রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালের নারী চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপি হত্যাকান্ডের ছয়দিনেও কে বা কেন খুন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ। নানা প্রশ্ন সামনে উত্থাপিত হলেও না মিলছে উত্তর, খুলছে না তদন্তের জট। চিকিৎসক সাবিরা হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাদী রেজাউল হাসান সাবলেটে থাকা তরুণী এ হত্যায় জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ পোষণ করলেও তাকেসহ হেফাজতে নেয়া ৬ জনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল পর্যন্ত নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করাও সম্ভব হয়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কলাবাগান থানার এসআই গোলাম রব্বানী জানান, নারী চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপি হত্যা মামলা তদন্ত চলছে। বলার মতো অগ্রগতি নেই। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবিও কর্মকর্তারাও ছায়া তদন্ত করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সাবিরাকে পরিকল্পিতভাকে খুন করা হয়েছে। খুনীরা পেশাদার বলে মনে হচ্ছে। হত্যার পর আগুন দিয়ে আলামত নষ্টের অপচেষ্টাও করা হয়েছে। এসবই স্পষ্ট। কিন্তু খুনি কে? কেন খুন, মিলছে না উত্তর। আমরা হত্যাকান্ডের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ছাড়া তদন্ত করছি। বেশ কয়েকটি ক্লু পাওয়া গেলেও জড়িতদের গ্রেফতার করা না পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করা উচিত হবে না বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ওই ঘটনার আগে ও পরে সন্দেহভাজনদের ফোনকল যাচাই করা হচ্ছে। নিহতের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক ও কল লিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় সাবলেট থাকা তরুণীসহ পুলিশ হেফাজতে থাকা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যেহেতু এখন পর্যন্ত স্পষ্টত কোনো ক্লু নেই, তাই কাউকেই পুলিশ সন্দেহের বাইরে রাখছে না। প্রয়োজন হলে যে কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান, আত্মীয়-স্বজনদের বক্তব্য ডাক্তার সাবিরা খুবই ভালো মানুষ, নামাজ পড়তেন নিয়মিত। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব ছিল। দেখা সাক্ষাৎ কম হতো। স্বামীর অবর্তমানে নিহতের বাসায় কারও যাতায়াত ছিল কিনা, কারও সঙ্গে বিশেষ ফোনালাপ হতো কিনা তাও যাচাই করা হচ্ছে। ঘটনার দিনই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট মরদেহের শরীরে, দরজায়, চেয়ারে একাধিক জনের ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট পায়। আলামতের মধ্যে ছিল সিগারেটের মোতা, সিঁড়ি থেকে ঠান্ডা কফির মগ। এদিকে ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে র্যাব-২ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একাধিক টিম। তবে এখন পর্যন্ত কারও তদন্তে খুনের ক্লু মেলেনি।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, পরকীয়া, ডাকাত চক্র, পারিবারিক দ্ব›দ্বকে গুরুত্ব দিয়ে ক্লু খোঁজা হচ্ছে। স্বামীর অবর্তমানে সাবিরার সময় কিভাবে কাটতো, ছেলেকে নিয়ে কেন তিনি স¤প্রতি কানাডায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন তার উত্তরও খোঁজা হচ্ছে।
সাবিরার খালাতো বোন জাকিয়া খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, গত জানুয়ারির শেষে ওই বাসায় উঠেছিল সাবিরা আপু। সে নামাজি ছিল। তার বাসায় বোনের মেয়ে ও সাবলেটের দুই তরুণী ছাড়া কারও বিশেষ যাতায়াত ছিল বলে শুনিনি। স্বামীর সঙ্গেও মনোমালিন্যও ছিল না। আপু কফি নয় চা খেতেন। তাই জব্দ কফির মগের ব্যবহারকারী বের হলে মিলতে পারে খুনির সন্ধানও। উল্লেখ্য, গত ৩১ মে সোমবার কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের চিকিৎসক সাবিরার ভাড়া বাসায় প্রথমে আগুনের খবরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন