বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

জি-৭ জোটকে হুঁশিয়ারি চীনের

উন্নয়নশীল দেশগুলোয় টিকাদানে ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৬৫০ কোটি ডলার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট জি-৭ এর নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। তারা জানিয়েছে, একটি ছোট গ্রæপ বিশ্বের ভাগ্য ঠিক করবে এমন দিন অনেক আগেই চলে গেছে। লন্ডনে চীনা দ‚তাবাসের এক মুখপাত্র এসব বলেন বলে রবিবার উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা সর্বদা বিশ্বাস করি বড় বা ছোট, শক্তিশালী বা দুর্বল, দরিদ্র বা ধনী দেশ- সবাই সমান। বিশ্বে বিষয়গুলো সমস্ত দেশের পরামর্শের মাধ্যমে পরিচালনা করা উচিত।’ জি-৭ এর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, ইটালি, ফ্রান্স এবং জাপান। জানা গেছে, নিম্ন-মধ্যম আয়ের কোম্পানিগুলোকে উন্নত অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন অর্থনৈতিক জোট জি-৭ এর সদস্য দেশগুলোর নেতারা। এবছর ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জি-৭ সম্মেলন। বিবৃতিতে জি-৭ নেতারা জানিয়েছেন, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য তারা ম‚ল্যবোধ দ্বারা চালিত, উচ্চমানের এবং স্বচ্ছ অংশীদ্বারিত্বের প্রস্তাব দেবেন। তবে এই প্রকল্পের অর্থায়ন কীভাবে হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। এছাড়া আশা করা হচ্ছে, এবারের সম্মেলনে মহামারি মোকাবেলা নিয়েও একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন জি-৭ নেতারা। বিশ্বকে বিপর্যস্ত অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে কভিড-১৯ মহামারী। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে কভিড প্রতিরোধী টিকা। এরই মধ্যে ধনী দেশগুলো তাদের বেশির ভাগ নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে এসেছে। তবে পিছিয়ে আছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এক্ষেত্রে মহামারীর সমাপ্তি টানতে বিশ্বজুড়ে টিকাদান কার্যক্রম বিস্তৃতির উদ্যোগ নিচ্ছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭। জোটের পরিকল্পনা অনুযায়ী, টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের মেধাস্বত্ব অধিকার মওকুফে রাজি করানোর চেষ্টা করা হবে। এটি সফল হলে মাত্র ৬৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

মেধাস্বত্ব অধিকার মওকুফ নিয়ে টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছতে না পারলে এ ব্যয় পর্বতসম হবে। দাতব্য প্রতিষ্ঠান অক্সফামের হিসাব অনুযায়ী, এক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় টিকাদান কার্যক্রমের ব্যয় ৮ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, জি৭ নেতাদের অবশ্যই সবচেয়ে কার্যকর টিকা উৎপাদনের জন্য একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ককে সমর্থন করতে হবে। এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো নিরাপদে ও কার্যকরভাবে কভিড প্রতিরোধী টিকার ডোজ পেতে পারে। অক্সফামের এক মুখপাত্র বলেন, মেধাস্বত্ব অধিকার মওকুফ না করা হলে পর্যাপ্ত ডোজ পাওয়ার জন্য আমাদের ১০ গুণ বেশি ব্যয় করতে হবে। আর এ অর্থ সরাসরি সংস্থাগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের পকেটে যাবে। এ শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা অন্তত ১০০ কোটি ডোজ অতিরিক্ত টিকা সরবরাহ করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এর মাধ্যমে আগামী বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার টিকার অর্ডার থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় অতিরিক্ত ৫০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ১০ কোটি ডোজসহ জি৭ নেতারা ২০২২ সালের মধ্যে মোট ১০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবেন। যদিও এ পরিমাণ টিকা দিয়ে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশের পর্যাপ্তসংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। তাদের মতে, এক্ষেত্রে দেশগুলোর প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে টিকা দিতে এক হাজার কোটিরও বেশি ডোজের প্রয়োজন হবে। এদিকে কভিড-১৯ টিকার পেটেন্ট মওকুফে দক্ষিণ আফ্রিকার আহŸানে সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সমর্থনের ক্ষেত্রে তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তবে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল এ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বার্লিন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব মওকুফের পরিকল্পনা টিকা তৈরির ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা তৈরি করবে। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প যুক্তি দেখিয়েছে, মেধাস্বত্ব অধিকার রক্ষা করা উদ্ভাবনের জন্য জরুরি।

গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় থেকে মুনাফার অনুপ্রেরণা ছাড়া ভবিষ্যতে টিকা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ হারাতে পারে। উচ্চ কার্যকারিতা এবং উৎপাদন করা সহজ এমন তিনটি টিকার দুটিই জার্মান প্রতিষ্ঠানের তৈরি। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকাটি বিশ্বজুড়ে টিকাদান কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কিউরভ্যাক টিকাটি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের স্বল্পোন্নত ৯২টি দেশে টিকাদান কার্যক্রমের জন্য ৬ হাজার কোটি ডলার তহবিল গঠনে জি৭-এর প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে এ দেশগুলোয় টিকাদান কার্যক্রম চলছে। এখনো কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশিত না হলেও কোভ্যাক্স প্রতি ডোজ টিকার জন্য ৪ থেকে ১০ ডলার করে প্রদান করছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা, ম্যাক্সিকো, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলো কোভ্যাক্সের বাইরে থেকে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, টিকা কিনতে কোভ্যাক্সের চেয়ে তার সরকারকে বেশি অর্থ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। আর জি৭-এর উদ্যোগে টিকার মেধাস্বত্ব মওকুফ এবং বিভিন্ন দেশে উৎপাদন বিস্তৃত করা না হলে তাদের টিকার চালানের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। অক্সফাম বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলো যদি পর্যাপ্ত টিকার জন্য চুক্তি করতে না পারে, তবে দেশগুলোর টিকাদান কার্যক্রমের সামগ্রিক ব্যয় ৪ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে। যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালের কারবিস বেতে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন জি৭ নেতারা। ৪৭তম এ সম্মেলনে তারা কভিড-১৯ মহামারীর সমাপ্তি এবং ভবিষ্যৎ মহামারীর ঝুঁকি রোধে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করছেন। বিবিসি, গার্ডিয়ান।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Md Abu Syed ১৪ জুন, ২০২১, ১:৫২ এএম says : 0
চীনের পক্ষ থেকে অত্যন্ত সুন্দর কথা বলা হয়েছে।
Total Reply(0)
সৈকত ফকির ১৪ জুন, ২০২১, ১:৫২ এএম says : 0
চীন-রাশিয়অ এক জোট হলে ধনী দেশগুলোর আর মোড়লীপনা চলবে না।
Total Reply(0)
রক্তিম সূর্য ১৪ জুন, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
সাবাস চীন। এভাবেই হুঙ্কার দেয়া দরকার। জি-৭ এর পৈতৃক বিশ্ব না।
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ১৪ জুন, ২০২১, ১:৫৪ এএম says : 0
আমিও মনে করি,, একটি ছোট গ্রæপ বিশ্বের ভাগ্য ঠিক করবে এমন দিন অনেক আগেই চলে গেছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন