ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত সম্পর্কিত ভার্চুয়াল সভা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন সিলেট নগরীতে ভ‚মিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে হলে নগরে কমাতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। এজন্য সিলেট নগরের সকল ভবন করতে হবে এসেসমেন্ট।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
সভায় বিশেষজ্ঞ বক্তা শাবিপ্রবি’র অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম সভার শুরুতে সিলেট নগরে ভ‚মিকম্প চ্যুতি ও এই শহরের পানির স্তর নেমে যাওয়ার উপর আলোচনা ও ব্যক্ত করেন গবেষণাকৃত মতামত। সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারের যুগ্ম সচিব বিধায়ক রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ভ‚মিকম্পের আশংকায় সিসিকের দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সভায় বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, চুয়েটের সাবেক ভিসি ও ইউএসটিসির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, জিওটেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমদ আনসারী। সভায় পরামর্শ সমূহের মধ্যে রয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ ও ঝুঁকিমুক্তের উদ্যোগ, উদ্ধারকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প হলে করণীয় বিষয়ে নিয়মিত মহড়া আয়োজন ভূমিকম্পে করণীয় বিষয়ে প্রচারণা অব্যাহত রাখা, ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না তা তদারকি করা, সিলেটে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি।
সভায় প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, সচেতন করতে হবে নাগরিকদের। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন করতে হবে চিহ্নিত। নাগরিকরা যাতে আতঙ্কিত না হয় প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে সেজন্য। সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ভূমিকম্পের রেড জোনে রয়েছে সিলেট। তাই এখানকার প্রস্তুতি নিতে হবে সেদিক বিবেচনায়। বিশেষজ্ঞদের মতামত এ অঞ্চলে হতে পারে বড় ধরণের ভূমিকম্প। তিনি বলেন, সিলেটে ফায়ার সাভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক কার্যালয় করতে হবে।
যেখানে উদ্ধার কাজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম মজুদ থাকবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প হলে করনীয় বিষয়ে নিয়মিত মহড়া আয়োজন, ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না তা তদারকি বাড়ানোর জন্য আহবান জানান সিসিকের প্রতি। শহরে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। সার্ফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্ভর পানি চাহিদা পূরণের দিকে যেতে হবে সিসিককে।
সভায় বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ অত্যন্ত জরুরী। সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ের সক্ষমতা এবং দুর্যোগে ত্রাণ কিংবা চিকিৎসা নিয়ে আসা বিমান/হেলিকপ্টার কতটি নামতে পারবে সে তথ্যও রাখতে হবে পরিকল্পনায়।
চুয়েটের সাবেক ভিসি ও ইউএসটিসির ভিসি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধারণা করা হয় ডাউকি চ্যুতিতে কম্পন হলে সেটি হতে পারে ৮ মাত্রার। সেক্ষেত্রে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে এখনই উদ্যোগ নিলে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমদ আনসারী বলেন, চাইলে ৬ মাসের মধ্যেই সিলেট নগরের সকল ভবন এসেসমেন্ট করে ফেলা সম্ভব। ভ‚মিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে হলে নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কমাতে হবে-এর কোন বিকল্প নেই।
ভার্চুয়াল সভায় যুক্ত থেকে আলোচনায় অংশ নেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে সভা উপস্থিত ছিলেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর আজিজুর রহমান, সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস সিলেটের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক আনিসুর রহমান, সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আব্দুল আজিজ, নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল হক পাঠোয়ারী, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী জয়দেব বিশ্বাস, মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব সোহেল আহমদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন