শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৫৬০টি মডেল মসজিদ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২১, ৫:০১ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ৫৬০টি দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ নির্মাণের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা’ একটি বিরল ঘটনা। পৃথিবীর কোনো দেশে এক সাথে এতোগুলো মসজিদ নির্মাণের নজির নেই। ইসলাম প্রচার প্রসারে মডেল মসজিদগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া সমাজে ইসলাম সম্পর্কে যে ভুল ধারণা বা অপসংস্কৃতি রয়েছে তা’দূর হবে। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে নবনির্মিত মডেল মসজিদের খতিবরা এসব কথা বলেন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মডেল মসজিদগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুসল্লিরা জুমার নামাজে অংশ নেন। ঢাকার নিকটবর্তী সাভার উপজেলা মডেল মসজিদে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। এ মসজিদটিতে পৃথক ব্যবস্থাপনায় মহিলারও জুমার নামাজে অংশ নেন।

ঢাকার নিকটবর্তী সাভার উপজেলা নবনির্মিত মডেল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মো.মারুফ বিল্লাহ আজ প্রথম জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে মহান আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ৫৬০টি দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ নির্মাণের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা’ একটি বিরল ঘটনা। পৃথিবীর কোনো দেশে এক সাথে এতোগুলো মসজিদ নির্মাণের নজির নেই। খতিব প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং তার দীর্ঘায়ূ কামনা করে বলেন, ইসলাম প্রচার প্রসারে মডেল মসজিদগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া সমাজে ইসলাম সর্ম্পকে যে ভুল ধারণা বা অপসংস্কৃতি রয়েছে তা’দূর হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের প্রচার প্রসার এবং দ্বীনের বেশি বেশি খেদমতের জন্য কবুল করুন। আমীন! করোনা থেকে মুক্তি, দেশ জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি উন্নতি সমৃদ্ধি কল্যাণ কামনা করেন মোনাজাত করেন খতিব।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ৫৬০টি মডেল মসজিদের মধ্যে বৃহস্পতিবার ৫০টির শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও খুব দ্রæত শেষ হবে ইনশাআল্লাহ। এটা একটা বিরল দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে দেশের ভাব-মর্যাদা আরও উজ্জ্বল হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। তবে মডেল মসজিদের পাশাপাশি "খোদাভীরু মডেল মুসলমান" গঠনে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। কারণ মানুষের মাঝে আল্লাহর ভয় না থাকলে দুনিয়া আখেরাতে শান্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন!

বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতীব মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকি নাদাবী আজ জুমার আরবি খুৎবার বয়ানে বলেন, ভাল ব্যবহার ও চারিত্রিক মাধুর্যতা দিয়েই মুসলমান তার হারানো নেতৃত্ব ও সম্মান ফিরিয়ে আনতে পারেন। মুসলমানদের অনেকেই না আল্লাহর সাথে ভাল ব্যবহার করেছে না একে অপরের সাথে। নির্ধারিত কিছু বিষয়ে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে মান্য করলেও আচার-আচরণ, সহনশীলতা ও চারিত্রিক মাধুর্যতার বড় অভাব। রাসুল (সা.) বলেন, মানুষ চারিত্রিক মাধুর্যতা দিয়ে রাত্রি জাগরণকারী ও দিনে রোজা আদায়কারীর মর্যাদা অর্জন করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা ভাল ব্যবহার কর! আল্লাহ তায়ালা ভাল ব্যবহারকারীকে ভালবাসেন। যে জাতি আল্লাহ তায়ালার সাথে, মানুষের সাথে,অন্য সৃষ্টির সাথে ভাল ব্যবহার করবে সে জাতি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও পার্থিব নেতৃত্ব-সম্মান দুটোই অর্জন করবে। জুমা শেষে মডেল মসজিদ উদ্বোধন করায় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ূ কামনা দেশে জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামান করেন বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে মন্ত্রি পরিষদ সচিব, ধর্ম সচিব উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা সদর মডেল মসজিদের খতিব প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল খায়ের মো. যাকারিয়া আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, সারাদেশে মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার সরকারকে মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, ইসলামের প্রচার প্রসারে অন্যান্য মসজিদগুলোর পাশাপাশি নতুন মডেল মসজিদগুলোও অগ্রণী ভূমিকার পালন করবে। সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার, পাপাচার, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে মডেল মসজিদগুলো বিরাট ভূমিকা রাখবে বলেও খতিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খতিব বলেন, সন্ত্রাস, মাদক, নৈরাজ্য ও নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এসব অপরাধ থেকে মানুষকে ফিরে আসতে হবে। খতিব সৎ কাজের আদেশ এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে সবাইকে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানান। মডেল মসজিদ নির্মিত হওয়ায় খতিব নামাজ শেষে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ূ কামনা এবং করোনা থেকে মুক্তির জন্য মোনাজাত করেন।

ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারি খতিব অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, জিলকদ মাস আসন্ন। ‘জিলকদ’ শব্দের অর্থ বিশ্রাম নেয়া বা স্থির হওয়া। জিলকদ মাসকে বিশ্রামের মাস বলার কারণ হচ্ছে, এ মাসের পূর্ববর্তী চার মাস ও পরবর্তী দুই মাস ইবাদত পালনের ব্যাপারে কোরআন-হাদীসে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যে কারণে জিলকদ মাসে মুসল্লিরা বিশ্রামের সুযোগ পায়। জিলকদ শব্দের আরেকটি অর্থ হলো উপবেষ্টনকারী। মাসটির এ নামকরণের কারণ হলো, জাহেলী যুগেও লোকেরা এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বিরত থাকত।

জিলকদ মাস ইসলাম পূর্ববর্তী যুগ থেকেই সম্মানিত মাস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ মাসে হাজীরা হজের উদ্দেশ্যে মক্কায় রওয়ানা হতেন। এ সময় সম্মানিত মাস হওয়ার কারণে শত্রæর আক্রমণের ভয় থেকে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারতেন। এ মাসে এমন কিছু ঘটনা আছে যা ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে এ মাসে হুদায়বিয়ার সন্ধি সংঘটিত হওয়া, বাইয়াতে রিদওয়ান সংঘটিত হওয়া, নবম হিজরীতে মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ হওয়া, সপ্তম হিজরী সনে রাসুল (সা.)-এর প্রথম ওমরাহ পালন, রাসুল (সা.)-এর জীবনের সব ওমরাহ পালন ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

খতিব বলেন, মহান আল্লাহ বলেন, কালের শপথ! প্রকৃতই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততার মাঝে নিমগ্ন; কিন্তু তাদের ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে। (সূরা আসর, আয়াত নং ৩)। নেক আমলের প্রতিদান হচ্ছে নিশ্চিত জান্নাত। আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গকারীর মতো। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, তিনি (সা.) এটাও বলেছেন যে, বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী রাতজাগা ইবাদাতকারীর মতো, যে অলসতা করে না এবং ঐ রোযাদারের মতো যে কক্ষনো সওম ভঙ্গ করে না। (মিশকাত শরীফ, হাদীস নং ৪৯৫১)
করোনার এই ভয়াবহ পরিবেশে হজে যাওয়া অনিশ্চিত। তাই নেক আমলের ধারা অব্যহত রাখুন। মহান আল্লাহ আমাদের সকল গুনাহ মাফ করুণ এবং তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা ও বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুণ। আমীন!

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমার বয়ানে বলেন, সমাজে মাদক এবং জুয়া যেনা ব্যভিচার মহামারি আকার ধারণ করেছে। এই মহামারি থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে কোরআনের অনুশাসন মেনে চলতে হবে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারীমে বলেন, তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে? বলে দাও এগুলোর মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। মানুষের জন্য সামান্য উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক জঘন্যতম। সূরা বাকারা আয়াত নং ২১৯। আরেকটি বিষয়ের উপরে গুরুত্ব দিতে হবে। পিতাকে হতে হবে হালাল উপার্জনকারি। মাকে হতে হবে সৎ চরিত্রবান ও এবাদত কারিনী। সন্তানকে হতে হবে সৎসঙ্গ তবে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুন্দর সমাজ দান করবেন। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন!

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Sarwar Hossain ১৩ জুন, ২০২১, ১:২৫ পিএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। চমৎকার একটি উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।
Total Reply(0)
Sarwar Hossain ১৩ জুন, ২০২১, ১:৩৫ পিএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। চমৎকার একটি উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন