মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আবু ত্বহার সন্ধান দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ১৭ জুন, ২০২১

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিত তরুণ ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান তাঁর গাড়ীচালক ও দুই সঙ্গীসহ গত ১০ জুন মধ্যরাতে নিখোঁজ হয়েছেন। ইতিমধ্যে ৬দিন অতিক্রান্ত হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। এটি নি:সন্দেহে চরম উদ্বেগের বিষয়। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রংপুর থেকে ঢাকা ফেরার পথে রাত আড়াইটায় স্ত্রীর সাথে সর্বশেষ কথা হয় আদনানের। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তার বা সঙ্গীদের। ধারণা করা যায়, গাবতলি বা আশপাশ থেকেই তিনি নিখোঁজ হয়েছেন। রহস্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, স্বামীর সন্ধ্যান চেয়ে আবু ত্বহার স্ত্রী থানায় জিডি বা মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রথমে তাঁর মামলা বা জিডি গ্রহণে পুলিশ গড়িমসি ও অস্বীকার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে আবু ত্বহা আদনানের মা রংপুরে ছেলের সন্ধ্যান চেয়ে একটি জিডি করতে সক্ষম হলেও গত ৬দিনেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা বা অগ্রগতির কোনো লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পুলিশের নিস্ক্রিয়তা বা অগ্রাহ্য করার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে আদনান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়েছে। গত এক যুগে বিরোধিদলের নেতাকর্মীসহ দেশের শত শত মানুষ নিখোঁজ বা গুম হয়েছেন। আবু ত্বহা আদনান এবং তার সঙ্গীরা সেই গুম তৎপরতারই শিকার বলে সন্দেহ ক্রমে জোরদার হচ্ছে।

গত সাতদিনে দেশে কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম হয়েছে। কুষ্টিয়ায় পুলিশের এএসআই সৌমেন কুমারের গুলিতে শিশুসহ তিনজন নিহত হওয়ার হৃদয়বিদারক ঘটনাটি গণমাধ্যমে যেন কোনো গুরুত্বই পায়নি। এই ঘটনার পরদিন চারদিন আগে চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমণির বোটক্লাবে নিগৃহিত হওয়ার ঘটনা অনেক বড় হয়ে উঠে আসে। অথচ পরীমণি যখন প্রথম পুলিশে অভিযোগ করতে চেয়েছিলেন, তখন পুলিশ তার অভিযোগ গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তিনদিন নিরব থাকার পর ১৩ তারিখে হঠাৎ তিনি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জড়িয়ে গণমাধ্যমে অভিযোগ-কান্নাকাটি করে সংবাদ শিরোনাম তৈরী করেন। তার এই ডামাডোলে কুষ্টিয়ায় সৌমেনের ত্রিপল মার্ডারের ঘটনাটি অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে গেছে। পরীমণির ঘটনাটিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মিডিয়ায় তোলপাড় শুরুর পরের দিন মধ্যরাতে নিখোঁজ হলেন ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান। প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারা নিগৃহিত হওয়ায় প্রথমে পুলিশ পরীমণির অভিযোগ আমলে না নিলেও কোনো অদৃশ্য কারণে হঠাৎই পরীমণির অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিতে ত্বরিৎ তৎপরতা দেখায় পুলিশ। এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা নিখোঁজ আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনানের পরিবারের অভিযোগ গ্রহণে পুলিশের টালবাহানা ও হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরেন। পরীমণির অভিযোগ অবশেষে পুলিশ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করলেও আবু ত্বহা গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে অগ্রাহ্য করা ও অধিকার লঙ্ঘনের মত একটি সত্য তুলে ধরার জন্য রুমিন ফারহানা ধন্যবাদার্হ।

একেকটি হত্যাকান্ড, গুম ও নাশকতার ঘটনা আমাদের সমাজ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে হতাশাজনক বার্তা দেয়। গত বছর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ৬০৪জন গুমের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৮৯জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, এবং ৫৭জন বিভিন্ন উপায়ে ফিরে এসেছেন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১১জন গুম হয়েছে। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির যে অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে করা হচ্ছে, তার অন্যতম সূচক হচ্ছে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানুষের গুম হয়ে যাওয়া এবং তাদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা বা অপরাগতা। দেশের এক শ্রেণীর গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে সময়ে সময়ে বিশেষ কিছু ব্যক্তি ও বিষয় নিয়ে অতি তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায়। হত্যা-গুম ও নাশকতার ঘটনাগুলোকে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে মানবাধিকারের মানদন্ডে নিরপেক্ষভাবে বিচার করে ভূমিকা পালনে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা আমাদের সমাজকে অনিরপদ করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আবু ত্বহার সন্ধ্যান দাবি করেছেন। কিন্তু দেশের কোনো মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এমনকি কোনো ইসলামি দল বা সংগঠনের পক্ষ থেকে আবু ত্বহার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্বেগ বা দাবি-দাওয়া দেখা যায়নি। এসব তথাকথিত ইসলামি রাজনৈতিক দল মানবাধিকার বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিরব থাকণেও অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো অদৃশ্য ইশারায় মাঝে মধ্যেই মাঠ গরম করতে দেখা যায়। এই করোনাকালে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বছর ধরে বন্ধ থাকায় কোটি কোটি কিশোর-তরুনের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তার হতাশা ভর করেছে। তাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝুঁকে নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হয়ে কিশোর অপরাধিতে পরিনত হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় আবু ত্বহার মত তরুণ ইসলামি বক্তারা যুব সমাজকে ইসলামি জ্ঞান ও উন্নত ধ্যান-ধারণায় উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হচ্ছে। আবু ত্বহার মত সম্ভাবনাময় ইসলামি বক্তা নিখোঁজ হওয়া এই সমাজের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। আবু ত্বহার সন্ধানের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই ভাল সংবাদের আশা করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, পুলিশ আবারো একটি সফলতার নজির স্থাপন করতে সক্ষম হবে। পেশাদারিত্ব , নিরপেক্ষতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সত্য উৎঘাটন ও অপরাধিদের ধরতে আইনের আনা হবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Dadhack ১৭ জুন, ২০২১, ১২:২৪ পিএম says : 0
পাকিস্তান থেকে দেশ স্বাধীন করার মূল উদ্দেশ্য ছিল যে আমাদের কে কেউ গুম খুন আমাদের সম্পদ লুন্ঠন এগুলো করতে পারবে না কিন্তু আজ স্বাধীনতার 50 বছর হল আমাদের দেশের সরকারি আমাদের পরে জগন্যতম বর্বরতার পরিচয় দিচ্ছে, আমাদেরকে পাখির মতো গুলি করে মারছে না হয় গুম করে দিচ্ছে না হয় জঙ্গী বলে সারা জীবনের মতো জেলের মধ্যে রেখে দিচ্ছে . বঙ্গবীর বলেছেন যে কেন আমরা স্বাধীন করলাম???? আমাদের মত যারা বৃদ্ধ তারা বলতে পারবে স্বাধীনতার আগে বর্বর পাকিস্তানি সরকারের সময় এই ভাবে আমাদেরকে গুম খুন হত্যা করা হতো না চাঁদাবাজি করা হতো না ধর্ষণ করা হতো না শুধু 71 সালে এগুলো করেছে পাকিস্তানের আর্মিরা. মরহুম মুজিবুর রহমান সাহেব যখন বিপুল ভোটে জয় লাভ করলেন তখন বর্বর পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করেন নাই সেই জন্যই আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম। বর্বর পাকিস্তানিরা ইচ্ছা করলে বর্তমান সরকারের মতো দিনের ভোট রাতে দিয়ে জয়লাভ করতে পারতো কিন্তু সেটা করে নাই. আমরা এখন আওয়ামী লীগের কাছে পরাধীন ইন্ডিয়ার কাছে পরাধীন মায়ানমারের কাছে পরাধীন এভাবে দেশ চলতে পারে না
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন