নেতারা হঠাৎ বদলে গেছেন। আসলাম পরিবারকে দেওয়ার বদলে নিজেরাই এখন চাঁদার শতভাগ নিচ্ছেন। বর্তমানে এমন গ্রুপের সংখ্যা ছয়টি। আবার এত দিনে যারা আসলামবিরোধী ছিলেন, চাঁদার বাণিজ্য দখলে নিতে মাঠে নেমেছেন তারাও। চারটি এই ধরনের গ্রুপ এখন মাঠে সক্রিয়। অন্যদিকে চাঁদা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া করতে রাজি নয় আসলাম পরিবার।
ঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, প্রয়াত আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, এ বি এম মাজহারুল আনাম, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও ঢাকা মাহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির ফেস্টুন-পোস্টারও দেখা গেছে। তারা নিজেরা এ বিষয়ে সরাসরি কথা না বললেও নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এমপি প্রার্থী হবার বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসএম মান্নান কচি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আর মাইনুল হোসেন নিখিল ঢাকা-১৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ঢাকা ১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার ভাই এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ্ মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনিও ঢাকা-১৬ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
এছাড়া আরো প্রার্থীরা হলেন, শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টু, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফ উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে সাবেক কাউন্সিলর ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. এম সাইফুল আলম, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী আজাদুল কবির, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরিন রোকসানা, ফুওয়াং ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিআইপি ড. আরিফ আহমেদ চৌধুরী, কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুম ও আবু তাহের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
ভুয়া পরিচয়ে পোস্টার ছাপিয়েছেন একজন। মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির পরিচয় ব্যবহার করে ডক্টর মাহ্মুদ এ কাদের নামে এক ব্যক্তি প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর নস্কর বলেছেন, এই নামে কোনো ব্যক্তি সংগঠনে নেই। এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রার্থীদের মধ্যে মূল আলোচনায় রয়েছেন কয়েকজন। এদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, অনেক প্রার্থী দেখা যাচ্ছে। কে নেতা, কে কর্মী, তা বোঝার কোনো উপায় নেই। এই এলাকায় ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমার রাজনীতি শুরু, এখনও দলের দায়িত্ব পালন করছি। দলের জন্য জেল খেটেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি। দলের কর্মী হিসেবে যতটুকু পারি জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। দলীয় প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি মনোনয়ন দেন, তাহলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
সাবিনা আক্তার তুহিন ইনকিলাবকে বলেন, দলের সুসময়ে-দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। এমপি থাকাকালীন এমপি হোস্টেলেও থাকিনি, এলাকার মানুষের সেবা করার জন্য নিজের বাসায় থেকেছি। করোনার মধ্যে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে কাজ করেছি। আশা করি দল মূল্যায়ন করবে।
এবিএম মাজহারুল আনাম ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মানুষের পাশে আছি। দলের মনোনয়ন পেলে জয়লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী ইনকিলাবকে বলেন, এই এলাকার গণমানুষের নেতা আসলামুল হকের সঙ্গে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছেন। তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চান। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে দলের প্রয়োজনে যেভাবে কাজ করেছেন, দল তার মূল্যায়ন করবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ঢাকার মিরপুর, শাহআলী ও দারুস সালাম থানা, রূপনগর থানার আংশিক এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-১৪ আসন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড এ আসনের অন্তর্ভুক্ত। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব এলাকা ঢাকা-১১ আসনভুক্ত ছিল। ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাস করে ঢাকা-১১ ভেঙে ঢাকা-১৪, ১৫ ও ১৬ আসন গঠন করা হয়। ওই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আসলামুল হক। প্রথমবার প্রার্থী হয়েই বিএনপির এস এ খালেককে পরাজিত করেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন