বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এ বাজেট জনগণের সঙ্গে ভাওতাবাজি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটকে ভাওতাবাজির বাজেট বলে অখ্যায়িত করেছে বিএনপি। একই সাথে বাজেটে জনস্বার্থেও কোনো প্রতিফলন ঘটেনি উল্লেখ করে দলটি বলেছে, এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। ঘোষিত বাজেটে অপচয়, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের কোনো নির্দেশনা নেই। গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিপাদ্য শব্দমালার মাঝেই ভাওতাবাজি পরিষ্কার। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন গত ১৮ মাস যাবৎ অচল। এর মধ্যে অপরিকল্পিত লকডাউনের নামে শাটডাউনে নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবন চ‚ড়ান্ত রকমে থমকে গেছে। তাই সুস্পষ্টভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা মাথায় না রেখে কেবলমাত্র অর্থনীতির নানা তত্ত¡ ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার মাধ্যমে কার্যত জনগণের সঙ্গে এক ধরনের ভাওতাবাজি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই বাজেটেও স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অথচ এই মুহূর্তে মানুষের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, মহামারিকালে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এটি একটি অবাস্তবায়নযোগ্য কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণকে কোভিডের মহাসঙ্কট থেকে রক্ষার দিকনির্দেশনা নেই। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। জনগণের সমর্থনবিহীন সরকারের রাষ্ট্রের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই এ বাজেটে জনস্বার্থেও কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। ঘোষিত বাজেটে অপচয়, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ হয়নি।

তিনি বলেন, এবারের বাজেট কেবল বার্ষিক হিসাব-কিতাবের বাজেট হওয়ার কথা নয়। বাজেট হওয়া উচিত ছিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিমালার পথনির্দেশনা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট। ভবিষ্যতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের মডেল কী হতে পারে, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বাজেটের ফোকাস কী হবে, তার পথনির্দেশনার বাজেট। কিন্তু সরকার সেদিকে যায়নি। সরকার এই বাজেটে সম্প্রতি বিএনপি প্রদত্ত পরামর্শ আমলেই নেয়নি। কারোনাকালীন এই বাজেটে স্বাস্থ্য এবং হতদরিদ্র ও শ্রমিকদের প্রত্যাশিত প্রণোদনা উপেক্ষিত হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট দেখে মনে হবে, সরকার মনে করে না, আগামী দিনেও জনগণের ভোটের তাদের প্রয়োজনীয়তা আছে।

ফখরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যখাত নিয়ে এত কথা বলা হচ্ছে, অথচ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির সেই ১ শতাংশের মধ্যেই আছে। এই বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের চাহিদা মিটবে না। অন্যদিকে বরাদ্দ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য খাত পিছিয়ে আছে। করোনার টিকা প্রদানের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। সরকার ২৫ লাখ মানুষকে মাসে টিকা দেয়ার কথা বলেছেন। সেটা কবে থেকে কার্যকর হবে, কিভাবে হবে, সে সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত বলা হয়নি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেটটি দেশের ৫০তম বাজেট। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সময় এটা। কিন্তু বাজেটে সে লক্ষে বড় কোনো সংস্কার পরিকল্পনার উল্লেখ নেই। আয় ও ব্যয়ের সামর্থ বৃদ্ধি, বিশেষকরে গুণগত মান বজায় রেখে ব্যয় করার অক্ষমতা নিরসনে কোনো সংস্কারমূলক কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেই বাজেটে। প্রণোদনা তহবিল দেয়া হচ্ছে আগের মতো ব্যাংকের মাধ্যমে অথচ ব্যাংক সেক্টর সংস্কারের কোনো কথাই বলা হলো না। কর-ব্যবস্থা সংস্কারেরও বড় কোনো সংস্কার প্রস্তাবও নেই। মানুষের হাতে টাকা না থাকলে চাহিদা বাড়বে না। চাহিদার অভাবে আরো সøথ হয়ে পড়বে অর্থনীতি। হতদরিদ্র মানুষের জীবন বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে।
করোনার ক্ষত থেকে শিক্ষা খাত পুনরুদ্ধাওে কোনো প্রণোদনা দেয়া হয়নি অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এদেরকে বৃত্তি দিয়ে শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে হবে। অপরপক্ষে করোনাকালে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না। ১০ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর বেতনভাতা বন্ধ আছে। অনেকে বেকার হয়ে গেছেন। কেজি স্কুল ও কারিগরিসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাজেটে এসব খাতে ব্যয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রস্তাব দেখা যায়নি। বরঞ্চ প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর আরোপের প্রস্তাব করেছে।

তিনি বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার গত এক দশকের অধিককাল ধরে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি ও ক্রনিক্যাপিটালিজম এর মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে সীমাহীন দুর্নীতি করে এক নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে, যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নাই। আমরা তাই সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ অর্থনীতির অঙ্গীকার চাই, যা এ বাজেটে অনুপস্থিত। দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টির মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে একটি বৈষম্যহীন, জনবান্ধব, কল্যাণমুখী ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার তিনি অঙ্গীকার করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোহাম্মদ শামছুল আলম, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বন ও পরিবেশ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জেড খান রিয়াজ উদ্দীন নসু, সহ-বন ও পরিবেশ সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন