মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মূলধন বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ অবস্থানে পুঁজিবাজার

টানা পাঁচ সপ্তাহ বাড়লো বাজার মূলধন # বাজেট পরবর্তী সপ্তাহে পুঁজি ফিরল হাজার কোটি টাকা # এক সপ্তাহে লেনদেন প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

বিধি-নিষেধের মধ্যেই রেকর্ডেরও রেকর্ড ভাঙছে দেশের পুঁজিবাজার। বাংলাদেশের ইতিহাসে পুঁজিবাজারে যা আগে কখনো ঘটেনি। এর মধ্যে সমাপ্ত সপ্তাহে সবোর্চ্চ অবস্থানে উঠে পুঁজিবাজার। এই সময়ে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বেড়ে পাঁচ লাখ নয় হাজার ৯৩৭কোটি ৭৭ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। যা বাজার মূলধনের দিক দিয়ে পুঁজিবাজার অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ মূলধন বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ সিংহাসনে উঠেছে পুঁজিবাজার। শুধু তাই নয় সপ্তাহ জুড়ে গড়ে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকার উপরে হয়েছে। এর মধ্যে গত বুধবার লেনদেনে সর্বকালের রেকর্ড ভাঙার পথে ছিল। অর্থাৎ আর মাত্র সাড়ে ১০ কোটি টাকা বেশি লেনদেন হলেই এই রেকর্ডটি হয়ে যেতো। সেদিন লেনদেন হয়েছিল ২৭০০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার। এর আগে ২০১০ সালে একবার লেনদেন হয়েছিল ২৭১১ কোটি টাকার শেয়ার। লেনদেনে না পারলেও মূলধনে এক সপ্তাহে দুইবার রেকর্ড ভাঙা-গড়া হয়েছে।

ডিএসইর তথ্য মতে, গত বৃহস্পতিবার ২০২১-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দিন লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ১৮২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এই দিনে ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিন থেকে তিন হাজার ৭২১ কোটি টাকা বেড়ে পাঁচ লাখ আট হাজার ৯৪৭ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এরপর গত বুধবার তা ভেঙে দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়লো পুঁজিবাজার।
এদিকে গত এক সপ্তাহে মূলধনে বাড়লো প্রায় হাজার কোটি টাকা। ডিএসইর তথ্য মতে, তিনদিন উত্থান আর দুদিন সূচকের সামান্য পতনের সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৫ টাকা। আগের সপ্তাহের চার কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১০ হাজার ২৫৮ কোটি ৬৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০৯ টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে ৯২৯ কোটি টাকা। যা শতাংশের হিসাবে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারকে নিয়ে ‘নেগেটিভ’ কিছু রাখা হয়নি। বরং বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। বস্ত্র খাতে এক শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি প্রকৌশল, সিমেন্ট এবং চামড়া খাতের বেশি কিছু কোম্পানিকে কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
এসব কারণে বাজেটের পর স্বস্তি ফিরে পেয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এতে একদিকে সূচকের উত্থান হচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। অপরদিকে বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পাচ্ছেন।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বাজেটে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল অনেক। ফলে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা, বন্ডের কর কমানোর এবং তালিকাভুক্ত অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান কমানো এগুলোর কোনো টাই নেই। সেই ধাক্কায় প্রথম দুদিন দরপতনও হয়েছে। আমাদের মধ্যে ভয় ছিল মার্কেট পড়বে। তবে সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠেছে এখন এই ভয় বিনিয়োগকারীদের কেটে গেছে।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, করোনাকালের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নতুন করে নেগেটিভ কিছু আরোপ করা হয়নি। এটা বাজারের জন্য পজিটিভ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, এবারে বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর ২৫ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ কমানো হয়েছে। যা পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত পজিটিভ বিষয়। এতে কোম্পানিগুলো আগামীতে আরো ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে। সাধারণ কোম্পানির মতোই ব্যাংক-বিমা কোম্পানির করপোরেট কর কমানো হলে বাজারে আরো বেশি পজিটিভ ইমপ্যাক্ট পড়তো।
প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারে জন্য পজিটিভ বলে উল্লেখ করেছেন ডিএসইর সাবেক পরিচালক শরিফ আতাউর রহমান বলেন, সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট হয়েছে। তবে বিনাশর্তে কালো টাকার সাদা করার সুযোগ দেয়া হলে আরো পজিটিভ হতো।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, এবারের বাজেট ভালো হয়েছে। তবে কালো টাকা বিনিয়োগসহ আমরা চারটি দাবি অর্থ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি, এগুলো বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারের আরো ভালো হবে। বর্তমানে দুই হাজার কোটি টাকার কোটায় লেনদেন হচ্ছে। এটা আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার কোটায় লেনদেন হবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, করপোরেট কর কমানো হয়েছে। কালোটাকার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আশা করছি, বাজেটে সংযোজন করা হবে। এছাড়াও বন্ড মার্কেটকে গতিশীল ও লেনদেনযোগ্য করতে কর ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি, এগুলো পেলে পুঁজিবাজার আরো গতিশীল হবে।
বাজার বিশ্লেষনে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর দরপতনের শঙ্কা কাটিয়ে উত্থানের মধ্য দিয়ে আরো একটি সপ্তাহ পার করল দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাংক-বিমা, কোম্পানির পাশাপাশি বস্ত্র, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ারের দাম বেড়েছে বাজেট পরবর্তী প্রথম সপ্তাহে।
সবকিছুর দাম বাড়ায় বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে নতুন করে বাজার মূলধন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বাড়ল। ফলে টানা পাঁচ সপ্তাহ বাজার মূলধন বেড়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২১১টির, কমেছে ১৪২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির শেয়ার দাম। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছিল ১৯২টির, কমেছিল ১৩০টির, অপরিবর্তিত ছিল ৪৯ কোম্পানির শেয়ার দাম। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ছয় দশমিক ৩১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক দুই পয়েন্ট বেড়েছে। বেশিরভাগ শেয়ারের দাম ও প্রধান সূচক বাড়ায় ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ৯৯০ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার ৫৮৭ টাকা বেড়ে পাঁচ লাখ নয় হাজার ৯৩৭ কোটির ৭৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে : বেক্সিমকো লিমিটেড, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্স, ফরচুন সুজ, ন্যাশনাল ফিড মিলস, সন্ধানী লাইফ, ইফাদ অটোস, এরআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স লিমিটেড।
অন্যদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৫২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৩ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৩৪ টাকা। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে দেড়শত কোটি টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯৩টির, কমেছে ১২৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে সিএসইর প্রধান সূচক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে ১৭ হাজার ৫৮৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন