বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

গর্বের অশ্রু হয়ে ঝরলো আনন্দ

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : কারও বাবা দিন-মজুর, মা অস্বচ্ছল সংসার সামলাতে ব্যস্ত, কোন ফুটবলারের বাবা বাজারে ফেরী করে সবজি বিক্রি করেন। অভাবের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদেরকে। সেই খেটে খাওয়া মুখগুলোই পাঁচতারকা হোটেলের আলোয় উজ্জ্বল। আলোর রেশনাই যেন ঝিলিক দিয়ে বেরুচ্ছিলো তাদের চোখ দিয়েও। আনন্দ আর আবেগে কারো চোখ বেয়ে ঝরেছে আনন্দ অশ্রু, গর্বের অশ্রু। এর সবই সম্ভব হয়েছে তাদের ঘরের কন্যা শিশুটির কল্যাণে। তার মেয়েটি যে এএফসি বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৬ মহিলা দলের কৃতি ফুটবলার। তাইতো উচ্ছ্বসিত বাবা-মায়ের কন্ঠে ঝরলো গর্বের সুর- ‘আমরা গর্বিত আমাদের সন্তানদের নিয়ে। যারা ফুটবলে সাফল্য পেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’
গতকাল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) জমকালো এক অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেয় চ্যাম্পিয়ন অনুর্ধ্ব-১৬ জাতীয় মহিলা দলে টগবগে কিশোরীদের। যারা সদ্য সমাপ্ত এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত থেকে সেরার খেতাব জিতে জায়গা করে নিয়েছে আসরের চূড়ান্ত পর্বে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লাল-সবুজের কিশোরী ফুটবলারদের হাতে তুলে দেয়া হয় নগদ অর্থ পুরষ্কারও। আর এ পুরষ্কার তারা গ্রহণ করে বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে স্টেজে ওঠেই। এমন গর্বিত সন্তানের পিতা-মাতা হতে পেরে অভিভাবকরাও নিজেদের সম্মানিত বোধ করছেন। পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁয়ে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেমকন গ্রুপ, সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস ও ক্যাল্ডওয়েল ডেভেলপার্স সোয়া লাখ টাকা করে তুলে দেয় ২৩ জন ফুটবলার এবং তিন কোচের হাতে।
স্ট্রোক করে বিছানাতেই পড়েছিলেন ফুটবলার মোসুমী জাহানের মা মোহসিনা। রংপুরেই তার বসবাস। বড় মেয়ে কুলসুমা ঢাকার একটি গার্মেন্টকর্মী। তবে তিনি ছোট মেয়েকে নিয়েই বেশি গর্বিত। তার কথা, ‘স্ট্রোক করে বিছানায় পড়েছিলাম। কিন্তু মেয়ের এমন সংবর্ধনায় না এসে পারলাম না। মেয়েও নাছোরবান্দা ছিল। তাই অসুস্থ শরীর নিয়েই আমাকে ছুটে আসতে হলো। আমি খুবই গর্বিত। মৌসুমী তো এখন পুরো দস্তুর ফুটবলার। খুব ভালো লাগছে এখানে আসতে পেরে। ওর জন্যই আজ এমন বড় হোটেলে আসতে পেরে খুব সম্মানিত বোধ করছি।’
ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের মেয়ে তাসলিমা। মেয়েকে নিয়ে এখন গর্বিত বাবা সবুজ মিয়া। পেশায় কৃষক। কাচা মরিচ ও পেয়াজ বিক্রি করেই তার সংসার চলে। সবুজ মিয়া বলেন, ‘আজ আমি আনন্দে আত্মহারা। এমন গর্বিত মেয়েদের বাবা আমরা। ওদের কৃতিত্ব নিয়ে এখানে এসেও আমরা অভিবাবকেরা আলোচনা করেছি। দোয়াকরি ভবিষ্যতেও তারা দেশ-বিদেশ জয় করে আসুক। সাধারণ কৃষক হয়েও আজ মেয়ের জন্য আমি বিখ্যাত। এটা কখনোই কল্পনাই করতে পারিনি। তাসলিমার মা একজন মানসিক রোগী। তাই সংসারের সবকিছুই আমাকে দেখতে হয়। তাসলিমার এই পুরস্কারের অর্থ আমি রেখে দেবো। ওকে তো বিয়ে দিতে হবে। ওর ভবিষ্যত পড়ে রয়েছে। আশাকরি ভবিষ্যতেও সে বিদেশের মাটি থেকে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।’
বাজারে একটি ছোটখাটো দর্জির দোকান ছিল কৃষ্ণা রানী সরকারের বাবা বাসুদেব চন্দ্র সরকারের। কিন্তু এখন সেটাও নেই। তাই কৃষি কাজের দিকেই ঝুকেছেন। এমন বড় এবং দামী হোটেলে এসে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে তার। বাসুদেব বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। এখানে এসে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। জীবনে কল্পনাও করতে পারিনি যে, এত বড় হোটেলে আসতে পারবো। মেয়ের জন্যই আসতে পেরেছি। মেয়ে এখন অর্থ উপার্জন করছে। আজ অনেকগুলো টাকা পেলো কৃষ্ণা। এই টাকা দিয়ে আমি ছেলের লেখাপড়ার পেছনে কিছু খরচ করবো। বাড়িতে কিছু টুকটাক খরচও রয়েছে। আর বাকি টাকা রেখে দেবো কৃষ্ণার জন্য।’ অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারের কথা, ‘আমাদেরকে সম্মান দেয়ায় বাফুফেকে ধন্যবাদ। এখন মনে হচ্ছে আমরা ভালো কিছু করতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য চূড়ান্ত পর্ব। এখন দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প চলছে। আমাদের দেয়া এই সম্মান ভবিষ্যতেও ধরে রাখার চেষ্টা করবো। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চূড়ান্ত পর্বে ভালো খেলার চেষ্টা করবো।’ মাছুরা খাতুনের বাবা রজব মিয়াও গর্বিত মেয়ের কৃতিত্বে। তিনি বলেন, ‘আমি আগে বুঝতে পারিনি মেয়ে কি অর্জন করেছে। এখানে এসে বুঝলাম। ওর জন্যই তো আমি সুদূর সাতক্ষিরা থেকে এতবড় হোটেলে এসে সম্মান পেলাম। কত বড় বড় লোক। কত ক্যামেরা। নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। এখন আমি গর্বিত পিতা।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন