সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, তুরস্কের প্রায় ৭৯ শতাংশ নাগরিক আমেরিকার চেয়ে রাশিয়ার সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পছন্দ করবে।
১ থেকে ৩ জুন ২১০০ মানুষের অংশগ্রহণে আরেদার পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ৭৮.৯% অংশগ্রহণকারী রাশিয়াকে বিদেশী নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রধান অংশীদার হিসাবে পছন্দ করেন যদি বিকল্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়।
অংশগ্রহণকারীদের ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন, ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘কৌশলগত অংশীদার’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। অন্যদিকে, ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ অংশগ্রহণকারীরা রাশিয়াকে ‘কৌশলগত অংশীদার’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
উভয় দেশকে বৈরী সম্পর্ক হিসাবে দেখার ক্ষেত্রে উত্তরদাতাদের সমানভাবে বিভক্ত বলে মনে হয়েছে। ১১ দশমিক ৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে এবং ১২ দশমিক ৪ শতাংশ আমেরিকাকে ‘বৈরী’ বলে মনে করেছেন।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ উত্তর দিয়েছেন যখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় যে, ‘আপনারা কি মনে করেন যে, তুরস্কের বিদেশনীতি পরিচালনার সময় রাশিয়ার সাথে সহযোগিতা করা উচিত’?
জরিপে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘আপনার কি মনে হয় তুরস্কের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালনায় আমেরিকার সাথে সহযোগিতা করা উচিত’? এক্ষেত্রে ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ নাগরিক ‘না’ বলেছেন।
আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ‘সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে কোন দেশকে বেছে নিতে চান’ প্রশ্ন করা হলে ৭৮ দশমিক ৯ শতাংশ রাশিয়াকে বেছে নিয়েছেন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৫০ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ছিলেন।
জরিপে অংশ নেয়া ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল ১৮-২৪ বছরের, ২৩ দশমিক ২ শতাংশ ২৫-২৪ বছরের, ২৪ শতাংশ ৩৫-৫৪ বছর বয়সের, ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ ৪৫-৫৪ বছরের এবং ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সের। অংশগ্রহণকারীদের ৫২ দশমিক ২ শতাংশ তাদের শিক্ষার স্তরটি প্রাথমিক বলে উল্লেখ করেছেন, ২৬ শতাংশ উচ্চ বিদ্যালয় স্তর, ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ স্নাতক এবং ৩ দশমিক ১ শতাংশ স্নাতকোত্তর বলে জানিয়েছেন।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, কারাবাখ বিরোধ এবং লিবিয়ার সঙ্কটসহ অনেক আঞ্চলিক ইস্যুতে বিপরীত পক্ষ থাকা সত্ত্বেও তুরস্ক এবং রাশিয়া সর্বদা যৌথ কূটনৈতিক উদ্যোগ পরিচালনা এবং একটি সমাধানের জন্য সাধারণ ভিত্তি সন্ধানে সমর্থ্য হয়েছে।
আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উত্তেজনাপূর্ণ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে দ্বিমত পোষণ করেছে। তুরস্কের রাশিয়ান এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় থেকে শুরু করে আমেরিকার পিকেকে, ওয়াইপিজির সিরিয়ান শাখা সমর্থনের পাশাপাশি গ্যালেনিস্ট সন্ত্রাসবাদী দল (এফটিইটি)-এর নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে প্রত্যর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
দায়েশ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকা মূলত উত্তর সিরিয়ার ওয়াইপিজি সন্ত্রাসীদের সাথে অংশীদার হয়েছে। তুরস্ক উত্তর সিরিয়ায় ওয়াইপিজির উপস্থিতির তীব্র বিরোধিতা করে, যা আঙ্কার-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি প্রধান বিষয়।
দায়েশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো মিত্রদের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ সত্ত্বেও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ওয়াইপিজিকে ট্রাক বোঝাই সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে। একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে পরাভূত করতে অপরটিকে সমর্থন করা ত্রুটিযুক্ত বলে উল্লেখ করে তুরস্ক তার নিজস্ব সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে, যার ফলে তারা এ অঞ্চল থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সন্ত্রাসীকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
তবে, আঙ্কারা সম্প্রতি জোর দিয়ে বলেছে যে, রাশিয়ার সাথে দেশটির সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর সাথে সম্পর্কের বিকল্প নয়। সূত্র : ডেইলি সাবাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন