ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে সারাদেশে নির্মিত ৫০টি দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন থেকেই মডেল মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো.ফরিদুল হক খান সম্প্রতি ইনকিলাবকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসহ এসব মসজিদে থাকছে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশুশিক্ষা, মেহমানখানা, পর্যটকদের আবাসন, মৃত ব্যক্তির লাশের গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, গণশিক্ষা কেন্দ্র ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স থাকছে। প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুটের এ-ক্যাটাগরির প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১ হাজার ২০০ ব্যক্তি নামাজ আদায় করতে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে ৯০০ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবনির্মিত মডেল মসজিদগুলোতে মাইকসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি ইতিমধ্যেই ক্রয় করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে সারাদেশে ৫৬০টি আধুনিক মডেল মসজিদ নির্মাণে প্রকল্পে সউদী সরকার অর্থের যোগান দেয়ার আশ্বাস দিয়ে তা’অসম্মতি প্রকাশ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এসব মসজিদ নির্মাণের ৮ হাজার ৭শ’ ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। প্রথম পর্বে সরকার এসব মসজিদে নির্মাণে ১৫শ ৪৫ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে। ৫০টি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এসব মডেল মসজিদ দক্ষতার সাথে নির্মাণ করছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল মসজিদ প্রকল্প পরিচালক নজিবুর রহমান গতকাল রাতে ইনকিলাবকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রমণ রোধে সরকারি নিদের্শনায় সকল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটের অর্থ থেকে ১৫% কেটে রাখা হয়। কিন্ত সমন্বয়ের বেড়া জালে পড়ে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের ছাড়কৃত ১৫শ’৪৫ কোটি টাকা থেকে করোনা সংক্রন্ত তহবিলে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয়েছে। এতে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ প্রকল্প আর্থিকভাবে লসের মুখে পড়লো। এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, চলতি অর্থ বছরে (২০২১-২০২২) দ্বিতীয় পর্বে আরো ১০০ মডেল মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ১৩ জুন অথবা ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করতে পারেন। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এ মাসের যেকোনো দিন উদ্বোধনের জন্য ৫০টি মসজিদ প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলো হলো ঢাকার সাভার উপজেলা, ফরিদপুরের মধুখালী, সালথা, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর, মানিকগঞ্জের শিবালয়, রাজবাড়ী সদর, শরীয়তপুর সদর, গোসাইরহাট, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, শেরপুর, কাহালু, নওগাঁর সাপাহার, পোরশা, পাবনার চাটমোহর, সিরাজগঞ্জ সদর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, দিনাজপুরের খানসামা, বিরল, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, রংপুর সদর, পীরগঞ্জ, সদর, বদরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিদপুর, জামালপুরের ইসলামপুর সদর, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, তারাকান্দা, ভোলা সদর, ঝালকাঠির রাজাপুর, ব্রাহ্মবাড়িয়ার বিজয়নগর, নবীনগর, চাঁদপুরের কচুয়া, চট্টগ্রাম জেলা সদর, লোহাগড়া, মিরসরাই, সন্দ্বীপ, কুমিল্লার দাউদকান্দি, খাগড়াছড়ির পানছড়ি, নোয়াখালীর সুবর্ণচর, খুলনা জেলা সদর, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর, কুষ্টিয়া জেলা সদর ও সিলেট দক্ষিণ সুরমা। সবচেয়ে বেশি মসজিদ নির্মাণ শেষ হয়েছে রংপুর জেলায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক জন কর্মকর্তা বলেন, ‘৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পটি শুধু আমরা কোনো একটি স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করিনি; বরং গুণগত মান ঠিক রেখে নিখুঁত নির্মাণশৈলীর দিকেও আমাদের তীক্ষè নজর রয়েছে। মডেল মসজিদ নির্মাণে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে কমিটি দিয়ে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়েছে। দেশের জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এমনকি উপকূলীয় এলাকায় এমন দৃষ্টিনন্দন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের সঙ্গে আমরা জড়িত থাকতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী তিন ক্যাটাগরিতে হওয়া জেলা পর্যায়ে চার তলাবিশিষ্ট মসজিদ এ-ক্যাটাগরি, উপজেলার তিন তলাবিশিষ্ট বি-ক্যাটাগরি এবং উপকূলীয় এলাকায় চার তলাবিশিষ্ট সি-ক্যাটাগরি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। মোট ৫৬০টির মধ্যে জেলা পর্যায়ে ৬৯টি, উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি ও উপকূলীয় অঞ্চলে ১৬টি রয়েছে। এগুলোর এ-ক্যাটাগরির প্রতিটির আয়তন প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুট, বি-ক্যাটাগরির আয়তন প্রায় ৩০ হাজার বর্গফুট ও সি-ক্যাটাগরির আয়তন ৩০ হাজার বর্গফুট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন