বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জরুরি কাজের বরাদ্দ আটকে যাওয়ায় হাজার কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪০ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে অনিয়ম হয়, আর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে এটা ঠিক নয়। দুই মন্ত্রণালয়ের এমন চিঠি চালাচালিতে আটকে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জরুরি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাবনা। পাউবো থেকে এ বছর বন্যা ও রোয়ানোতে ক্ষতিগ্রস্ত কাজের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছিল। এর জবাবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, পাউবোর জরুরি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব নয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও পাউবোর এমন রশি টানাটানিতে সারাদেশে আটকে আছে ভাঙন প্রতিরোধ কাজ। ইতোমধ্যেই সরকারি ও বেসরকারি মিলে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে চলে গেছে। পানি কমার সাথে সাথে যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর তীরে ভাঙন তীব্র হয়েছে। এছাড়াও সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, মাতামুহুরি, ফেনী, ইছামতি, চুঁনকুড়ি, ধরলা, তিস্তা, মহানন্দা, গড়াই ও সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র হয়েছে।
এদিকে, জরুরি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের বাজেট আটকে যাওয়ায় রোয়ানো ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে কোন ধরনের টেন্ডার করতে পারছে

না পাউবো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সারা দেশে পাউবোর জরুরি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রয়োজন ৩৬শ’ কোটি টাকা। সেখানে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে অনুন্নয়ন ও রাজস্ব খাত থেকে এ জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৩৭২ কোটি টাকা। আরও জানা যায়, গত ৩ বছরে সারাদেশে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে তার মধ্যে এখনও পাউবোরর কাছে ঠিকাদারদের পাওনা রয়েছে ৯৭৩ কোটি টাকা। অনেক ঠিকাদার পাওনা না পাওয়ায় এখন আর বাকিতে কাজ করতে চায় না।
অন্যদিকে, নগদ অর্থ না থাকায় বাকিতে কাজ করাতে যেয়ে পাউবোর লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হচ্ছে। এতে করে অনিয়ম বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে দুর্নীতি। রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নামমাত্র যে বরাদ্দ দেয়া হয় তার একটি অংশ চলে যায় পানিতে, আর বাকিটা যায় পাউবোর অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের পকেটে। পাউবোর এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় জোরালোভাবে তুলে ধরায় বেকায়দায় পড়েছেন সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাই।
জানা যায়, পাউবোরর জরুরি কাজে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকে তা সংস্থাটির ৯টি জোনের ৭৮টি ডিভিশনে ভাগ করে দেয়া হয়। এ বছর রোয়ানো ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে পাউবোতে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রভাবশালী অনেকেই তদবির করেছেন এবং করছেন। তদবিরকারিদের প্রত্যেকেই চান তার এলাকার জরুরি কাজে বরাদ্দ বাড়ানো হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জরুরি কাজের বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে তদবিরের শেষ নেই। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় ছিল যে, জরুরি কাজের বিল বাবদ জনৈক এক ঠিকাদারের পাওনা ছিল প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। আর ওই ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে মাত্র ৩ লাখ টাকা। এমন দুরবস্থায় ঠিকাদাররা এ ধরনের জরুরি কাজে একেবারেই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। অনেক ঠিকাদার পাউবোকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর পাউবোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজে অর্থ বিনিয়োগ করবেন না।
পাউবো ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন বিরূপ ধারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্থাটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কার্যত আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে কোন বরাদ্দ দিতে বলেনি। মূলত আমাদের টাকাটাই আমরা চেয়েছি। আমরা চিঠি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলেছি, দেশের বেশ কয়েকটি জেলা এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি জেলা রোয়ানো আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত খাতের টাকা না রেখে পুরোটাই যেন দেয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় পাউবোর এই চিঠিকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিবছর যেখানে জরুরি ও রক্ষণারেক্ষণ কাজের জন্য মূল বরাদ্দ থেকে ১০ শতাংশ কর্তন করে রাখে, সেখানে এবার অর্থ মন্ত্রণালয় ২০ শতাংশ কর্তন করার নির্দেশ দিয়েছে। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এবারের বন্যা ও রোয়ানোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মেরামত কাজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে পাউবো। অন্যদিকে, ভাঙনের কবলে পড়ে পাউবোর অবকাঠামোসহ সরকারের অন্যান্য বিভাগের অবকাঠামোও ক্ষতিগস্ত হচ্ছে। সেই সাথে মানুষ তার বসতভিটা, চাষাবাদের জমি হারিয়ে হয়ে পড়ছে সর্বস্বান্ত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ন সচিব জাফর আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, রোয়ানো ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন-পাউবোর তা নেই। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। আশা করি এ ব্যাপারে সাড়া পাব। তিনি উল্লেখ করেন, সারা দেশ থেকে জরুরি কাজের বরাদ্দ চেয়ে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের আবেদন আসে; তার ২৫ পারসেন্ট দিতে গেলেও এ খাতে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
জামিল ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৩৫ পিএম says : 0
এর দায়ভার কার ?
Total Reply(0)
আরমান ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৩৮ পিএম says : 0
এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন
Total Reply(0)
জাহিদ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৩৯ পিএম says : 0
অনিয়ম আর দুর্নীতিই আমাদের দেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন