বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

সঙ্গীত ও সঙ্গীত সংশ্লিষ্টদের জীবনমান উন্নয়নে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক উদ্যোগ

বিনোদন রিপোর্ট: | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

গত সপ্তাহে জাতীয় আর্কাইভ মিলনায়তনে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ (এমপি)-এর সঙ্গে সঙ্গীতের তিন সংগঠন গীতিকবি সংঘ, সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দেয়া ১৭ দফা দাবির বাস্তায়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির কার্যক্রম বাস্তবায়নে অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর আহবায়ক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, এম.সি.এস.বি’র সভাপতি নকীব খান, সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর যুগ্ম আহবায়ক কুমার বিশ্বজিৎ ও হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, গীতিকবি সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল ও কবির বকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, শওকত আলী ইমন ও জয় শাহরিয়ার। সভায় উপস্থাপিত ১৭টি দাবির মধ্যে বেশ কয়েকটির নিষ্পত্তি ও সকল দাবির অগ্রগতি তুলে ধরেন রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট ও বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক জাফর রাজা চৌধুরী। তিনি জানান, এখন থেকে চলচ্চিত্রের সঙ্গীতের জন্য সৃষ্ট সঙ্গীতকর্ম চলচ্চিত্রের জন্য সম্পাদিত চুক্তির বাইরে বিভিন্ন এনালগ ও ডিজিটাল মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ সঙ্গীত প্রণেতারা কপিরাইট আইনের ২০ (২) ধারা মতে কপিরাইট বোর্ডে আপিল করতে পারবেন। এ ছাড়াও তিন সংগঠনের দাবি অনুযায়ী, নির্মাণাধীন কপিরাইট ভবনে ৩টি সংগঠনের জন্য পৃথক পৃথকভাবে ৩টি অফিস স্থাপনের জন্য এক হাজার বর্গফুট আয়তনের ৩টি অফিস স্পেস বরাদ্দ রাখা এবং ৬০ জনের বসার উপযোগী একটি পৃথক কনফারেন্স রুমেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান। জাফর রাজা বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের সুযোগ সৃষ্টির দাবি ইতিমধ্যেই কার্যকর করা শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তিন সংগঠন গীতিকবি সংঘ, সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর নিবন্ধন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কপিরাইট অফিসে সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকে সঙ্গীত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কপিরাইট অফিসেই নিবন্ধন করতে পারবেন। মধ্য মেয়াদী দাবিগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের জন্য এম.আই.পি.’র (মিউজিক ইম্পর্টেন্ট পার্সন) প্রস্তাব তিন সংগঠনের যৌথভাবে দেয়া ৬টি মানদন্ড পর্যালোচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এছাড়াও প্রতিমন্ত্রী সরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলে গীতিকবি, সুরকার ও কন্ঠশিল্পীদের সম্মানী বৃদ্ধি, বেসরকারি এফএম. রেডিও চ্যানেলগুলোতে ফ্রিতে গান চালানোর নিষিদ্ধ ঘোষণা ও রয়েলটি ব্যবস্থা চালুর দাবির ব্যাপারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি যৌথ আন্তঃ মন্ত্রণালয় সভা আয়োজন করার নির্দেশনা দেন। তিন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দাবি কপিরাইট সমিতি পুনর্গঠন/বাতিলের ব্যাপারে তিন সংগঠনের অবস্থান এবং সুপারিশ তুলে ধরা হয়। প্রতিমন্ত্রী সকল দিক বিবেচনা করে একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর কপিরাইট সমিতি গঠনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস দেন। প্রতিমন্ত্রী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে প্রতি বছর শুধু সঙ্গীতের সকল শাখায় গুণী ব্যক্তিদের সম্মান জানানোর লক্ষ্যে ‘সঙ্গীতে জাতীয় পুরস্কার’ প্রদানের খসড়া নীতিমালাটি বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেন। দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সঙ্গীত সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য একটি আবাসন প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে প্রতিমন্ত্রী দ্রুত সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে তিন সংগঠনের যেকোনো একটি সংগঠনের প্রত্যয়নপত্র গ্রহণের ব্যাপারে বিশেষ পত্র প্রেরণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করার আশ্বাস দেন। সরকারি হাসপাতালসমূহে সঙ্গীত সংশ্লিষ্টদের জন্য বিশেষ মর্যাদা এবং বিশেষ ফিতে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার বিশেষ বিধান রাখার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র প্রেরণের জন্য প্রতিমন্ত্রী সম্মত হন। জাতীয় সঙ্গীত একাডেমি গঠন ও সঙ্গীতের জন্য এক্সক্লসিভ কনসার্ট ভেন্যু ও অডিটরিয়াম নির্মাণের ব্যাপারে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। ইউটিউব, স্পটিফাই, ডিজার, এপেল ও আমাজন মিউজিকসহ বিশ্বের শীর্ষ মিউজিক অ্যাপগুলোতে বাংলা গানের আলাদা ক্যাটালগ ও প্রচারের ব্যাপারে ওয়াইপো’র সহযোগিতা চাওয়ার জন্যে শীগগিরই একটি পত্র প্রেরণ করা হবে বলে জানান রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট জাফর রাজা চৌধুরী। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় শিল্পকলা একাডেমিসহ অন্যান্য সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে গীতিকবি, সুর¯্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীদের সম্মানজনক অংশগ্রহণের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তিন সংগঠনকে আশ্বস্ত করা হয়। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য যে সকল প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়, সেখানে সেরা শিল্পীদের অংশগ্রহণ, একজন সঙ্গীত পরিচালক, একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের অন্তর্ভুক্তি ও বাংলাদেশের সঙ্গীত ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্যে সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের সফর দলে অন্তর্ভুক্তির দাবিটি গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিমন্ত্রী নির্দেশনা দেন। দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিমন্ত্রী সঙ্গীত সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি পৃথক তহবিল করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশনা দেন। এছাড়াও তিন সংগঠনের প্রস্তাব অনুযায়ী, সঙ্গীতের মানুষদের জন্য দ্রুত সঙ্গীত বীমার ধারণাটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তা স্বল্পতম সময়ে বাস্তবায়নের জন্য তিনি নির্দেশনা দেন। সভায় সিংগার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ, এম.সি.এস.বি ও গীতিকবি সংঘের নেতারাও বক্তব্য রাখেন। প্রতিমন্ত্রী সঙ্গীতের মানুষদের অবহেলার দায় ঘোচানোর লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে এবং প্রতি মাসে অগ্রগতি সভা করে এই ১৭ দফা দাবির মধ্যে বাকি দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন