বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফেঁসে যেতে পারেন গৃহকর্তা

সিলেটে ট্রিপল মার্ডার

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২১, ১২:০৭ এএম

শ্যালিকার বিয়ে নিয়ে ঝগড়া হয় স্বামী-স্ত্রীর
হত্যা ঘটনায় থানায় মামলা : আসামি অজ্ঞাতনামা
হিফজুরে লুকিয়ে রয়েছে হত্যারহস্য


সিলেটে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাটের নিভৃত এক পল্লীতে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। এ ঘটনায় দায়ের হয়েছে একটি হত্যা মামলা। কিন্তু এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তবে রহস্য উদ্ঘাটনে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। হত্যাকান্ড ঘটনার নেপথ্যে থাকতে পারে পারিবারিক কলহ।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবারে গৃহকর্তা হিফজুরের ফোনকলসহ চিকিৎসাধীন অবস্থার আচরণ সেদিকে ধাবিত করছে। অসংলগ্ন কথাবার্তার মধ্যে ফুটে উঠছে হত্যাকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও। এমনকি হত্যাকান্ডকে মাছ কাটার সাথে তুলনা করে অনানুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। সে কারণে হত্যাকান্ডের রহস্য প্রকাশ এখন সময়ের ব্যাপার।

এদিকে, গোয়াইনঘাটেন ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়ার এক নিভৃত পল্লীতে এমন ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছেন জনমনে। হত্যা ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে গত বুধবার রাতে। মামলাটি দায়ের করেছেন হত্যাকান্ডের শিকার গৃহবধূ আলোয়ার পিতা আইয়ুব আলী। এখনো হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন পরিবারের অভিভাবক দিনমজুর হিফজুর রহমান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিফজুরের শরীরের আঘাত নিহতদের আঘাতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিফুজর একটি কেবিনে রয়েছেন। কৌশলে কথাবার্তা চলছে সংশ্লিষ্টদের। হতাকান্ডের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে অসংলগ্ন কথা বলেছেন তিনি। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ঘটনার নায়ক গৃহকর্তা হিফুজর নিজেই। তিনি হাসপাতালে কথাবার্তার ফাঁকে বলেছেন, মাছ কাঁটা হয়েছে। স্ত্রী সন্তান হারানো বেদনার কোন ছাপ তার দেহ-মনে নেই। যে কারণে সময়ের ব্যবধানে এ হত্যাকান্ডের রহস্য হিফজুরের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে, আজ শুক্রবার তার শ্যালিকার বিয়ের কথা। সেই বিয়েতে যাওয়া না যাওয়া নিয়েও তার ঝগড়া হয় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আলেয়া বেগমের সঙ্গে। সবিমিলিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে ঘটতে পারে এ নির্মম হত্যাকান্ড, এমন ধারণা পুলিশের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিফজুর আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হত্যাকান্ডের শিকার হিফজুর রহমানের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা আলেয়া বেগম (২৭), পুত্র মিজান আহমদ (১১) ও কন্যা তানিসার (৫) সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তেরর জন্য লাশ তিনটি একই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
হত্যা ঘটনার নেপথ্য নিয়ে স্থানীয় বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা ও হিফজুরের প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন বলেন, এ পরিবারে কলহ ছিল। গত দুই মাসে দু’বার সালিশ করেছেন তিনি নিজে। শুক্রবার হিফজুরের শ্যালিকার বিয়ে হওয়ার কথা। সেই বিয়েতে যাওয়া না যাওয়া নিয়েও তাদের মধ্যে গত সোমবার ঝগড়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনা খবর পেয়ে প্রতিবেশীদের অনেকে উপস্থিত হন, এক পর্যায়ে মোবাইলে ছবি তুলতে চেষ্টা করলে ক্যামেরার ফ্লাশে চোখ খুলে, চোখ বন্ধ করতে দেখেন হিফজুরকে। তখন তার কাছে গিয়ে দেখেন শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক তার। তবে তার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দ্রæত তাকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল আহাদ জানান, বুধবার ভোরে আত্মীয় ফয়েজ মিয়াকে মোবাইলে কল দিয়ে হিফজুর বলেন, আমি অসুস্থ হাসপাতালে নিতে হবে, টাকা-পয়সা নিয়ে দ্রæত চলে আসেন। এ তথ্য সঠিক হলে, ঘটনার মোড় হিফজুরের দিকেই নিতে পারে এমন অভিমত অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে দুটি বিষয় নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বিষয় দুটি জমি ও পারিবারিক কলহ।

তবে ঘটনাস্থলের আলামত, হিফজুরের শরীরের আঘাত এবং ফোনকলের বিষয়গুলো দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে পারিবারিক কলহের কারণেই হিফজুর স্ত্রী-সন্তানদের বঁটি দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করেছেন। এর পর নিজের শরীরে কিছু আঘাত করে মৃতের মতো পড়ে থাকার ভান ধরেন তিনি। এছাড়া স্থানীয় বিরোধের বিষয়েও বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখনও কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তবে হিফজুরের অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন