বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

করোনা ভ্যাকসিনেশন দ্রুতায়িত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনা অতিমারী মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ যেকোনো রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রধান অবলম্বন হিসেবে বিবেচিত হবে। করোনার শুরু থেকেই বিশ্বসংস্থা ও আন্তজার্তিক বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে এ ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে করোনার বেশকিছু সফল টিকা বাজারে এসেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে নাগরিকদের টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বলা হচ্ছে. শতকরা ৮০ ভাগ নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে পারলেই করোনা ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অপ্রত্যাশিতভাবে পিছিয়ে রয়েছে। মূলত টিকায় ভারত নির্ভরতার কারণেই বাংলাদেশের এই পিছিয়ে পড়া। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি করে তিন কোটি ডোজ টিকার অর্থ আগাম পরিশোধ করার পর ভারত সরকার বাংলাদেশে টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় ফেব্রুয়ারীতে শুরু হওয়া টিকাদান কর্মসূচি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রায় চার মাস ধরে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের কোভিড মোকাবেলা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। দেশের সীমান্ত জেলাগুলোতে ভারতীয় ভেরিয়েন্টের করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং তা ক্রমে বিস্তার লাভ করছে। এহেন বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিন কুটনীতি জোরদার করছে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা কোভিড ভ্যাকসিনেশনে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর উপর নানাভাবে খবরদারি করতে শুরু করবে। ভ্যাকসিনেশনে পিছিয়ে থাকলে আমাদের রফতানি বাজার হারানোর আশঙ্কা করছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ), দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট(র‌্যাপিড) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাজেটোত্তর পর্যালোচনা সভায় বক্তারা ভ্যাকসিনেশনের উপর বেশি জোর দিয়েছেন। এ জন্য তারা বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে বলেছেন। আলোচনা সভায় বক্তাদের মতের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ভ্যাকসিনেশন ও হার্ড ইমিউনিটি নিশ্চিত না হলে তৈরী পোশাক খাতের বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে চাইবে না। অতীতে কমপ্লায়েন্স নিয়ে শর্তারোপের মত গার্মেন্ট কর্মীদের ভ্যাকসিন দিতে না পারলে নতুন শর্ত আরোপ ও নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে। ভ্যাকসিনেশন যথার্থভাবে এগিয়ে নিতে না পারলে ক্রেতা দেশগুলোর সাথে বিমান চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনাও অসম্ভব হতে পারে। এহেন বাস্তবতায় করোনা ভ্যাকসিনেশনের উপর দেশের রফতানি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

এ পর্যন্ত মাত্র এক কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশে এসেছে। দুই ডোজ হিসেবে অর্ধকোটি মানুষ টিকা পেয়েছে। শতকরা হিসেবে যা ২ ভাগের বেশি নয়। প্রায় দেড় বছর ধরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় না এনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না সরকার। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যম কর্মী, পুলিশসহ সম্মুখসারির করোনা যোদ্ধাদের বেশিরভাগ এখনো ভ্যাকসিন পায়নি। অন্যদিকে দেশের রিক্রুটিং এজেন্ট ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সাথে জড়িত সংস্থাগুলোর তরফ থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান নির্বিঘ্ন রাখতে সম্ভাব্য কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনেশন জোরদার করতে বলা হচ্ছে। তা নাহলে, বিদেশে গমন করার পর কর্মীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনসহ নানাবিধ জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। ইতোমধ্যে সউদী আরব এ নিয়ম জারি করেছে। আমদানিকৃত ফাইজারের টিকা থেকে ৫০ হাজার ডোজ বিদেশগামি কর্র্মীদের জন্য বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি জরুরী ভিত্তিতে জনসন এন্ড জনসনের ভ্যাকসিন আমদানি করে অভিবাসী কর্মীদের দেয়ার প্রস্তাব করেছেন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এসব আলোচনা, দাবি-দাওয়া ও আশঙ্কা থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, দেশ করোনা ভ্যাকসিনেশনে পিছিয়ে পড়লে সামনের মাসগুলোতে গার্মেন্ট রফতানি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতির মূলখাতগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সাথে দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে স্বল্পতম সময়ে ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ায় হার্ড ইমিউনিটি জোরদার করার মাধ্যমেই কেবল এর মোকাবেলা করা সম্ভব হতে পারে। জি-৭ দেশগুলো ইতোমধ্যে একশ’ কোটি ভ্যাকসিন বিশ্বব্যাপী সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্য সংস্থাগুলোও টিকা সরবরাহের কথা বলেছে। এসব খাত থেকে বাংলাদেশেও টিকা পাবে। তবে টিকা পাওয়ার আগেই সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে রাখা দরকার। টিকা পাওয়ার সাথে সাথেই কোথায়, কীভাবে টিকা প্রয়োগ শুরু করা হবে, এ ব্যাপারে এখন থেকেই প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করতে হবে। অর্থনীতি, সেবা এবং জরুরি খাতের সাথে সম্পৃক্তরা যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পায় তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিককে পর্যায়ক্রমে টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ভ্যাকসিন সহজলভ্য ও নিশ্চিত করতে যা কিছু করণীয় সরকারকে তা করতে হবে। করোনা ভ্যাকসিনে পিছিয়ে থাকা মানে সবদিক থেকে জাতির পিছিয়ে পড়া এবং অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন