শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঘোষণায় দায় শেষ

৭ দফায় নানা শর্তে বিধিনিষেধের মেয়াদ বৃদ্ধি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়ানো হয়েছে। গতকাল ১৬ জুন মধ্যরাত থেকে আগামী ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা ১৬ জুন মধ্যরাত থেকে ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। একই সঙ্গে ৬টি শর্ত দেয়া হয়েছে। গত তিন মাসে ৭ দফায় বিধিনিষেধের সময় বাড়ানো হলেও তা কার্যকরে তেমন পদক্ষেপ নেই। এ যেন ঘোষণা করেই দায়িত্ব পালন।

করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ ঠেকানোর এই কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হলেও বিধিনিষেধ কার্যকরে নেই কোনো কঠোরতা। সীমান্ত বন্ধ অতঃপর দফায় দফায় সে বন্ধের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হলেও মানুষের যাতায়াত কমেনি। সীমান্ত দিয়ে মানুষের যাতায়াত অব্যাহত থাকায় সীমান্ত জেলাগুলোতে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার পাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে যে ৬০ জন মারা গেছে তার ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহীতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ে ২০২০ সালে যখন লকডাউন ঘোষণা করা হলো, ওই সময় পুলিশ যা করণীয় সবই করেছে। দোকানপাট বন্ধে নির্দেশনা ও তদারকি, সড়কে অযথা ঘোরাফেরা বন্ধে নজরদারি, অনাহারির বাসায় খাবার পৌঁছে দেয়া, ওষুধ সরবরাহ, রোগী নেয়া, লাশ দাফনে সহায়তা, মাস্ক বিতরণসহ নানারকম কাজ করেছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিধিনিষেধ আরোপ, সীমান্ত জেলাগুলোতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেয়ে গণপরিবহন চালানোর নির্দেশনা দিলেও কোনোটিই মানেনি মানুষ। আবার বিধিনিষেধ মানতে নাগরিকদের বাধ্য করতে পুলিশকে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে যাই বলুক শেষ পর্যন্ত পুলিশকেই ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে হবে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে গত ৪ এপ্রিল বিধিনিষেধ ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১১ দফা নির্দেশনা জারি করে। তারও আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণায় ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়।
করোনার কারণে ১৫ মাস ধরে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এখন লঞ্চ, গণপরিবহন, ট্রেন, অভ্যন্তরীণ বিমান, মার্কেট, দোকান চলছে। সীমান্ত বন্ধ অথচ প্রতিটি সীমান্ত দিয়ে মানুষ প্রবেশ করছে। যার কারণে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার বিস্তার ঘটেছে সীমান্ত জেলাগুলোতে।
গতকাল বিধিনিষেধ আরো এক মাস বাড়িয়ে যে ৬ শর্ত দেয়া হয় সেগুলো হলোÑ ১. কোভিড-১৯ এর উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন জেলার জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) সংশ্লিষ্ট কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিজ নিজ এলাকায় সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধি মোতাবেক লকডাউনসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। ২. সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা থাকবে। ৩. সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। ৪. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান/ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। ৫. আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানগুলো সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (টেকওয়ে/অনলাইন) করতে পারবে এবং আসন সংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা দিতে পারবে। ৬. সব ধরনের গণপরিবহন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় চলতি বছর গত ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে বিধিনিষেধ শুরু হয়। সেটা ছিল অনেকটাই অকার্যকর। পরে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৮ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। পরে ৭ দফায় নানা শর্ত দিয়ে চলাচলে বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ৬ জুন বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো ১০ দিন বাড়িয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেই মেয়াদ শেষ হয় গতকাল বুধবার মধ্যরাতে। এবার বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়ল।
এর আগে বন্ধ থাকলেও সর্বশেষ গত ২৩ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিধিনিষেধ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক মানুষকে সেবা দেয়ার অনুমতি পায়। জেলার মধ্যে গণপরিবহন আগে থেকেই চালু ছিল।

এছাড়া লকডাউনে আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা ছিল। খোলা ছিল শিল্প-কারখানা। এছাড়া জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো যথারীতি সীমিত পরিসরে চলছিল। সীমিত পরিসরে হচ্ছিল ব্যাংকের লেনদেন।
কঠোর বিধিনিষেধ চলছে কার্যত ‘কাজীর গরু কেতাবে রয়েছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতোই। মানুষ নিজেদের মতো করে রাস্তায় নামছেন, হাটবাজার করছেন। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা দূরের কথা স্বাস্থ্যবিধি মানতে আগ্রহী হননি। রাজধানীর অনেক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পুলিশ রাস্তার দোকানপাট তুলে দিচ্ছেন; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে গেলে কিছুক্ষণ পর আবার দোকান বসানো হচ্ছে। গত দুই দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথের দোকানদারদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন ‘টম আর জেরি’র খেলা দেখা গেছে।

জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, বাংলাদেশে বিধিনিষেধ বলতে প্রথম থেকে যে চিত্র আমরা দেখেছি এবং সরকারের যে ঘোষণা কোনোটাই বৈজ্ঞানিক নয়। ঘোষিত চলমান বিধিনিষেধ যেহেতু বৈজ্ঞানিক নয়, তাই জনসাধারণ এটাকে সেভাবে নেয়নি। এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই যেভাবে এটা ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করা ছাড়া বিধিনিষেধ কর্মসূচি সফল হবে না। তাছাড়া এটা বাস্তবায়নে নাগরিকদের বাধ্য করার প্রচেষ্টাও নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন