শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

করোনাকে ‘হারানো’ ইউরো

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২১, ১২:০৩ এএম

যে সময় হওয়ার কথা, করোনা সে সময় হতে দেয়নি। এক বছর পিছিয়ে যখন শেষ পর্যন্ত হতে যাচ্ছে, করোনা তখনো বিদায় নেয়নি পৃথিবী থেকে। তাতে কী! করোনার ভয়ে তো সব বন্ধ করে বসে থাকলে চলবে না। আজ রাত থেকে তাই মাঠে গড়াচ্ছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে জাতীয় দলগুলোর সবচেয়ে মর্যাদার আসর। তবে আনুষ্ঠানিক নামটা থাকছে আগের মতোই -ইউরো ২০২০।
কোনো এক দেশের মাটিতে নয়, ইউরোপের প্রতিটি প্রান্তে ফুটবল মহাযজ্ঞের যে পরিকল্পনা এঁটেছিল উয়েফা, অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ রাতে তা মাঠে গড়াচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রবল আঘাতে আসরটি এক বছর পিছিয়ে গেলেও নামে পরিবর্তন আসেনি। স্বাগতিক শহর কমে যাওয়ার মতো কিছু অদল-বদলের মধ্য দিয়ে অবশেষে শুরু হতে যাচ্ছে ইউরোপের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।
বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায় ইতালি ও তুরস্কের ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে প্রতিযোগিতাটির ষোড়শ আসর। গ্রুপ পর্ব শেষ হবে আগামী ২৩ জুন। নকআউট পর্ব শুরু ২৬ জুন, শেষ ষোলো চলবে ২৯ জুন পর্যন্ত। কোয়ার্টার-ফাইনাল হবে আগামী ২ ও ৩ জুলাই। সেমি-ফাইনালের ম্যাচ দুটি হবে ৬ ও ৭ জুলাই। ওয়েম্বলিতে ১১ জুলাইয়ের ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে জমকালো আসরের।
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২০ আসরকে বিশেষ রূপ দেওয়ার ঘোষণা এসেছিল আজ থেকে ৯ বছর আগে। ‘ফুটবলকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার’ পরিকল্পনায় প্রাথমিকভাবে ইউরোপের ১২টি শহরে ৫১ ম্যাচের আসরটি আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেভাবেই এগিয়ে নেওয়া হচ্ছিল সবকিছু; কিন্তু গত বছরের শুরুর দিকে সারা বিশ্বে মহামারী রূপ নেয় কোভিড-১৯। টুর্নামেন্টটি পিছিয়ে দেওয়া হয় এক বছরের জন্য।
তবে পুরনো সেই পরিকল্পনায় বদল আনা হয়নি। বরং কঠিন পরিস্থিতিতেও মাঠে দর্শক উপস্থিতি নিশ্চিত রাখতে শেষ মুহূর্তে স্বাগতিক শহরের তালিকা থেকে কাটা পড়েছে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন। ওই শহরে নির্ধারিত ম্যাচগুলো ভাগ করে দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ ও লন্ডনের ওয়েম্বলিতে। সব মিলিয়ে ১১টি শহরে হচ্ছে এবারের খেলা।
কয়েক মাস আগে আয়োজক শহরগুলোকে উয়েফার পক্ষ থেকে বলা হয়, স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতার অন্তত ২৫ শতাংশ দর্শক উপস্থিতির পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ম‚লত এ কারণেই ডাবলিনকে বাদ দেওয়া হয়। স্পেনের স্বাগতিক শহর শুরুতে ছিল বিলবাও। একই কারণে সেটিও বদলে গেছে, ওখানকার ম্যাচগুলো এখন হবে সেভিয়ায়।
বাছাইপর্ব উতরানো দেশগুলোর বেশিরভাগ এমন গ্রুপে রাখা হয়েছে যে গ্রুপের ভেন্যু তাদের শহর। যেমন-ইংল্যান্ড তাদের গ্রুপ ম্যাচগুলো খেলবে লন্ডনে, রাশিয়ার ম্যাচ সেন্ট পিটার্সবুর্গে, জার্মানির ম্যাচ মিউনিখে, ইতালির ম্যাচ রোমে। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম, লন্ডন, হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট, স্পেনের সেভিয়া, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, রোমানিয়ার বুখারেস্ট ও স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় হবে শেষ ষোলোর ম্যাচ। আর কোয়ার্টার-ফাইনাল হবে সেন্ট পিটার্সবুর্গে, মিউনিখ, আজারবাইজানের বাকু ও রোমে। সেমি-ফাইনাল ও ফাইনাল হবে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে।
গ্রুপ পর্ব থেকে নকআউট রাউন্ডে ওঠার প্রক্রিয়াটা ঠিক ২০১৬ আসরের মতোই। ২৪টি দল ছয় গ্রুপে (প্রতিটিতে ৪টি করে) ভাগ হয়ে শুরুর ধাপে অংশ নেবে। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ এবং তৃতীয় হওয়া দলগুলোর মধ্যে সেরা চারটি মিলে হবে ‘রাউন্ড অব সিক্সটিন।’ গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ শেষে একাধিক দলের পয়েন্ট সমান হলে গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকা দল পরের রাউন্ডে যাবে। তাতেও পার্থক্য করা না গেলে ক্রমান্বয়ে দেখা হবে-বেশি গোল করা, বেশি জয় পাওয়া, ফেয়ার প্লে অবস্থান।
তবে এই মহামারীকালে প্রতিটি দলেই দগদগে ছাপ রেখে গেছে করোনা। কেউ হারিয়েছে প্রিয়জন, তো কেউবা আবার নিজেই হয়েছেন আক্রান্ত। অদৃশ্য সেই শত্রুর বিপক্ষে লড়াই কাটিয়ে এবার পালা মাঠের লড়াইয়ে নামার। ইউরোপিয়ান ফুটবলের উন্মাদনায় মেতে ওঠার অপেক্ষায় যে দর্শকরাও!


ইউরো ২০২০ সূচি
গ্রুপ ‘এ’ : ইতালি, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ওয়েলশ
গ্রুপ ‘বি’ : বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, রাশিয়া
গ্রুপ ‘সি’ : অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, মেসেডোনিয়া, ইউক্রেন
গ্রুপ ‘ডি’ : ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড
গ্রুপ ‘ই’ : পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, স্পেন, সুইডেন
গ্রুপ ‘এফ’ : ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, পর্তুগাল

গ্রুপ পর্ব
তারিখ সময় ম্যাচ ভেন্যু
১১ জুন রাত ১টা তুরস্ক-ইতালি অলিম্পিক
১২ জুন সন্ধ্যা ৭টা ওয়েলশ-সুইজারল্যান্ড বাকু
১২ জুন রাত ১০টা ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড পার্কেন
১২ জুন রাত ১টা বেলজিয়াম-রাশিয়া ক্রেস্তোভস্তি
১৩ জুন সন্ধ্যা ৭টা ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ওয়েম্বলি
১৩ জুন রাত ১০টা অস্ট্রিয়া-মেসেডোনিয়া ন্যাশনাল
১৩ জুন রাত ১টা নেদারল্যান্ডস-ইউক্রেন আমস্টারডাম
১৪ জুন সন্ধ্যা ৭টা স্কটল্যান্ড-চেক প্রজাতন্ত্র হাম্পডেন
১৪ জুন রাত ১০টা পোল্যান্ড-স্লোভাকিয়া ক্রেস্তোভস্কি
১৪ জুন রাত ১টা স্পেন-সুইডেন কার্তুজা
১৫ জুন সন্ধ্যা ৭টা হাঙ্গেরি-পর্তুগাল পুস্কাস
১৫ জুন রাত ১টা ফ্রান্স-জার্মানি আলিয়াঞ্জ
১৬ জুন সন্ধ্যা ৭টা ফিনল্যান্ড-রাশিয়া ক্রেস্তোভস্কি
১৬ জুন রাত ১০টা তুরস্ক-ওয়েলশ বাকু
১৬ জুন রাত ১টা ইতালি-সুইজারল্যান্ড অলিম্পিক
১৭ জুন সন্ধ্যা ৭টা ইউক্রেন-মেসেডোনিয়া ন্যাশনাল
১৭ জুন রাত ১০টা ডেনমার্ক-বেলজিয়াম পার্কেন
১৭ জুন রাত ১টা নেদারল্যান্ডস-অস্ট্রিয়া আমস্টারডাম
১৮ জুন সন্ধ্যা ৭টা সুইডেন-স্লোভাকিয়া ক্রেস্তোভস্কি
১৮ জুন রাত ১০টা ক্রোয়েশিয়া-চেক প্রজাতন্ত্র হাম্পডেন
১৮ জুন রাত ১টা ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড ওয়েম্বলি
১৯ জুন সন্ধ্যা ৭টা হাঙ্গেরি-ফ্রান্স পুস্কাস
১৯ জুন রাত ১০টা পর্তুগাল-জার্মানি আলিয়াঞ্জ
১৯ জুন রাত ১টা স্পেন-পোল্যান্ড কার্তুজা
২০ জুন রাত ১০টা ইতালি-ওয়েলশ অলিম্পিক
২০ জুন রাত ১০টা সুইজারল্যান্ড-তুরস্ক বাকু
২১ জুন রাত ১০টা ইউক্রেন-অস্ট্রিয়া ন্যাশনাল
২১ জুন রাত ১০টা মেসেডোনিয়া-নেদারল্যান্ডস আমস্টারডাম
২১ জুন রাত ১টা রাশিয়া-ডেনমার্ক পার্কেন
২১ জুন রাত ১টা ফিনল্যান্ড-বেলজিয়াম ক্রেস্তোভস্কি
২২ জুন রাত ১টা ক্রোয়েশিয়া-স্কটল্যান্ড হাম্পেন
২২ জুন রাত ১টা চেক প্রজাতন্ত্র-ইংল্যান্ড ওয়েম্বলি
২৩ জুন রাত ১০টা সুইডেন-পোল্যান্ড ক্রেস্তোভস্কি
২৩ জুন রাত ১০টা স্লোভাকিয়া-স্পেন কার্তুজা
২৩ জুন রাত ১টা পর্তুগাল-ফ্রান্স পুস্কাস
২৩ জুন রাত ১টা জার্মানি-হাঙ্গেরি আলিয়াঞ্জ
নকআউট পর্ব (প্রতিপক্ষ নির্ধাতির হয়নি)
২৬ থেকে ২৯ জুন রাউন্ড অব সিক্সটিন
২ ও ৩ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনাল
৬ ও ৭ জুলাই সেমিফাইনালস
১১ জুলাই রাত ১টা ফাইনাল, ওয়েম্বলি
*বাংলাদেশ সময়


ইউরো রোল অব অনার
স্পোর্টস ডেস্ক : ইউরোপের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই দুয়ারে। আজ রাতেই শুরু হবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ষোড়শ আসর। আগের ১৫ আসরে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে ১০টি দেশ। সর্বোচ্চ তিনবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি ও স্পেন। দুইবার জিতেছে ফ্রান্স। একবার স্পেন শিরোপা জিতেছে টানা দুই আসরে।
১৯৬০ সাল থেকে হয়ে আসা মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টে একবার করে শিরোপা জিতেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোস্লাভাকিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগাল। স্বাগতিক দেশ ট্রফি তুলেছে তিনবার। এবার অবশ্য একক কোনো দেশে বসছে না আসর। মহামারী পরিস্থিতিতে এক বছর পিছিয়ে যাওয়া এই টুর্নামেন্টটি হবে ইউরোপের ১১টি শহরে।

ইউরোর রোল অব অনার
সাল চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপ স্বাগতিক
১৯৬০ সোভিয়েত ইউ. যুগোস্লাভিয়া ফ্রান্স
১৯৬৪ স্পেন সোভিয়েত ইউ. স্পেন
১৯৬৮ ইতালি যুগোস্লাভিয়া ইতালি
১৯৭২ পশ্চিম জার্মানি সোভিয়েত ইউ. বেলজিয়াম
১৯৭৬ চেকোস্লোভাকিয়া পশ্চিম জার্মানি যুগোস্লাভিয়া
১৯৮০ পশ্চিম জার্মানি বেলজিয়াম ইতালি
১৯৮৪ ফ্রান্স স্পেন ফ্রান্স
১৯৮৮ নেদারল্যান্ডস সোভিয়েত ইউ. পশ্চিম জার্মানি
১৯৯২ ডেনমার্ক জার্মানি সুইডেন
১৯৯৬ জার্মানি চেক প্রজাতন্ত্র ইংল্যান্ড
২০০০ ফ্রান্স ইতালি বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস
২০০৪ গ্রিস পর্তুগাল পর্তুগাল
২০০৮ স্পেন জার্মানি অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড
২০১২ স্পেন ইতালি পোল্যান্ড ও ইউক্রেন
২০১৬ পর্তুগাল ফ্রান্স ফ্রান্স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন