বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

যেভাবে ইরানে একের পর এক অভিযান চালানো হয়েছে তার বর্ণনা দিলেন মোসাদের সাবেক প্রধান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২১, ১০:৪৯ এএম

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ যেভাবে ইরানে একের পর এক অপারেশন পরিচালনা করেছে, তার রোমহর্ষক বর্ণনা তুলে ধরেছেন মোসাদ প্রধানের দায়িত্ব থেকে সদ্য বিদায় নেয়া ইয়োসি কোহেন।
ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে কীভাবে নথিপত্র চুরি করা হয়েছিল, সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তারও বিস্তারিত তুলে ধরেছেন ইয়োসি কোহেন। ২০১৮ সালে আর্কাইভে ওই অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নথিপত্র চুরি করে ইসরায়েল নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইরানের পরমাণু স্থাপনা নাতাঞ্জে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছিল এবং ইরানের একজন পরমাণু বিজ্ঞানীর হত্যার পেছনেও ইসরায়েলি সম্পৃক্ততা রয়েছে। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তারও বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তিনি। ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-এর সাংবাদিক ইলানা ডায়ানকে তিনি এই সাক্ষাৎকারটি দেন, যা ইসরায়েলে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রচারিত হয়।
বিবিসির নিউজ অনলাইনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক রাফি বের্গ বলছেন, মোসাদের সাবেক প্রধানদের সাক্ষাৎকার দেওয়া বা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দেওয়া নতুন নয়। কিন্তু ইয়োশি কোহেন এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা বিস্ময়কর।
এই প্রথমবারের মতো তিনি স্বীকার করার কাছাকাছি গেছেন যে, ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্রে নাশকতার পেছনে ইসরায়েল জড়িত রয়েছে। তবে অনেক হিসাব-নিকাশ করে সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হয়েছে এবং সেটি ইসরায়েলের সামরিক সেন্সর পার হয়ে এসেছে।
২০১৫ সালে মোসাদের প্রধান হিসাবে ইয়োশি কোহেনকে নিয়োগ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে পড়াশোনা শেষে ১৯৮২ সালে তিনি এই গোয়েন্দা সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছেন, এই পেশায় থাকার সময় তার শত শত পাসপোর্ট ছিল। তার সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে রোমহর্ষক অংশ ছিল, যখন তিনি ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে চুরির বিস্তারিত জানাতে শুরু করেন।
২০১৮ সালে একটি সংবাদ সম্মেলনে চুরি যাওয়া এসব নথির উল্লেখ কথা উল্লেখ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে, ইরান একবার গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেছে এবং অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি তাদের আছে। কিন্তু ইরান বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইন্টারভিউতে কোহেন বলেন, ইরানে ওই অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে তাদের দুই বছর লেগেছে। সেখানে ২০ জন মোসাদ এজেন্ট অংশ নিয়েছিলেন, যাদের একজনও ইসরায়েলি নাগরিক নন।
তেলআবিবের একটি কমান্ড সেন্টার থেকে ওই অপারেশন নজরদারি করেন মোসাদ প্রধান। এজেন্টরা ওয়্যারহাউজের ভেতরে প্রবেশ করে ৩০টির বেশি সিন্দুক ভাঙ্গে।
ইসরায়েলি পত্রিকা দ্য টাইমস অব ইসরায়েল’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক এই মোসাদ প্রধান বলেছেন, ‘যখন সেসব নথিপত্রের ছবি স্ক্রিনে দেখানো হয়, তা ছিল আমাদের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর।’
ওই অভিযানে অংশ নেওয়া সবাই বেঁচে ফিরে এসেছেন এবং ভালো আছেন, যদিও তাদের কয়েকজনকে ইরান থেকে বের করে আনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এই হাজার হাজার নথিপত্র পাওয়ার কথা ইসরায়েল প্রকাশ্যেই বলে আসছে। কিন্তু কোহেন আরও কিছু অপারেশনে মোসাদের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি এজেন্টরা করেছে বলে গুঞ্জন ছিল।
সাক্ষাৎকারের শুরুর দিকে ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের বিষয়ে বলেন কোহেন। ইরান জানিয়েছিল, ২০২০ সালের জুলাই মাসের ওই নাশকতার ঘটনায় নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অংশে আগুন লাগে। এই বছরের এপ্রিল মাসে নতুন সরঞ্জাম সংযোজনের পরদিনই কর্মকর্তারা জানান, সেখানে আবার নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেসব ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘পরমাণু সন্ত্রাসের’ অভিযোগ আনে ইরান।
ডায়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোহেন বলেন, তিনি ওই পরমাণু স্থাপনা সম্পর্কে এতো ভালোভাবে জানেন যে, যেখানে ঘূর্ণায়মান যে সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে, সেখানেও তাকে তিনি নিয়ে যেতে পারবেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফাখরিজাদেহকে নিয়েও কথা বলেন। ইরানের এই পরমাণু বিজ্ঞানী গত নভেম্বরে তেহরানের উপকণ্ঠে একটি সড়কে আততায়ীর হামলায় নিহত হন। ওই হামলার জন্য প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছে ইরান।
ওই মৃত্যুর সঙ্গে মোসাদের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার বা অস্বীকার করেননি সাবেক প্রধান। কিন্তু তিনি বলেছেন, ওই বিজ্ঞানীকে বহু বছর ধরে ‘টার্গেট’ করা হয়েছিল, কারণ তার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান মোসাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল।
তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে ওঠেন, তাহলে তাকে অবশ্যই থামতে হবে। তবে কেউ যদি পেশা পরিবর্তন করে বা আর ক্ষতি না করে, তাহলে তিনি বেঁচে যেতে পারেন।’
এই সাক্ষাৎকার এমন সময়ে দেওয়া হলো যখন বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তির পুনর্জীবন নিয়ে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
habib ১২ জুন, ২০২১, ১১:১৬ এএম says : 0
Iran should stop UN inspection to Iran nuclear site asap. because all they're CIA and Musad agent.
Total Reply(0)
Nayem Hossain ১২ জুন, ২০২১, ১২:১৩ পিএম says : 0
সামনাসামনি কিছু করার সাহস নেই পারে শুধু পেছনে থেকে ছুরি মারতে।লানত
Total Reply(0)
M Shirazul Islam Shohag ১২ জুন, ২০২১, ১২:১৩ পিএম says : 0
যতই লোমহর্ষক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। ইরান থামবে না।আমি আমার ছোট জ্ঞানেই বলি- ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র না থাকলেও পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র ( মিসাইল) আছে! না হলে এতোদিন আমেরিকা-ইসরাইল তালেবান থাকার অজুহাত দিয়ে হামলা করে বসত
Total Reply(0)
Sanaullah Azad ১২ জুন, ২০২১, ১২:১৪ পিএম says : 0
ইসরাইল এক‌টি অবৈধ রাষ্ট্র এবং অচিরেই তার স‌লিল সমা‌ধি ঘট‌বে।
Total Reply(0)
Dadhack ১২ জুন, ২০২১, ১২:১৪ পিএম says : 0
ইরানকে ইজরাইল বছরের পর বছর মারছে, আর ইরান শুধু মার খাচ্ছে ইসরাইলের কাছে কিন্তু ইরান কখনও ইসরাইলকে অ্যাটাক করে না. কেন অ্যাটাক করে না ??? এটার কারণ কি????
Total Reply(0)
Rony Iqbal ১২ জুন, ২০২১, ১২:১৪ পিএম says : 0
সৃষ্টির পর থেকে এ জাতিটা পেছন থেকেই ছুরি মারে
Total Reply(0)
Naiem ১২ জুন, ২০২১, ১২:১৬ পিএম says : 0
এইটা একটা বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছু নয়। শেষ সময় এসে মনস্তাত্ত্বিক ঢিল মারা।
Total Reply(0)
শফিক ১২ জুন, ২০২১, ১২:১৬ পিএম says : 0
তবে শুধু মোসাদ না, এমন সময় আসবে সেদিন মোসাদের চৌদ্দ গুষ্ঠিকে থামতে হবে ইনশাআল্লাহ!! আর যে "মেঘ যত গর্যে তত বর্ষে না" জঙ্গি সংগঠন মোসাদ যতটুকু বলে তার থেকে খুব নগন্যই করে!! এটা শত্রুকে সাময়িক ভাবে ভয় দেখানোর জন্য করে থাকে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন