ইসলাম পরিপূর্ণ আল্লাহপাকের মনোনীত। ধর্ম বা জীবনব্যবস্থা। এই জীবনব্যবস্থা চারটি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথাÑ (ক) আল কুরআন (খ) আল হাদিস, (গ) উম্মতে মোহাম্মাদিয়ার ঐকমত্য বা ‘ইজমা’ এবং (ঘ) শরয়ী কিয়াস। এই মূলনীতির আলোকেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতভুক্ত মুমিন মুসলমানগণ তাদের ধর্মীয় জীবনব্যবস্থার যাবতীয় কাজকর্ম নির্বাহ করে থাকেন। তবে কিছু সংখ্যক মুসলমান নামধারী হাদিসকে অস্বীকার করে এবং পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি কটূক্তি করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। তাদের ফিতনা ক্রমশ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে চলেছে, যা দ্বীন ও ঈমানের মূলে কুঠারাঘাতের শামিল। তাই এদের সম্পর্কে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ভুক্ত মুমিন মুসলমানদের সচেতন থাকা নেহায়েত জরুরি। এই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বর্তমান গবেষণাপত্রটি বিন্যাস করা হয়েছে। মহান আল্লাহপাক আমাদের প্রকৃত সত্যকে জানার এবং মানার তাওফিক এনায়েত করুন; আমীন!
সাইয়্যেদুল মুরসালিম, রাহমাতুল্লিল আলামীন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উক্তি, কর্ম ও অনুমোদনসমূহকে ‘হাদিস’ বলে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উক্তিকে কওলী (উক্তিমূলক) হাদিস, তার কর্মকে ফেলা-(কর্মমূলক) হাদিস এবং তার সামনে শরীয়াতের অনুসারী কোওনা মুমিন মুসলমান কিছু করেছে অথবা তার অনুপস্থিতিতে কোনো কাজ করেছে যে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) অবগত হয়েছেন, কিন্তু এর বিরূপ মন্তব্য না করে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে নীরবতা অবলম্বন করেছেন, তাকে তাকরিরী মৌন সম্মতিসূচক/অনুমোদনসূচক) হাদিস বলে। (মৌন সম্মতিসূচক/অনুমোদনসূচক) হাদিস বলে। (মিযানুল ইতিদাল : ১/৯)।
আর যে হাদিসের বর্ণনাকারীর সংখ্যা সকল যুগে এত অধিক যে, তাদের মিথ্যা কোনো উক্তির ওপর একমত হওয়া অথবা তাদের সকল থেকে মিথ্যা প্রকাশ পাওয়া সম্ভব নয়। একে হাদিসে মুতাত্তয়াতির যা খবরে মুতাওয়াতির বলা হয়। (মিযানুল ইতিদাল : ১/৯)।
আর যে হাদিসের বর্ণনাকারীর সংখ্যা সকল স্তরে মুতাওয়াতিরের সমান নয়, কিন্তু কোনো স্তরে তিন হতে কম নয়, তাকে খবরে মাশহুর বা মাশহুর হাদিস বলে। (কাওছারুন্ নববী (সা.) :১/৫)।
আর সে হাদিসের বর্ণনাকারীর সংখ্যা যে কোনো স্তরে তিন হতে কম হয়, তাকে খবরে ওয়াহিদ বলে। (কাশফুল আসরার : ২/৬৭৮)। তবে জেনে রাখা দরকার যে, খবরে মুতাওয়াতির দ্বারা ও খবরে মাশহুর দ্বারা সুনিশ্চিত জ্ঞান লাভ হয়। কুরআন মাজীদের অস্বীকারকারী যেমন কাফির, তেমনি মুতাওয়াতির হাদিস ও মশহুর হাদিস অস্বীকারকারী ও কাফির। (ক) কাশফুল আসরার : ২/৬৮১, (খ) (মিযানুল ইতিদাল : ১/৯)।
আর খবরে ওয়াহীদের দ্বারা ধারণামূলক জ্ঞান (ইলমে যন্নি) অর্জিত হয়। (মিযানুল ইতিদাল : ১/৯)। প্রকৃতপক্ষে খবরে ওয়াহিদ শরীয়তের হুজ্জত বা প্রমাণসমূহ হতে একটি হুজ্জাত বা প্রমাণ। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সম্বোধন করে নির্দেশ দিয়েছেন : ‘হে রাসূল? আপনার কাছে আপনার প্রতিপালকের নিকট হতে যে বাণী অবতীর্ণ করা হয়েছে তা পৌঁছে দিন’। (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ৬৭)।
একথা সর্বজনবিদিত যে, হযরত মোহাম্মাদ (সা.) সমগ্র মানুষের প্রতি রাসূল হিসেবে আগমন করেছিলেন। আর তাঁর ওপর সকল মানুষের নিকট তাবলীগ বা পৌঁছে দেয়া ছিল অত্যন্ত সুকঠিন। কেননা, সকল মানুষের নিকট সরাসরি তাবলীগ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একার জন্য ছিল অসম্ভব। অনুরূপভাবে মুতাওয়াতির পদ্ধতিতে সকলের কাছে আল্লাহর বাণী বা শরীয়াতের বিধান পেঁৗঁছানোও সম্ভব ছিল না। তাই খবরে ওয়াহিদ ও শরীয়তের প্রমাণ। (ফাতহুল বারী : ১৩/২৯২)।
কুরআনুল কারীমে (সূরা বাকারাহ-এর ৪৬ নং আয়াতে এবং সূরা সাদ-এর ২৪ নং আয়াতে) যে ‘যন্ন’ বা ধারণার অনুসরণ হতে বারণ করা হয়েছে তা এমন ধারণামূলক জ্ঞান যার পেছনে কোনো দলিল, প্রমাণ নেই। আর খবরে ওয়াহিদ এমন ‘যন্ন’ যা ধারণামূলক জ্ঞান দান করে যার ইতিবাচক দিকটি অগ্রাধিকার লাভ করে থাকে। যাকে ‘যন্নে গালিব’ বলা হয়। সুতরাং আল কুরআনের উল্লিখিত আয়াত দ্বারা খবরে ওয়াহিদ হুজ্জত নয় বলে দাবি করা সম্পূর্ণই ভুল। আর একথাও স্মর্তব্য যে, খবরে ওয়াহিদের অস্বীকারকারী কাফির নয় বটে, তবে অবশ্যই পথভ্রষ্ট, ফাসিক ও ফাজির বলে গণ্য। (শরহে আকাইদে সিফারা নিয়্যাহ : ১/১৯)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন