নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দশ গ্রামের মানুষের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম হানজালা বাহিনী। বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জমি-জমা বিক্রিসহ কাজে হানজালা বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। না দিলেই গুম, খুন, হামলা-মামলার হুমকি দিয়ে থাকে এ বাহিনী। এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে বেড়ালেও রহস্যজনক কারণে হানজালাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুধু তাই নয়, গত বছর খানেক আগেও হানজালাসহ তার বাহিনীর সদস্যরা ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটে নেয়। ওই ঘটনায়ও পুলিশ বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয় হানজালাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে হানজালা পার পেয়ে যায়। স্থানীয় এলাকাবাসী হানজালাসহ হানজালা বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার দাবি করেছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, এখন আলোচিত সন্ত্রাসীর নাম হানজালা। পুলিশের ওপর মামলা, অস্ত্র লুট থেকে শুরু করে জমি দখল, ফুটপাথ দখল, ঘরবাড়ি নির্মাণে চাঁদা আদায়, মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে আজকের শীর্ষ সন্ত্রাসী এই হানজালা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রূপগঞ্জে নিজের একক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই উত্থান ঘটে এই তার। তার বিরুদ্ধে শুধু রূপগঞ্জ থানাতেই আছে হাফ ডজন মামলা। ২০০৯ সালে সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই আলোচনায় উঠে আসে হানজালার নাম। সে সময় সরকার দলের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে ছিলেন তিনি। টেলাপাড়া এলাকার শফিউদ্দিনের ছেলে হানজালাসহ তার বাহিনী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনের কৌশল হিসেবে বাড়িতে আগুন, ভাঙচুর, মিছিল-মিটিংয়ে হামলা করে তা পণ্ড করার মূল কারিগর ছিলেন। পরে তাকে ভুলতা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতির পদ দেয়া হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি পদ পেয়ে হানজালা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এক সময় তাদের সিনিয়র নেতাদের সাথে বেয়াদবি ও হাই কমাণ্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে তার মনগড়া মত চলতে থাকে। ছাত্রলীগের নাম করে সে এলাকার মধ্যে বিশাল মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলে। এলাকার টোকাইদের নিয়ে গড়ে তুলে বিশাল বাহিনী। হানজালা বাহিনীর সদস্যরা ভুলতা, গোলাকান্দাল, টেকপাড়া, পাচাইখা, বলাইখা, আউখাব, হাটাব, আমলাব, শিংলাবসহ আশ-পাশের দশ গ্রামের মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ আধিপত্য গড়ে তোলে। এখন এসব গ্রামের মানুষ হানজালাসহ হানজালা বাহিনীকে মূর্তিমান আতঙ্ক মনে করেন।
গত ২৯ মে শনিবার বিকেলে হকার উচ্ছেদ ইস্যু ও বিক্ষোভ মিছিলের কারণ জিজ্ঞাসা করায় পুলিশের ওপর হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হানজালাসহ নামীয় ২২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। রোববার সকালে ভুলতা পুলিশ ফাড়ির উপ-পরিদর্র্শক (এসআই) মিন্টু বৈদা বাদী নামীয় ২২ জন ও ১০০/১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, গত বছর হানজালার নামে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা হয়। এছাড়াও হানাজালার নামে একাধিক মামলা থাকার পরও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছাঁয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তাকে গ্রেফতার করলেও প্রভাবশালী মহলের ফোনে তাকে ছেড়ে দিতে হয়। হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, অপরাধীরা যে দলেরই হউক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন