সম্প্রতি সিলেটে হওয়া দফায় দফায় ভূমিকম্প মানবসৃষ্ট নয়, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। ঢাকা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে, এমন অভিমত জানালেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের জৈষ্ট আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী। তার অভিমতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মধ্যে হলো, ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধানে আসা জাতীয় কমিটির সদস্যরা সিলেট ও আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করে আজ (রোববার)। এ ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন ভূমিকম্প মানবসৃষ্ট নয়, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। তবে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিবে এ তদন্ত টিম। শনিবার সিলেটে আসা পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল সকালে গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন করেন। এরপর তারা সিলেট আবহাওয়া অফিসে এসে ভূমিকম্পকালীন সময়ের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে তারা সর্বশেষ ৭ জুন হওয়া ভূমিকম্পে ফাটল ধরা বন্দরবাজারস্থ রাজা জিসি হাই স্কুলের কামরান ভবনটিও পরিদর্শন করেন। এরপর ঢাকার উদ্দ্যেশে রওয়ানা দেন জাতীয় কমিটির এই বিশেষজ্ঞ টিমটি। ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধানে সিলেটে আসা দলটির নেতৃত্ব দেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রোডাক্ট শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) প্রকৌশলী মো. শাহীনুর ইসলাম। এছাড়াও তদন্ত কমিটিতে ছিলেন বাপেক্সের ১ জন জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তা, পেট্রোবাংলার ১ জন জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন প্রফেসর।
অপরদিকে, অধিকতর তদন্তে ও ভূমিকম্পের আগে পরে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের একটি দল শীঘ্রই সিলেটে আসছে।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটে ভূমিকম্প হলে উৎপত্তিস্থল সাধারণত ডাউকি ফল্টের আশপাশেই হয়। কিন্তু এবার নতুন এক উৎপত্তিস্থল নতুন বিপদের শঙ্কায় ফেলছে। তাদের মতে, সিলেটে দীর্ঘকাল ধরে নিসক্রিয় থাকা কোনো ফল্ট লাইন এখন সক্রিয় হয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে। সেরকম কিছু হলে ভূমিকম্প সিলেটের জন্য আরও হতে পারে অকল্পনীয় ভয়াবহ। তবে নতুন ফল্ট লাইনের সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে প্রয়োজন পরীক্ষানিরীক্ষার।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘ছোট ছোট ফল্ট অনেক জায়গায় থাকতে পারে, অনেক ফল্ট তো আবিষ্কারই হয়নি। ফেনীতে একটা ফল্ট লাইন নিষ্ক্রিয় ছিল দীর্ঘ সময়। কিন্তুতিন-চার বছর আগে পরীক্ষায় ধরা পড়ে, সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওই ফল্ট লাইন। সিলেটেও হতে পারে সেরকম। তাই পরীক্ষা করতে হবে নিষ্ক্রিয় কোনো ফল্ট লাইন সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিনা। তা পরীক্ষা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নিশ্চিত না হলেও বড় শঙ্কা আছে, সিলেটে এখন এমন কিছু ফল্ট লাইন পাওয়া যাবে, যেগুলো আগে নিষ্ক্রিয় ছিল, কিন্তু এখন হয়ে উঠেছে সক্রিয়। সক্রিয় হয়ে ওঠা ফল্ট লাইনের ‘ক্র্যাক’ যদি বাড়তে থাকে, তবে তা আতঙ্কের বিষয় বলেও মন্তব্য করেন ড. জহির।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন