বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে সৌরশক্তিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন চীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২১, ৬:০০ পিএম

সৌর প্যানেল ও যন্ত্রপাতি উৎপাদনে পূর্ণশক্তি নিয়োগ করে চীন এখন বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ সরবরাহ চাহিদা দেশটি পূরণ করছে। অথচ গত দুই দশক ধরে শত শত কোটি ডলারের সরকারি প্রণোদনা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে ব্যর্থ হয় সোলার প্যানেল উৎপাদন শিল্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন নিজেদের সমাজতান্ত্রিক কাঠামোকে জোরালভাবে প্রমাণ করতে তারা সৌরশক্তি উৎপাদনের পেছনে সরকারিভাবে প্রচুর বিনিয়োগ করতে শুরু করে, বিনিয়োগের বিপুলতা যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে। চীন সরকার নিজ দেশে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে দেয়।
সোলার প্যানেল ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি উৎপাদনে চীন একটি পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ চক্র তৈরি করে, অর্থাৎ কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে ক্রেতার হাতে চূড়ান্ত পণ্য পৌঁছানো পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়াই সরকার নিয়ন্ত্রণ করে।
এই মুহূর্তে চীন বিশ্বের সর্বাধিক পলিসিলিকন প্রস্তুতকারক। পলিসিলিকন সৌর প্যানেল তৈরির একটি মূল কাঁচামাল। এছাড়াও, চীন পরিবেশবাদীদের দাবি উপেক্ষা করে কয়লা প্ল্যান্টও চালু রেখেছে, যাতে এখান থেকে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সৌর খাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। অলাভজনক বেশিরভাগ শিল্প প্রধান দেশের আগ্রহ ছিল না, কিন্তু চীন তা করার পাশপাশি শ্রম ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ফলস্বরূপ; আজ চীনা কোম্পানিগুলোই বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ সোলার প্যনেল সরবরাহক হয়ে উঠেছে।
২০ বছর আগে যেখানে মার্কিন কোম্পানিগুলো ২২ শতাংশ সোলার প্যানেল তৈরি করতো; এখন তারা নিজ দেশের মাটিতে এর মাত্র ১ শতাংশ তৈরি করে। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫টি বড় সৌর যন্ত্রাংশ তৈরির ফ্যাক্টরি ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হয়েছিল, কিন্তু উল্টো সেগুলো আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। চালু হওয়ার মাত্র ১৩ বছর পরেই হিলসবোরো প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গিয়ে যেন তাদেরই দলে যোগ দিয়েছে।
দুই দেশই বিশ্বাস করে যে, আগামীতে বৈদ্যুতিক যানবাহনই হবে প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম, আর বাইডেন দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন যে এই দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্রই এগিয়ে থাকবে। অথচ, যুক্তরাষ্ট্রে সৌরশক্তি উদ্যোক্তারা এখাতে বিপুল কর্মসংস্থানের আশা কখনোই দেখাতে পারেননি, সর্বোচ্চ সুসময়েও তারা মাত্র ৩০ হাজার কর্মী নিয়োগ দেন। তাই বলাই বাহুল্য যে, নতুন কোনো পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদনে চীনের সঙ্গে আগামীর প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া আরও বেদনাদায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মোটরগাড়ি শিল্পের প্রাণকেন্দ্র ডেট্রয়েট বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরন সবে শুরু করেছে। মার্কিন কংগ্রেসও বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশনে কর ছাড় দেওয়া নিয়ে সংশয়ে, ঠিক সেই মুহূর্তেই চীনে এখন রয়েছে ৮ লাখ সরকারি চার্জিং স্টেশন। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে যা আটগুণ বেশি। তারসঙ্গে, বেইজিং দিয়েছে বিপুল কর রেয়াদ, ভূমি বরাদ্দ, স্বল্প সুদের ঋণ ও অন্যান্য প্রণোদনা। ফলে গত ছয় বছর ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইলেকট্রিক যান উৎপাদনের শিরোপাও চীনের ঘরেই শোভা পাচ্ছে।
চীনজুড়ে কয়েক ডজন বিশেষায়িত উৎপাদন কেন্দ্রে কয়েক শত কোম্পানি বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরি করে চলেছে। বেইজিং এর প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে চালু করা আরো দুটি শিল্প- সুলভ মূল্যে সেমিকন্ডাক্টর ও ব্যাটারি এর সুবিধা নিচ্ছে উক্ত শিল্প।
উৎপাদন খাতে সুপারপাওয়ার হওয়ার লক্ষ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর নেয়া বিস্তৃত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীন ইতিমধ্যেই সৌর প্যানেল উৎপাদনে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। তাদের সফলতার মাত্রা এত বেশি যে মার্কিন নবায়নযোগ্য শক্তির সমর্থকরাও এখন মনে করেন, আমেরিকার উচিত এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসা। সূত্র : ব্লুমবার্গ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন