শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে জন্মতারিখ নিয়ে রিট : ফখরুল

জাতীয় পরিচয়পত্রের কর্তৃত্ব হস্তান্তর বিষয়ে উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই ‘ভুয়া রিপোর্ট’ বানিয়ে খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ নিয়ে রিট করা হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখের নথি তলব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, যে বিষয়টার (খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ) কথা বলা হয়েছেÑ এটা তো ফেইক। এভারকেয়ারের যে রিপোর্টের কথা বলা হয়েছে, এই ধরনের কোনো রিপোর্টই এভারকেয়ার করে নেই। যে তারিখটা বসিয়েছে তারাÑ এটা ফলসলি করা হয়েছে। যে কাগজটা তারা দিয়েছে যার উপরে আদালত একটা হুকুম দিয়েছে। এই হুমুকটা আমি জানি না, একজন ল’ ইয়ার.. এটা কিভাবে দিলেন?

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে রাজনীতি নেই। এখন তাদের উদ্দেশ্যই একটিÑ এই ধরনের (জন্মদিন) ইস্যুগুলো তুলে এনে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা, অন্যদিকে ডায়ভার্ট করার চেষ্টা করা, মূল সমস্যা থেকে জনগণকে ভুল দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। আর কিছুই না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এসব তারা করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে একদলীয় শাসনে দেশ চলছে। এটা থেকে প্রমাণিত হয়Ñ জুডিশিয়ারি ইজ নট ফ্রি। জুডিশিয়ারির কিন্তু এটা আমলেই নেওয়া উচিত ছিল না। দে শুড হেল বিন টোটালি রং।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেনÑ বহু লোকের কিন্তু জন্মতারিখ আসল একটা, আর সার্টিফিকেটে তারিখ আরেকটা আছে। কারণ হচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের জেনারেশনের সময়ে তখন সঠিকভাবে বাবা-মায়েরা জন্মতারিখ মনে রাখতে পারতেন না। জন্ম কবে হয়েছে, ডায়েরি-টায়েরি মেইনটেইন করতেন না। ফলে দুই রকম হতে পারে।

এটা কোনো দিন ইস্যু হতে পারে না, মন্তব্য করে তিনি বলেন, হ্যাঁ, এখন পার্টিকুলার একটা ডেটে কেউ জন্ম নিতে পারবে নাÑ এটা একটা ঘোষণা দিয়ে দিলে তো হয়ে যায়। নো বডি ওইদিন, হিসাব করে আপনাকে সন্তানের জন্মদানের কথা চিন্তা করতে হবে। এছাড়া তো উপায় নেই।
গত ১২ জুন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয় তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। স্থায়ী কমিটির ওই ভার্চুয়াল বৈঠকর জাতীয় পরিচয়পত্রের এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যাবলীর কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যাবলী ইতিপূর্বে নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বে পরিচালিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে যারা কমিশনের দায়িত্ব পালন করছেন, তারা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলেও কমিশন সংবিধান অনুযায়ী একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করার কথা।

মির্জা ফখরুল বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের অধীন মন্ত্রণালয়। বিগত এক যুগের অভিজ্ঞতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অনির্বাচিত সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কর্তৃত্ব হস্তান্তর করা হলে তা স্বাধীন নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম সম্ভাবনাটুকুও বিনষ্ট করবে।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে এই ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের ন্যূনতম পরিসরকেও ধ্বংস করবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে চিরতরে ধ্বংস করবে। বিএনপি অবিলম্বে এই ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যথায় এর নেতিবাচক প্রভাবের জন্য সরকারকেই সব দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনাভাইরাস ভীতিকরভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১২টি জেলায় এর সংক্রমণের হার শতকরা ৫০ ভাগ ছড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর হারও বেড়েছে। ক্রমশ এই ভাইরাস সারা দেশে তৃতীয় ঢেউ সৃষ্টি করছে। জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত টেস্ট এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে। সেসঙ্গে জেলা হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় বেড, অক্সিজেন ও আইসিইউ না থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিএনপি ইতিপূর্বেই এই বিষয়ে সতর্ক করেছিল কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক করেছে। কিন্তু সরকারের দুর্নীতি, অযোগ্যতা, উদাসীনতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ, বিতরণের বিষয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। চুক্তি করা ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে না পারা, বিকল্প উৎসের সন্ধান না করা, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদনের কোনো উদ্যোগ নিতে না পারা তাদের দুর্নীতি ও অযোগ্যতার জন্য সার্বিক ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে এবং সমগ্র জাতিকে আজ বিপন্ন করেছে। বারবার বলা সত্ত্বেও তারা জনগণের সামনে কোনো স্পষ্ট রোড ম্যাপ দিতে পারেনি। অবিলম্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে দুর্নীতিতে যুক্ত কর্মকর্তাদের অপসারণ ও তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন