শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উৎপাদনশীল খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকতে পারে

এফবিসিআিই’র বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২১, ৮:০৫ পিএম

দেশের অর্থনীতির প্রাণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উন্নয়নে আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবি করেছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো.জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সময় বেঁধে দিয়ে সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে পারে। মো.জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের মন্তব্য পরিষ্কার। অপ্রদর্শিত অর্থ যদি থাকে একটা সময় বেঁধে উৎপাদনশীল খাতে, যেখানে কর্মসংস্থান হবে, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি হতে পারে সে সব জায়গায় সরকার বিনিয়োগ করার একটা সুযোগ দিতে পারে। তবে এটা সারা জীবনের জন্য দেয়া উচিত হবে না। যদি সরকার সারা জীবনের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করার করার সুযোগ দেয়, সত্যিকার অর্থে যারা নিয়মিত ট্যাক্স দেয়, তারা নিরুৎসাহিত হবে। আমরা তো আসছে বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চাইনি উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ব্যবসাবান্ধব হয়েছে, যা করোনা মহামারির মধ্যেও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে। এসএমইখাতে নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক টার্নওভার ৭০ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটা এক কোটি টাকা করার অনুরোধ করা হয়েছে।

শনিবার (৫ জুন) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা ও সাংবাদিক সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এসব কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এমসিসিআই প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান মাহমুদ, এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি এম এ মোমেন, আমিন হেলালী, মো. হাবিব উল্লাহ ডন, বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক প্রমুখ। মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত (এসএমই) দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করছে। করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই খাত। এ কারণে এ শিল্পখাতের জন্য আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা প্রয়োজন। এছাড়া ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের প্রায় ৩০ শতাংশ বিতরণ হয়নি। আমরা বাকি বিতরণ ও নতুন আরেকটা প্যাকেজ ঘোষণার অনুরোধ করছি। মূল্য সংযোজন কর আইন সহজীকরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এফবিসিসিআইয়ের সমন্বয় টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানান জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিদ্যমান মন্দা পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক আর্ধ-সামাজিক পরিবেশের তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদি, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুল্ক ও কর কাঠামো সংস্কার করে একটি জনবান্ধব এবং উৎপাদনশীল রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। এনবিআরের পলিসি উইং এবং বাজেট বাস্তবায়ন উইংকে আলাদা করার অনুরোধ করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি। রাজস্ব বাড়ানো এবং ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর জন্য উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাট ও আয়কর অফিস স্থাপন করলে করের আওতা বাড়বে।

টিআইএন নম্বর ব্যবহারের পাশাপাশি ট্যাক্স পেমেন্টের প্রমাণ বা ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে সক্ষম কর প্রদানকারীরা রাজস্ব দিতে এগিয়ে আসবে এবং নিয়মিত করদাতাদের ওপর চাপ কমবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের পাশাপাশি ড্রেজার ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ করার অনুরোধ করছি। এ শুল্ক গত বছর থেকে ৩১ শতাংশ করা হয়েছে। তার আগে ১ শতাংশই ছিল। আমদানি পর্যায়ে আগাম কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ কর হয়েছে। আগাম কর ব্যবসার খরচ বাড়বে তাই এ আগাম কর সম্পুর্ণ প্রত্যাহারের আবেদন করছি। ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি করেছিল এফবিসিসিআই। প্রত্যাহার না করে উল্টো অগ্রিম আয়কর ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ব্যবসা বাণিজ্যে অচলবস্থার সৃষ্টি হবে। সব প্রকার অগ্রিম আয়কর, উৎস কর চূড়ান্ত হিসাবে সমন্বয় করা জরুরি। তিনি বলেন, ব্যক্তি আয়কর দাতাদের ন্যূনতম কর হার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ কর ন্যূনতম শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন জসিম উদ্দিন। খাত ভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনগুলোর বিরাজমান সমস্যাগুলোর সমাধান জরুরি। অন্যথায় ব্যবসা বাণিজ্যের খাতওয়ারি অসংগতি থেকে যাবে। এবিষয়ে এফবিসিসিআইর আমদানি শুল্ক, মুসক ও আয়কর সংক্রান্ত বিশেষ কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে খাতওয়ারি অসংগতি দুর হবে।

জসিম উদ্দিন বলেন, বাজেটের ঘাটতি মেটাতে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার বদলে বিশেষ স্থানীয় বন্ড ও বিদেশ থেকে স্বল্প সুদে অর্থায়ন নেয়া যেতে পারে। এসএমইখাতে নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক টার্নওভার ৭০ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটা এক কোটি টাকা করার অনুরোধ করছি। অনেকগুলো পণ্যতে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সম্ভাবনাময় আরও অনেক পণ্য আছে সেগুলোর জন্য এ সুযোগ স¤প্রসারণ করা হোক। বাজেট বাস্তবায়নের চিরায়ত চ্যালেঞ্জ, সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য বান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাক্সিখত রাজস্ব আদায়। এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও নির্বাহী দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তদারকির ক্রমাগত মান উন্নয়ন জরুরি। করোনার কারণে কর্মহীনতা, আয় হ্রাস কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতা বাড়ানো হয়েছে। বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার আওতা বাড়ানো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) আরও ভ‚মিকা রাখবে। তাই পিপিপির ওপর বিশেষ নজর দেয়ার অনুরোধ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও যেসব দাবি করা হয়েছে তাহলো- আগামী এক বছরের জন্য ই-কমার্সকে উৎসে করের আওতাবহির্ভ‚ত রাখা, কাটার সেকশন ড্রেজারকে ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে ১ শতাংশ শুল্কে আমদানির সুযোগ দেয়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করা, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য সব উপজেলা পর্যায়ে আয়কর ও ভ্যাট অফিস স্থাপন করা, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের কাজে টিন নম্বর ব্যবহার করার পাশাপাশি ট্যাক্স পেমেন্টের প্রমাণ বা ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পলিসি উইং এবং বাজেট বাস্তবায়ন উইংকে পৃথক করা এবং মূল্য সংযোজন কর আইন সহজীকরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতী রাজস্ব বোর্ড এবং এফবিসিসিআইয়ের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করার দাবিও করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন